উত্তেজনা পাকিস্তান সীমান্তে, ভারত কেন যুদ্ধবিমান ওড়াচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তে?

Indian fighting Jet

বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করেছে ভারতের পশ্চিম সীমান্তের কাশ্মীরে; তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে যুদ্ধ যুদ্ধ সাজ চলছে ওই সীমান্তেই। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় দুই দেশের সৈন্যদের গোলাগুলিও হয়েছে শুক্রবার ভোরে।

এদিন সকালেই ঠিক উল্টো দিকে বাংলাদেশ সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আকাশে দুটি রাফাল বিমান উড়তে দেখা গেল। ফ্রান্স থেকে কেনা এই যুদ্ধবিমানর ভারতের বিমান বাহিনীর সক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়েছে।

কিন্তু পশ্চিম সীমান্ত যেখানে রণাঙ্গন হতে যাচ্ছে, সেখানে যুদ্ধবিমান পূর্ব সীমান্তে ওড়াল কেন ভারত? সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলকেই সামনে আনল ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস। পত্রিকাটি লিখেছে, চীন ও বাংলাদেশকে সতর্ক করতেই এই দুটি যুদ্ধবিমান ওড়ানো হয়েছে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ভারত-পাকিস্তান যে কয়বার যুদ্ধে জড়িয়েছে, তার মধ্যে ১৯৭১ সাল ছাড়া আর কখনও পূর্ব সীমান্তে সংঘাত হয়নি।

গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট পহেলগামে একদল বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে হত্যা করে ২৬ জনকে। এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত আছে বলে অভিযোগ ভারতের; যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করছে।

ওই ঘটনার পর দুই পক্ষের পাল্টিপাল্টি পদক্ষেপে যুদ্ধ বাঁধার উপক্রম হয়েছে, যা নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ প্রকাশের পর শুক্রবার ভোরেই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। তাতে অবশ্য ভারী অস্ত্রের ব্যবহার হয়নি, কারও হতাহতের খবরও পাওয়া যায়নি।

তারমধ্যেই শুক্রবার সকালে পরপর দুটি রাফাল যুদ্ধবিমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের আকাশ দিয়ে উড়ে যায় বলে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, “উত্তরবঙ্গের আকাশপথে এভাবেই প্রাথমিক মহড়া শুরু করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। বাগডোগরা, হাসিমারার বায়ুসেনা ছাউনিতে তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

“উত্তরবঙ্গের আকাশে রাফাল যুদ্ধবিমান দেখা যেতেই অনেকে আলোচনা শুরু করেছেন। এবার পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে বলে আশা করছেন বহু মানুষ।”

এই যুদ্ধবিমানের উড্ডয়ন রুটিন মহড়া বলে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হলেও গুঞ্জন থামছে না। প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন উড়ল না, এখনই যুদ্ধবিমানগুলি উড়ল কেন?‌

সেনা সূত্রের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, “ভারত যদি পাকিস্তানকে পাল্টা জবাব দেয়, তাহলে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে চীন। এছাড়া এখন আবার বাংলাদেশও ভারতের বিরোধী।”

বাংলাদেশে গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর কথা বার বার তুলছে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

এরমধ্যে গত মার্চে চীন সফরের সময় ইউনূসের এক মন্তব্যকে হুমকি হিসাবে নেয় ভারত সরকার। বেইজিংয়ে ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য বা ‘সেভেন সিস্টার্স’ স্থলবেষ্টিত বলার পর ভারতের রাজনীতিকরা ধরে নেয়, বাংলাদেশের সরকার প্রধান ভারতের স্পর্শকাতর ‘চিকেন নেক’ নিয়েই ইঙ্গিত করেছেন।

বাংলাদেশের দিনাজপুর সীমান্ত ও নেপালের মাঝে ভারতের ২৬ মাইল দীর্ঘ যে এলাকা রয়েছে, তার নিয়ন্ত্রণ নয়া দিল্লি হারালে পশ্চিমবঙ্গের একাংশসহ আরও আটটি রাজ্য ভারতের মুল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

সেই ‘চিকেন নেক’ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে সোশাল মিডিয়ায় হুমকি-ধমকি ভারতের সংবাদমাধ্যমও ভালো চোখে দেখছে না। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বোলচাল বন্ধ করতে মুহাম্মদ ইউনূসকে হুঁশিয়ার করেন।

এখন যখন বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক গাঢ় হচ্ছে, তখন ভারত এই উত্তেজনার সময়ে সব দিক ভেবেই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বিস্তীর্ণ চীন সীমান্ত ও বাংলাদেশ সীমান্ত দুটোই খুব স্পর্শকাতর। এই সুযোগে পাকিস্তানের সেনারা বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতের উপর আঘাত করতে পারে। তাই সেখানে ভারত রাফাল ও সুখোই–৩০ এমকেআই স্কোয়াড্রন দিয়ে মহড়া সেরে রেখেছে।”

আরও পড়ুন