যুক্তরাজ্যের সাগরতলে এ কোন গোপন যুদ্ধ

Proteus

বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় ‘তথ্য’ নির্ধারণ করে অনেক কিছুর ভবিষ্যত। শান্তি থেকে যুদ্ধ, সবকিছুর মূলে আছে সঠিক তথ্য। যুদ্ধে কোন পক্ষ জয়ী হবে, তা নির্ধারিত হয় সেই পক্ষের কাছে থাকা পর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। আর এসব তথ্যের উৎস কখনো প্রকাশ্য, কখনও গোপন।

ব্রিটিশ মিডিয়া দ্য সানডে টাইমস সম্প্রতি ব্রিটেনের চারপাশের সাগরতলে চলমান এক গোপন যুদ্ধ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক সাবমেরিনের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য সাগরের বিভিন্ন অংশে রাশিয়ার সেন্সর বসানো ও সাগরতলের যুদ্ধের বাস্তবতা ফুটে ওঠে প্রতিবেদনে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী ওই সেন্সরগুলোর কিছু শনাক্ত করে। তবে এই তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। কয়েকটি সেন্সর সমুদ্রতটে ভেসে আসার পর পাওয়া যায়। বাকিগুলো রয়্যাল নেভি শনাক্ত করেছে বলে জানা গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, মস্কো এসব সেন্সরের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের চারটি ভ্যানগার্ড সাবমেরিন সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। এই সাবমেরিনগুলো পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে এবং সব সময় একটি সাবমেরিন সমুদ্রে টহলরত অবস্থায় থাকে। এই প্রক্রিয়াটি “কনটিনিউয়াস এট-সি ডিটারেন্ট” নামে পরিচিত।

দ্য সানডে টাইমস সেন্সরগুলোর অবস্থান সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিন মাস ধরে চালানো এক অনুসন্ধানে পত্রিকাটির সাংবাদিকেরা এক ডজনেরও বেশি সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে। 

অনুসন্ধানে প্রকাশ পায়, রাশিয়া তাদের পানির নিচের যুদ্ধক্ষমতা ব্যবহার করে ব্রিটেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর মানচিত্র তৈরি, হ্যাক ও সম্ভাব্যভাবে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছে।

এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে, দ্য সানডে টাইমস রয়্যাল নেভির গভীর সমুদ্র নজরদারি জাহাজ “আরএফএ প্রোটিয়াস”-এ নজিরবিহীন প্রবেশাধিকার পায়। সেখানে তারা প্রত্যক্ষ করে কীভাবে এই জাহাজ যুক্তরাজ্যের জলসীমায় সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা সাগরের নিচে প্রযুক্তিগত আধিপত্য অর্জনের প্রতিযোগিতাকে শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে হওয়া মহাকাশ প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে, এটি এখন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্য রাশিয়ার এই হুমকি সম্পর্কে সচেতন ও ব্যাপারটি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, যুক্তরাজ্য কি এখন রাশিয়ার এই অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে?

আরএফএ প্রোটিয়াস।

প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর

২০২৫ সালের ২১ মার্চ সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে, একটি কালো রঙের ফোলানো স্পিডবোট ক্যাম্পবেলটাউন লকের জলের ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে রয়্যাল নেভির অন্যতম গোপনীয় একটি জাহাজের দিকে। এই বিশেষ জাহাজের নাম আরএফএ প্রোটিয়াস। গ্রিক পুরাণের সমুদ্রদেবতার নামে নামকরণ করা হয়েছে জাহাজটির।

দ্য সানডে টাইমস পত্রিকার একজন সাংবাদিক এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে এই জাহাজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে জাহাজের ক্রুরা পানির নিচে চলাচলকারী আধুনিক যান নিয়ে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা চালাচ্ছেন। স্কটল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহরের উপকূলে নোঙর করা এই বিশাল জাহাজটি দূর থেকে দেখা যায়। এর বড় হেলিপ্যাড ও গভীর সমুদ্রের জন্য ব্যবহৃত ক্রেন এক মাইল দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়।

জাহাজটি ২০২৩ সালে চালু হওয়ার পর এই প্রথম কোনো সাংবাদিককে এর কার্যক্রম সরাসরি দেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জাহাজের ডেকে হেলমেট পরা কর্মীরা রিমোট কন্ট্রোলে চালিত যান প্রস্তুত করছেন। সেগুলো পরে “মুন পুল” নামে পরিচিত একটি বিশাল ছিদ্র দিয়ে সমুদ্রতলে নামানো হবে। এই মুন পুলের আকার প্রায় আটটি স্নুকার টেবিলের সমান। এছাড়াও আরও সংবেদনশীল কিছু সরঞ্জাম নীল ধাতব কন্টেইনারে সংরক্ষিত রয়েছে।

জাহাজে আগে থেকেই রয়েছেন নৌবাহিনীর ডুবুরি ও মাইন-শিকারি ইউনিটের প্রায় দুই ডজন সদস্য। তারা সমুদ্রের তলদেশে শত্রুদের বিস্ফোরক খুঁজে বের করা, উদ্ধার ও ধ্বংস করার কাজে পারদর্শী। এই প্রথমবার তারা এই জাহাজে যোগ দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে জাহাজের কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবেন।

এই ব্যবস্থার মূল কারণ হলো—যুক্তরাজ্যের পানির নিচে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এখন এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এই হুমকি এসেছে তাদের পুরনো প্রতিপক্ষ রাশিয়া থেকে।

বিড়াল-ইঁদুর খেলা

১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনী ছাড়া অন্যান্য সামরিক শক্তিও অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু রয়্যাল নেভির অভ্যন্তরীণ সূত্র মতে, মস্কো কখনোই সমুদ্রের গভীরে টহলরত সাবমেরিনে বিনিয়োগ বন্ধ করেনি। বরং তারা এই খাতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর অর্থ ও প্রযুক্তি খরচ করে যাচ্ছে।

রাশিয়াই একমাত্র দেশ, যার একটি বিশেষ সাবমেরিন বহর রয়েছে। সেগুলো সমুদ্রতলের যুদ্ধ ও গুপ্তচরবৃত্তিতে ব্যবহৃত হয়। এসব সাবমেরিনের অনেকগুলোর সক্ষমতা ব্রিটেন ও ন্যাটো মিত্রদের সক্ষমতার চেয়েও বেশি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠানোর অনেক আগেই, রাশিয়া ন্যাটোর সঙ্গে আরও বড় ধরনের সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল। তারা তখন থেকেই পশ্চিমা গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগুলো যেমন—ইন্টারনেট সংযোগ, জ্বালানির পাইপলাইন ও সামরিক তারের উপর নজরদারি ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাচ্ছিল। এসব তৎপরতা পুতিনের তথাকথিত “গ্রেজোন” কৌশলের অংশ। এতে সরাসরি যুদ্ধ নয়, বরং আড়াল থেকে চালানো হামলা ও গুপ্তচরবৃত্তি মুখ্য ভূমিকা রাখে।

২০২২ সালে নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন বিস্ফোরণের ঘটনাকে এই গ্রেজোন যুদ্ধনীতির প্রথম বড় ঘটনা হিসেবে দেখা হয়। রয়্যাল নেভির সূত্রগুলো জানায়, এই হামলার পেছনে সামরিক নিখুঁত পরিকল্পনা ছিল। আর এটি স্পষ্টভাবে ক্রেমলিনের কর্মকৌশলকে নির্দেশ করে।

গত ১৫ মাসে বাল্টিক সাগরে অন্তত ১১টি ইন্টারনেট কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কেবল জাহাজের নোঙর টেনে নিয়ে যাওয়ার কারণে ছিঁড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য সন্দেহ করা হচ্ছে রাশিয়ার ছায়া নৌবহরকে। পুরনো তেলের ট্যাংকার নিয়ে গঠিত এই বহরকে পুতিন পশ্চিমা তেল নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ব্যবহার করেন।

একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “জাহাজকে ইচ্ছাকৃতভাবে কেবল টানতে হলে ইঞ্জিনের শক্তি সচল রাখতে হয়—অর্থাৎ এটি পরিকল্পিত।”

রুশ জাহাজ।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এস্তোনিয়া ও ফিনল্যান্ডের মধ্যে থাকা একটি কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে গঠিত জয়েন্ট এক্সপিডেশনারি ফোর্স এই হুমকির জবাবে নরডিক ওয়ারডেন নামের একটি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা সক্রিয় করে। এই ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ছায়া নৌবহরের অবস্থান শনাক্ত করা হয়।

কর্মরত একজন জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, “এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়—অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে একপ্রকার যুদ্ধ চলছে। এটি এক ধরনের ‘বিড়াল-ইঁদুর’ খেলা, যা শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে চলমান, এবং এখন আবারও তা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আমরা রাশিয়ার বিপুল মাত্রায় তৎপরতা দেখতে পাচ্ছি।”

রাশিয়ার পানির নিচের গবেষণা কার্যক্রম মূলত মেইন ডিরেক্টরেট ফর ডিপ-সী রিসার্চ (জিইউজিআই) পরিচালনা করে। এই সংস্থার সবচেয়ে পরিচিত জাহাজ হলো গুপ্তচর জাহাজ ইয়ান্তার। এটি গত বছর যুক্তরাজ্যের উপকূলে উপস্থিত হয়ে আলোচনায় আসে।

ইয়ান্তার অত্যাধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত। এতে আছে পানির নিচে চলাচলকারী মানবহীন যান (ইউইউভিএস) এবং দুটি ছোট সাবমেরিন। সেগুলো ৬,০০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত যেতে সক্ষম। এই সাবমেরিনগুলো ইয়ান্তারকে সমুদ্রের নিচে অবকাঠামো খুঁজে বের করতে ও মানচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করে। এছাড়া এর মধ্যে থাকা ম্যানিপুলেটর আর্মের মাধ্যমে কেবল কেটে ফেলা বা তথ্য সংগ্রহের জন্য সেগুলোতে সংযোগ স্থাপন করাও সম্ভব।

২০২৪ সালের নভেম্বরে, ইয়ান্তারকে আইরিশ সাগরে মাইক্রোসফট ও গুগলের ডেটা বহনকারী কেবলের কাছে অবস্থান করতে দেখা যায়। প্রোটিয়াসসহ কয়েকটি ব্রিটিশ জাহাজকে তখন সেখানে পাঠানো হয় ইয়ান্তারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য। একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ব্যঙ্গ করে বলেন, এই নজরদারির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য রাশিয়াকে বোঝাতে চেয়েছে যে “তারা যেন আমাদের উঠোনে এসে প্রস্রাব না করে।”

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যখন ইয়ান্তার আবার ইংলিশ চ্যানেলে ফিরে আসে, তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি নির্দেশ দেন যে এইচএমএস সমারসেট ও এইচএমএস টায়েন কাছাকাছি থেকে জাহাজটিকে অনুসরণ করবে। একই সময়ে, এইচএমএস আস্তুতে (পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন) গোপনে পানির নিচে থেকে ইয়ান্তারকে অনুসরণ করে ও পরে তার পাশে উঠে আসে।

ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে এই নতুন ও আক্রমণাত্মক মনোভাবকে স্বাগত জানানো হয়েছে। একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের অবশ্যই খেলার নিয়ম মেনে চলতে হবে। তবে আগে আমরা সৌজন্য বজায় রেখে খেলছিলাম। আর এখন আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী ভঙ্গিতে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি।”

তবে প্রকৃত সমস্যা ইয়ান্তার নয়। যুক্তরাজ্যকে ঘিরে থাকা সমুদ্র অঞ্চলগুলো মূলত ইউরোপীয় কন্টিনেন্টাল শেলফের (ভূমির নিচে বিস্তৃত মহাদেশীয় প্রান্ত) অংশ। এর মানে হলো, এই পানির গভীরতা সাধারণত ৩০০ মিটারের কম। নৌবাহিনীর কাছে এই এলাকাগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য একাধিক ব্যবস্থা রয়েছে এবং তারা আত্মবিশ্বাসী যে এই এলাকায় রুশ তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

কিন্তু যেখানে এই মহাদেশীয় প্রান্ত শেষ হয়, সেখান থেকেই সমুদ্রের তলদেশ কয়েক হাজার মিটার গভীরে নেমে যায়। এই গভীর অঞ্চল নজরদারির জন্য প্রোটিয়াসই নৌবাহিনীর একমাত্র কার্যকর সারফেস জাহাজ। এই গভীর পানির নিচেই জিইউজিআই’র সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র—ছয়টি পারমাণবিক শক্তিচালিত ছোট সাবমেরিন—লুকিয়ে থাকতে পারে।

এই মিনি-সাবমেরিনগুলো সমুদ্রের তলদেশে অবস্থান করতে পারে এবং এদের ম্যানিপুলেটর আর্ম দিয়ে কেবল কাটা, বিস্ফোরক বসানো বা ফাইবার অপটিক কেবলে নজরদারি সরঞ্জাম বসানোর মতো কাজ করা যায়। এগুলোকে সহায়তা করে আরও দুটি বড় “মাদার সাবমেরিন”। এর মাধ্যমে এই ক্ষুদ্র সাবমেরিনগুলোকে গোপনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পাঠানো সম্ভব।

রাশিয়ার অন্যান্য গোপন সক্ষমতাও রয়েছে। তিনজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছেন, ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরুর আগে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গিয়েছিল যে, কিছু রুশ ধনকুবেরের মালিকানাধীন সুপারইয়ট ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যের আশপাশের পানিতে গোপন অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।

এই ধরনের বেশ কিছু জাহাজে মুন পুল রয়েছে। গভীর সমুদ্রের অনুসন্ধান বা ডাইভিং সরঞ্জাম গোপনে নামানো বা তোলার জন্য এগুলো ব্যবহার করা যায়।

ব্রিটিশ একজন সাবেক মন্ত্রী ২০১৮ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন, তখন এইচএমএস আলবিয়ন (উভচর জাহাজ) সাইপ্রাসের লিমাসলে নোঙর করেছিল। সেখানে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে একটি বিশাল সুপারইয়ট পাশে ভিড়লে, সন্দেহ জাগে যে এটি গোপনে আলবিয়নের উপর নজরদারি করছে। ফলে নৌবাহিনীর জাহাজটি দ্রুতই সেখান থেকে সরে যায়।

সাগরে মুখোমুখি রুশ জাহাজ ইয়ান্তার ও ব্রিটিশ জাহাজ প্রোটিয়াস।

সাগরতলের যুদ্ধ

নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে হামলা যুক্তরাজ্যের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় সমুদ্রের উপর স্থাপিত উইন্ড ফার্ম বা বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এই টারবাইনগুলোতে তৈরি হওয়া বিদ্যুৎ সমুদ্রের নিচ দিয়ে টানা কেবলের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডে পৌঁছে দেওয়া হয়। তেল ও গ্যাস পাইপলাইনও ব্রিটেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষ করে নরওয়ে থেকে যে গ্যাস আসে তা নির্বিবাদে সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই পাইপলাইন অপরিহার্য।

রাশিয়া পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরক বসালে—যেমন বিশেষভাবে নকশাকৃত বিস্ফোরক বা মাইন—এসব পাইপলাইন সহজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, “আপনি যদি এই সংযোগগুলো কেটে দেন, তাহলে সেই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে—আর যদি সেটা হয় শীতকালে, যখন ব্যবহার সর্বোচ্চ, তখন ফলাফল হতে পারে মারাত্মক।” অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, “যদি একসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালানো হয়, তাহলে জাতীয় গ্রিড পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে পড়তে পারে।”

যুক্তরাজ্যকে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করা ৬০টি ইন্টারনেট কেবল রয়েছে। এসব কেবল সাধারণ প্লাস্টিক পলিথিনের আবরণে মোড়ানো এবং পুরু কয়েক ইঞ্চির বেশি নয়। ফলে এগুলো খুব সহজেই কেটে ফেলা যায়। এর অধিকাংশ কেবলের অবস্থান তথ্যও জনসমক্ষে প্রকাশিত।

তবে নৌবাহিনীর সূত্র বলছে, যেসব বেসরকারি কোম্পানি এই কেবল পরিচালনা করে, তারা এত বেশি সংখ্যায় কেবল বসিয়েছে যে, বড় আকারের আক্রমণ ছাড়া অন্য সব ক্ষতির পরেও দ্রুত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। কারণ, এই ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত “রিডানডেন্সি” বা বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

যেসব কেবল নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, সেগুলো আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ব্যাংকিং তথ্য আদান-প্রদান করে। এই কেবলগুলো পশ্চিমা আর্থিক বাজারের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে বিপুল পরিমাণ তথ্য স্থানান্তর হয়। এমন তথ্য প্রবাহ স্যাটেলাইট ব্যাকআপের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই এসব কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হলে আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।

ব্রিটিশ সরকার এই দুর্বলতাগুলো নিয়ে প্রথম চিন্তিত হতে শুরু করে প্রায় এক দশক আগে। তখন জর্জ অসবর্নের নেতৃত্বে থাকা ট্রেজারি বিভাগে একটি গবেষণাপত্র জমা পড়ে। এটি তৈরি করেছিলেন ঋষি সুনাক নামের এক তরুণ আর্থিক বিশ্লেষক, যিনি সদ্য পলিসি এক্সচেঞ্জ নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর সরকার গোপনে এই বিষয়টি নিয়ে কাজের নির্দেশ দেয়—কীভাবে এসব পানির নিচের কেবল আরও ভালোভাবে রক্ষা করা যায়। তবে সূত্রগুলো জানায়, সেই সময় এই প্রশ্নগুলোর উত্তরকে “অতিরিক্ত জটিল” বলে বিবেচনা করা হয়।

সুনাকের সেই গবেষণাপত্র ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি।

তবে সামরিক বাহিনীর জন্য আরও গভীর উদ্বেগের বিষয় হলো—রাশিয়া বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেবলগুলো চিহ্নিত করতে, সেগুলোতে আড়ি পেতে বা সেগুলো ধ্বংস করতে সক্ষম। একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, “অনেক কেবলের অবস্থান জনসমক্ষে প্রকাশিত নয়। কিন্তু রাশিয়ার সেই গোপন সামরিক কেবলগুলো কেটে ফেলার সক্ষমতা রয়েছে।”

প্রোটিয়াসে সফরের আগে দুইজন জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ কর্মকর্তা দ্য সানডে টাইমসকে জানান, ২০২০ সালের দিকে রাশিয়ার কিছু ইউইউভি স্পর্শকাতর পানির নিচের কেবলের পাশে পাওয়া যায়। এই যন্ত্রগুলো গভীর পানিতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারে এবং শত শত মাইল দূরে ভ্রমণ করতে সক্ষম। আশপাশে কোনো ‘মাদারশিপ’ বা সাবমেরিনের উপস্থিতি না থাকায় ধারণা করা হয়, এসব যান অনেক দূর থেকে এসে সেখানে পৌঁছেছিল।

ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে—ইউইউভিগুলো কেবল হ্যাক করার চেষ্টা করছিল। যদিও এখন পর্যন্ত রাশিয়া সফলভাবে কোনো সামরিক কেবল হ্যাক করেছে, এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে এর বাইরেও রাশিয়ার আরও কিছু তৎপরতার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা আরও বেশি উদ্বেগজনক বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র জিরকনবাহী একটি সাবমেরিন উদ্বোধনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

চোখের সামনে লুকিয়ে থাকা হুমকি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিটেনের চারপাশের সমুদ্রে কিছু সংবেদনশীল সেন্সর ডিভাইস খুঁজে পেয়েছে রয়্যাল নেভি। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে, এই সেন্সরগুলো মস্কো গোপনে স্থাপন করেছে। উদ্দেশ্য ছিল—যুক্তরাজ্যের চারটি ভ্যানগার্ড সাবমেরিনের গতিবিধি শনাক্ত করা। এগুলো মূলত যুক্তরাজ্যের স্থায়ী সাগরভিত্তিক পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

এসব সাবমেরিন স্কটল্যান্ডের ফাসলেন ঘাঁটি থেকে রওনা দিয়ে সমুদ্রে একেবারে অদৃশ্য অবস্থায় থাকে। শত্রুপক্ষ যেন তাদের খুঁজে না পায়, সেই উদ্দেশ্যেই তাদের অবস্থান গোপন রাখা হয়। সাধারণত, একেকটি মিশনে তারা ৯০ দিন বা তারও বেশি সময় সাগরে অবস্থান করে।

এই সেন্সরগুলো কী ধরনের ছিল, তা স্পষ্ট নয়। কিছু সেন্সর তীরে ভেসে এসেছিল। তবে আরও অনেক সেন্সর রয়্যাল নেভির মাইন-শিকারি জাহাজের মাধ্যমে পানির নিচে শনাক্ত করা হয়েছে। এই অনুসন্ধানের সময় নৌবাহিনী এমন কিছু সেন্সরও খুঁজে পেয়েছে, যেগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে আগে জানা ছিল না।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সাগরভিত্তিক পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনো “অশনাক্ত অবস্থায়” কার্যকর রয়েছে।

যুক্তরাজ্য কি আরও কোনো রুশ তৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে, তা পুরোপুরি গোপন রাখা হয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ কর্মকর্তা একে তুলনা করেন মহাকাশ প্রতিযোগিতার সঙ্গে। তিনি বলেন, “এটা এক রহস্যে ঢাকা জগৎ—অসংখ্য ছলনা, গোপনীয়তা আর কৌশলে ভরা। সম্পূর্ণ স্পষ্টতা পাওয়া খুব কঠিন। তবে ধোঁয়ার পরিমাণ দেখে ধারণা করা যায়—কোথাও না কোথাও আগুন লেগেই আছে।”

ঘুরে দাঁড়ানো

২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের ইন্টিগ্রেটেড রিভিউ প্রকাশিত হয়। এটি ছিল একটি নীতিনির্ধারণী নথি, যা ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করে। সেই নথিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, পানির নিচে থাকা যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষার জন্য একটি নজরদারি জাহাজ কেনা হবে। একই সঙ্গে, পানির নিচের হুমকি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে এই জাহাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দুই বছর পর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে টোপাজ তানগারোয়া নামের একটি নরওয়েজিয়ান গভীর সমুদ্র সহায়ক জাহাজ ক্রয় করে। এটিকে সংস্কার করে নতুন নাম দেওয়া হয় প্রোটিয়াস। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে।

জাহাজটিতে রয়েল ফ্লিট অক্সিলিয়ারির (আরএফএ) প্রায় ৩০ জন বেসামরিক নাবিকের একটি স্থায়ী দল কাজ করে। এটি নেভির একটি বাণিজ্যিক শাখা। তবে প্রকৃতপক্ষে এটি পরিচালিত হয় বিশেষজ্ঞ নৌবাহিনী দল দিয়ে। প্রোটিয়াসে জীবন কঠিন ও কষ্টসাধ্য। প্রত্যাশা করা হয়, এটি বছরে ৩৩০ দিন সাগরে থাকবে।

দ্য সানডে টাইমসের সফরের এক সপ্তাহ আগে, প্রথমবারের মতো নৌবাহিনীর মাইন-হান্টিং ও হুমকি বিশ্লেষণকারী দল জাহাজে কাজ শুরু করে। তাদের মধ্যে ছিল এক্সরে স্কোয়াড্রন। তারা পানির নিচে চলাচলকারী স্বয়ংক্রিয় যান ব্যবহার করে সমুদ্রতলে মাইন শনাক্ত ও ধ্বংস করে।

সানডে টাইমসের সফরের সময়, এই দলগুলোর নতুন একটি প্রযুক্তি নিয়ে প্রশিক্ষণ চলছিল—এটি হলো সীক্যাট নামের একটি আধুনিক তিন মিটার লম্বা টর্পেডোর আকৃতির স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস। এর সামনে রয়েছে উচ্চ রেজোলিউশনের ক্যামেরা এবং দুই পাশে ডানার মতো বসানো উন্নত সোনার ব্যবস্থা।

সীক্যাট ২৪ ঘণ্টা ধরে ৩০০ মিটার গভীরে কাজ করতে সক্ষম। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, এটি সাধারণ পদ্ধতিগুলোর তুলনায় মাইন শিকারে “৩ থেকে ৬ গুণ দ্রুত।”

একই এলাকায়, আরেকটি দল গ্যাভিয়া নামক একটি ইউইউভি প্রস্তুত করছে। এটি ১,০০০ মিটার গভীরে যেতে সক্ষম। এটি যুক্তরাজ্যের চারপাশের অধিকাংশ সমুদ্র অঞ্চলে কাজ করতে পারে।

গ্যাভিয়া।

এছাড়া ডিফেন্ডার নামক একটি ডিভাইস রয়েছে। এটি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, যেমন ম্যানিপুলেটর আর্মস দিয়ে সজ্জিত হতে পারে। ব্রিটেনের গোপন গবেষণা কেন্দ্র প্রোটন ডাউন—এখন এমন অস্ত্র তৈরি করছে, যা শেপড চার্জ (এক ধরনের উচ্চ-মাত্রার বিস্ফোরক) ধরে এবং বসাতে সক্ষম। এটি শত্রু মাইন নিষ্ক্রিয় করতে ব্যবহৃত হতে পারে।

সম্প্রতি নরওয়ের উপকূলে এই সক্ষমতার পরীক্ষা করা হয়েছিল, যেখানে প্রোটিয়াস পাঠানো হয়েছিল, এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হ্যালির সফরের সঙ্গে এটি সমন্বিত হয়েছিল। তিনি নরওয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে আলোচনায় ছিলেন, যাতে রুশ হুমকি মোকাবিলায় আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা যায়।

এই তিনটি যানই উন্নত সোনার ব্যবস্থা দিয়ে সজ্জিত। অর্থাৎ এগুলো সমুদ্রতলের বড় এলাকা স্ক্যান করতে সক্ষম। এগুলো সন্দেহজনক কার্যকলাপ সনাক্ত করলে তারা আরও কাছে গিয়ে উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি ধারণ করতে পারে।

সফরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সাইমন প্রেসডি বলেন, “আমাদের ভূমিকা হলো যুক্তরাজ্যের প্রতি হুমকি মোকাবিলা করা এবং গ্রেজোন থেকে এটি বের করা। আমরা এটি বুঝতে পারি কে জড়িত, এবং সেই প্রমাণ সরবরাহ করে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো এবং যারা যুক্তরাজ্যকে হুমকি দিচ্ছে তাদেরকে তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করানো।”

প্রোটিয়াসের অন্যান্য সম্পদও রয়েছে। এটি সমুদ্রের গভীরতম অংশে প্রবেশ করতে সক্ষম। যদিও সানডে টাইমসের সফরের সময় সেগুলো গোপন রাখা হয়েছিল।

ভবিষ্যতের প্রস্তুতি

ব্রিটিশ সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর ফলে সাগরতল যুদ্ধ ব্যবস্থায় আরও বিনিয়োগ আসছে।

হ্যালির কমিশন দেওয়া স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স রিভিউ (ব্রিটেনের সশস্ত্র বাহিনীর ঘাটতি পূরণের জন্য করা হয়েছে) পানির নিচের অবকাঠামোর প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার সুপারিশ করতে পারে।

মন্ত্রীরা ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর প্রথম স্বয়ংক্রিয় মাইন-হান্টিং জাহাজ আরিয়াদানে চালুর প্রক্রিয়া দ্রুততর করেছেন এবং একটি আধুনিক, স্বয়ংক্রিয় সাবমেরিন প্রজেক্ট সিটুস নামে একটি প্রকল্পের অধীনে চালু করা হচ্ছে। এছাড়া আরেকটি প্রোটিয়াস অনুরূপ জাহাজ কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। 

এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের প্রতিপক্ষের অনেকগুলি কার্যক্রম পরিচালনা করার পয়েন্ট রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে শুধুমাত্র একটি জাহাজ রয়েছে যা এইসব মোকাবিলা করতে পারে।”

পর্যালোচনার অংশ হিসেবে নৌবাহিনী আটলান্টিক ব্যাসিটন নামে একটি নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে। এতে ব্রিটেনের পানির অঞ্চল এবং বিস্তৃত উত্তর আটলান্টিকের নজরদারির জন্য নতুন বায়ু, সুরফেস এবং সাবমার্সিবল যান, পাশাপাশি সেন্সর তৈরি করবে। স্বল্পমেয়াদে চ্যাবট (কোডনাম) প্রকল্প এই ক্ষমতাগুলিকে কার্যকর করবে। এটি পানির নিচের অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল বেসরকারি শিল্পের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়িত হবে। এতে কোম্পানিগুলোকে কার্যক্রমের জন্য সহায়তা দেওয়ার জন্য অর্থায়ন করতে বলা হতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে সূত্ররা।

এমন একটি ধারণা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তাব করছেন সাবেক কনজারভেটিভ পরিবহন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যানি মারি ট্রেভেলিয়ান। তিনি বলেন, “এটি একটি জাতীয় উদ্যোগ হলে হয়তো আমাদের জ্বালানি, পানি, সাবমেরিন কেবলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আইনগতভাবে কিছু করতে হবে… সবাইকে খরচে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো উচিত।” তিনি আরও বলেন, “একটি নির্দিষ্ট কর, যা প্রতিরক্ষা তহবিলে জমা হবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জীবনধারা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে, সেটি হবে উপযুক্ত পথ।”

জাহাজ প্রোটিয়াসের মুন পুল দিয়ে সাগরতলে নামানো হচ্ছে বিশেষ যন্ত্র ডিফেন্ডার।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন: “আমরা গুরুত্বপূর্ণ উপকূলবর্তী অবকাঠামোর নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের ন্যাটো ও জয়েন্ট এক্সপেডিশনারি ফোর্স মিত্রদের সঙ্গে, আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া শক্তিশালী করছি যাতে রাশিয়ার জাহাজ ও বিমান যুক্তরাজ্য বা ন্যাটো ভূখণ্ডের কাছে গোপনে কাজ করতে না পারে। আমরা নতুন প্রযুক্তি যেমন এআই ব্যবহার করছি এবং আমাদের মিত্রদের সঙ্গে একত্রে টহল ব্যবস্থা সমন্বয় করছি। আমাদের কন্টিনিউয়াস অ্যাট সী নিউক্লিয়ার ডেটেরেন্ট ৫৬ বছর ধরে পৃথিবীর সমুদ্রপথে অগোচরে টহল দিচ্ছে, এবং তা চলতে থাকবে।”

নৌবাহিনীর কিছু সদস্য মনে করেন, গোপনে যুক্তরাজ্যকে আরও এগিয়ে যেতে হবে এবং তার সী মাইন স্থাপনের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে হবে। শীতল যুদ্ধের পর আর এই মাইন বসায়নি যুক্তরাজ্য। যা মাইন ছিল তাও ১৯৯২ সালে বাতিল করা হয়েছিল, সরকারের নৈতিক উদ্বেগ এবং তা অপ্রয়োজনীয় মনে করার কারণে। তবে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সমুদ্র মাইনের জন্য ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পোল্যান্ড এবং বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো সম্প্রতি অ্যান্টি পার্সোনেল মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

বর্তমানে নৌবাহিনী এটি বিবেচনা করছে না এবং কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনার অংশ হিসেবে কোনো প্রস্তাব উপস্থাপন করেনি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাজ্যকে হয়তো ব্রিটিশ পানির কাছাকাছি প্রতিরক্ষামূলক মাইনফিল্ড স্থাপন করতে হতে পারে শত্রুর সাবমেরিনগুলোকে আটকানোর জন্য।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সরকার স্পষ্টভাবে হুমকির আকার বুঝতে পেরেছে। অতিরিক্ত বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে যুক্তরাজ্যকে যুদ্ধের প্রস্তুতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের নিচে যা ঘটছে, তা বিবেচনায় রেখে এই বিনিয়োগ এখন আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি।

আরও পড়ুন