চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে রাখাইনে মুসলিম স্টেট বা রাজ্য গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী।
রোববার দলটির একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নিয়ে এমন এক সময়ে প্রস্তাবটি তুললো যখন খোদ বাংলাদেশে উগ্র মুসলিমপন্থী নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোও তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ওই বৈঠকে জামায়াত নেতারা তাদের অভিমত তুলে ধরার পাশাপাশি রাখাইনে মুসলিম স্টেট গঠনে চীনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন কোনো সমাধান নয়। এর সমাধান হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন। সেজন্য আরাকান কেন্দ্রিক স্বাধীন আরাকান মুসলিম রাষ্ট্র চায় জামায়াতে ইসলামী।
তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। ১১ বা ১২ লাখের রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আমরা বলেছি, এভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবেতর অবস্থান কোনো সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন করা। সেজন্য আমরা একটি প্রস্তাবও দিয়েছি, সেটি হচ্ছে আরাকান কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা মেজরিটি যে এরিয়া আছে, সেই এরিয়াতে একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট আরাকান স্টেট করার।”

চায়না কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দল এই প্রস্তাব চীন সরকারের কাছে উত্থাপন করবে এবং এ ব্যাপারে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার চেষ্টা চালাবে বলে জামায়াত প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেছে বলেও জানান তাহের।
এর পাশাপাশি তিস্তা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনের বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েও কথা হয়েছে বৈঠকে।
“আমরা তিস্তা ব্যারেজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করে বলেছি। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর জন্য বিনিয়োগ করার কথা বলেছি। গভীর সমুদ্রে যে বন্দর হচ্ছে সেখানে অর্থায়ন করার কথা বলেছি। গভীর সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে আমাদের যে ব্লু ইকোনমি, সেটা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।”
চলমান সংস্কার প্রস্তাবনা ও নির্বাচন বিষয়েও চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, “সংস্কার নিয়ে তারা কথা বলেছেন। সংস্কারের ব্যাপারে আমাদের যে পয়েন্টগুলো ছিল, সেগুলো আমরা বলেছি।”
নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তো একটা লাইন দিয়েছেন যে, নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, বেশি সংস্কার চাইলে আগামী জুনে হতে পারে। আমরা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার এই প্রস্তাবের ব্যাপারে আমরা ঐকমত্য পোষণ করি।”
বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।