তামিম ইকবালের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে দীর্ঘ নাটকের নতুন অঙ্কে ‘সাসপেন্স নিয়ে আরেকটু অপেক্ষা’ করতে বললেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন।
জানালেন, দুই দফা আলোচনার পর ‘ভেবে দেখার’ জন্য সময় চেয়েছেন তামিম।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে থাকার জন্য তামিমকে অনুরোধ করেছেন নির্বাচক কমিটি ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
হাইব্রিড মডেলে পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য দল ঘোষণার শেষ সময় আগামী রোববার। পরের এক মাসে কোনো কারণ ঘোষণা ছাড়াই দলে পরিবর্তন আনা যাবে।
বিপিএলে খেলতে এখন ফরচুন বরিশাল দলের সঙ্গে সিলেট আছেন তামিম। তার সঙ্গে কথার জন্য বুধবার সকালে সেখানে যান প্রধান নির্বাচক। অন্য দুই নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক ও হান্নান সরকার সিলেটে ছিলেন আগে থেকেই।
সকালে ১১টায় শুরু হয় দীর্ঘ বৈঠক। সেখানে জাতীয় দলে না ফেরার সিদ্ধান্ত জানান তামিম। পরে দুপুরে প্রধান নির্বাচকের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনার পর তিনি সময় নেন আরেকটু ভাবার জন্য।
বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডের অধিনায়ক গাজী আশরাফ সিলেটে আসার আগেই মঙ্গলবার রাতে তামিমের সঙ্গে কথা বলেন শান্ত।
বুধবার নির্বাচকদের প্রথম দফায় বৈঠকের পর তামিমের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় দলের কয়েকজন ক্রিকেটার।
সিলেটে বিকালে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে আশরাফ জানান, এখনও কোনো চূড়ান্ত নেওয়া হয়নি।
“বেশ কিছু ব্যাপারে আমরা খোলামেলা কথা বলেছি। ক্রিকেট নিয়ে কথা হয়েছে অবশ্যই। বর্তমান পরিস্থিতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট, জাতীয় দল, বিপিএল, সবকিছু নিয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।”
“তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট (ক্যারিয়ার) নিয়ে আপনাদের একটা আগ্রহ থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারটা নিয়ে এর আগেই হয়তো তামিমের সঙ্গে আমাদের আরেকটু আলোচনা হতে পারত। যাই হোক, সামনে আমাদের একটা বড় ইভেন্ট আছে। আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো আলোচনাতেই সঙ্গে সঙ্গে ওই মুহূর্তে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। কারণ এটা অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত।”
দেশর হয়ে তামিম সবশেষ খেলেন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। সবশেষ টেস্ট খেলেছেন তিনি ২০২৩ সালের এপ্রিলে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তিনি সবশেষ মাঠে নেমেছেন ২০২০ সালের মার্চে। এই সংস্করণ থেকে অবসরের কথা জানান তিনি ২০২২ সালের জুলাইয়ে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি সরে দাঁড়ান বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে। তবে তার জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা থামেনি কখনও। ওপেনিংয়ে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করার মতো নির্ভরযোগ্য কাউকে না পাওয়ায় সেই আলোচনা উচ্চকিত হয়েছে বিভিন্ন সময়। প্রধান নির্বাচকের ধারণা, ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তামিম।
“আমাদের যেমন আমাদের ওপর বোর্ড আছে। বোর্ডের তরফ থেকে আমরা এসেছি। এখানে কোনো অসুবিধা নাই। পাশাপাশি খেয়াল করতে হবে, একটা খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় এ সমস্ত ইস্যুতে ফেরত আসার ব্যাপারে তার ঘনিষ্ঠজন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব অনেক সময়, কিংবা তার প্রিয় কোচ অথবা শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার একটা ব্যাপার থাকে। সেক্ষেত্রে একটু সময় নেওয়ার তো ব্যাপার এসেই যায়। আমাদের যেহেতু ১২ তারিখে দল ঘোষণা করতে হবে, তার আগেই আমাদেরকে দলটা দিতে হবে বোর্ডের কাছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সময় আছে, তাকে সময় নিতে দেই, তাড়াহুড়োর কিছু নেই। তিনি একটা টুর্নামেন্ট খেলছেন, আমাদের প্রাথমিক আলোচনা আমরা সেরে নিয়েছি।”
“আমাদের আলোচনার বিষয় আমাদের মধ্যেই থাক। যেহেতু আমি বললাম ব্যাপারটা আলোচনা করেছি, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। সে সিদ্ধান্তের জন্য তামিম ইকবালকে একটু সময় দিতে হবে।”
দীর্ঘ দিন বাইরে থাকার পর গত ডিসেম্বরে জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টি দিয়ে মাঠে ফেরেন তামিম। চার ম্যাচে ৬৩.৩৩ গড় ও দেড়শর বেশি স্ট্রাইক রেটে ১৯০ রান করেন তিনি। বিপিএলে এখনও পর্যন্ত খেলেছেন চারটি ম্যাচ। এক ম্যাচে ৪৮ বলে অপরাজিত ৮৬ করে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
ব্যাটিং নিয়ে খুব একটা সংশয় নেই তবে তার ফিটনেস এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযোগী কি না, সেই প্রশ্ন আছে। কিছু দিন আগে ফারুক বলেছিলেন, মাঠে কোনোভাবে আড়াল করে রেখে খেলানো যায় কী না ভাবছেন তারা। তবে আশরাফ মনে করেন, ফিটনেসে ঠিক জায়গাতেই আছেন তামিম।
“তামিম ইকবালের মতো একজন খেলোয়াড় যে এনসিএল খেলছে… আপনাদের মতো যারা প্রশ্নটা করেন, তাদের জন্যই বলছি, বিপিএল খেলছে… তার যোগ্যতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। আমরা তার ফেরাটার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে ছিলাম যে, তিনি ফিরতে চান কি না। যে কোনো সময় সে মোস্ট ওয়েলকাম আমাদের দিক থেকে।”
“কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত জানাবেন তামিম? একটু অপেক্ষা করুন, সাসপেন্স থাকুক।”