‘হাসিনাসহ শীর্ষ আসামিদের ৩-৪টি মামলার রায় অক্টোবরে হতে পারে’

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আন্তর্জাতিক অপরাধে ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এসব মামলার মধ্যে ৩-৪টি মামলার রায় আগামী অক্টোবরের মধ্যে হতে পারে।

এসব মামলায় আসামির তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং শীর্ষস্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

গত জুলাই-আগস্ট অনুষ্ঠিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা, গণহত্যা, গুমসহ বিভিন্ন অভিযোগে একের পর এক মামলা হয়েছে, যেসব মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এবং পুলিশ ও প্রশাসনের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চালাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল অ্যাক্টের সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠিত হওয়ার পরে ইতোমধ্যে এই আদালতে বিচারকার্যের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। ৩০০টির ওপর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, আমাদের এখানে প্রসিকিউশন অফিস যাচাই-বাছাই করে ১৬টি মামলা দায়ের করেছে।”

চারটি মামলার তদন্ত কাজ এ মাসে সম্পন্ন হচ্ছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “এরপর চার্জ শিট গঠন করার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কাজ শুরু হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে ঈদের পরপর এপ্রিল মাস থেকে।”

তিনি বলেন, “এই আদালতে অব্যাহতভাবে শুনানি হয় বলে এসব মামলার রায় পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে… এপ্রিল থেকে শুরু করে পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রদান করা যাবে বলে আমরা আশা করি। অর্থাৎ এই হিসাবে অক্টোবরের মধ্যে আমরা ৩-৪টা মামলার রায় পেতে যাচ্ছি বলে আশা করি।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন,  “এটা বিচারিক প্রক্রিয়ার ব্যাপার, কিন্তু আমাদের যে প্রসিকিউশন টিম আছে, বিশেষ করে আমাদের চিফ প্রসিকিউশন আইনজীবী আছেন, তার সাথে কথা বলে আমার যে ধারণা হয়েছে সেটা আপনাদের ব্যক্ত করছি। আমরা আশা করছি এ বছর অক্টোবরের মধ্যে আমরা ৩ থেকে ৪টি মামলার রায় পেয়ে যাব।”

এসব মামলার আসামি হিসেবে কারা আছে সে তথ্য জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “এ সমস্ত মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং শীর্ষস্থানীয় কিছু পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসামি হিসেবে রয়েছেন, যে ৩-৪টা মামলার কথা আপনাদেরকে বললাম।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা বিচারকার্য শেষ হতে এক বছরের মত সময় লাগছে বলেও এ সময় জানান আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, “এই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শেখ হাসিনার আমলে যখন জামায়াতে ইসলামীর কিছু লিডারের এবং বিএনপির একজন লিডারের বিচার হয়, সেই বিচারকার্যগুলো সম্পন্ন হতে গড়ে আড়াই বছর লেগেছিল, সেখানে আমাদের এই আদালতে তার অর্ধেকেরও কম সময় লাগছে। কারণ আমাদের প্রসিকিউশন টিম, তদন্তকারী টিম তারা প্রচণ্ড নিষ্ঠার সাথে দিনরাত কাজ করছেন।

“আরেকটা কারণ আগে যে বিচারকার্যগুলো হয়েছিল, ওগুলো অনেক আগের ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে বিচার কাজ হয়েছিল, আর এই আদালতে যে বিচার কাজ হচ্ছে, এটার সাক্ষ্য প্রমাণ এত বেশি আছে, যে কারণে আমরা আশা করছি– এক বছরের মধ্যেই প্রথম কয়েকটা রায় আমরা পাবো।”

আওয়ামী লীগ আমলে দায়ের হওয়া ১৬ হাজার ৪২৯টি ‘গায়েবি মামলা’ থাকার কথা জানিয়ে ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন “১২১৪টি মামলা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার হবে। এই ১২১৪টির মধ্যে ৫৩টি মামলার প্রত্যাহার সংক্রান্ত গেজেট আজকালের মধ্যে প্রকাশিত হবে।”

তিনি আরও জানান, সাইবার সিকিউরিটি আইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিরোধী ৩৯৬টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ৩৩২টি প্রত্যাহার হয়েছে এবং আরও ৬১টি মামলা এ মাসেই প্রত্যাহার হবে।

“সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের অধীনে আমরা শুধুমাত্র স্পিচ অফেন্স, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কারণে যে অফেন্স গুলো হয় সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার করছি। কম্পিউটার অফেন্স না কম্পিউটার হ্যাকিং সংক্রান্ত মামলাগুলো না,” বলেন আইন উপদেষ্টা।

আরও পড়ুন