লুট হওয়া পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়েছিল ‘গণপিটুনিতে’ নিহত জামায়াত কর্মী

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তের দেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘গণপিটুনিতে’ নিহত জামায়াতে ইসলামীর নেতা নেজাম উদ্দিন থানা থেকে লুট হওয়া পিস্তল দিয়ে গ্রামবাসীর উদ্দেশে গুলি ছুড়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চট্টগ্রামের আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই সময় ৮১৩টি অস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪ গুলি লুট হয়। এসব অস্ত্র ও গুলির বেশির ভাগই এখনো উদ্ধার হয়নি।

গত সোমবার রাতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘গণপিটুনিতে’ নিহত মো. নেজাম উদ্দিন ও আবু সালেক নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছিল জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াতে ইসলামী সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “দুজনই কাঞ্চনা ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী। তাদের পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে চট্টগ্রামের এসপি সাইফুল ইসলাম জানান, আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে খুন হন নেজাম ও সালেক। ঘটনার দিন তারা সাতটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন। তারা চাঁদার জন্য নিয়মিত সেখানে যেতেন বলে পুলিশ তথ্য–প্রমাণ পেয়েছে।

চার থেকে পাঁচ দিন আগেও তাঁরা সেখানে গিয়ে এক ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরেছিলেন; যার কারণে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় বলে জানান এসপি।

গণপিটুনিতে নিহত আবু সালেক ও নেজাম উদ্দিন

পুলিশ সুপার বলেন, ‘গণপিটুনির ঘটনায় অনেকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথা বলছেন। ঘটনার সময় বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের কোনো ব্যক্তি বা চেয়ারম্যানের উপস্থিতি ছিল কি না, প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে আমরা কিন্তু এ ধরনের কারও উপস্থিতি খুঁজে পাইনি। এমনকি সেখানে তাঁদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শক্ত অবস্থানও পাইনি।’

“ঘটনার দিন নেজাম সেখানে গিয়ে অস্ত্র নিয়ে গুলি করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর সেখান থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি সিএমপির কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র।” যোগ করেন এসপি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, !কোনো অবস্থায় ভাবার সুযোগ নেই, প্রশাসন নির্বিকার হয়ে গেছে। আমরা আমাদের মতো প্রকৃত সত্য ঘটনা উদ্‌ঘাটনের জন্য যা কিছু দরকার, সবকিছু করব।”

নিহত সালেকের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, বিস্ফোরকসহ পাঁচটি ও নেজামের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।

সোমবার রাতে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে ঘোষণা দিয়ে দুই ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ওই দুজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার মোহাম্মদ সালেক (৩৫)। এক দোকানিসহ চার ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

আরও পড়ুন