কানাডায় মার্ক কার্নির শপথ, প্রথম আদেশেই বাতিল কার্বন কর

শুক্রবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মার্ক কার্নি।
শুক্রবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মার্ক কার্নি।

অর্থনীতিবিদ মার্ক কার্নি কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। গত সপ্তাহে কানাডার ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়া মার্ক কার্নি শুক্রবার দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হলেন, যিনি গত নয় বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শপথ গ্রহণের পর মার্ক কার্নি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, কানাডা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হবে না। তিনি বলেন, “আমরা জানি, একসঙ্গে কাজ করলে আমরা নিজেদের জন্য এমন কিছু গড়ে তুলতে পারি, যা অন্য কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।”

কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ হিসেবে যুক্ত করার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য প্রসঙ্গে শুক্রবার কার্নি বলেন, “আমরা কোনো আকারে বা রূপে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হব না। আমরা মৌলিকভাবে একটি ভিন্ন দেশ।” তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য বানানোর ধারণাকে ‘পাগলামি’ বলেও অভিহিত করেন।

রাজনীতিতে নবাগত মার্ক কার্নি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম আদেশেই ট্রুডোর আমলের কার্বন কর বাতিল করেন, যা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনপ্রিয়তা হারিয়েছিল। কনজারভেটিভরা এই করের সমালোচনা করে বলেছিল, এটি কানাডিয়ানদের জন্য পণ্য ও জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কার্নি বলেন, তার সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর আরোপিত কার্বন কর অক্ষুণ্ন থাকবে। কার্বন প্রাইসিংয়ের খরচ পূরণের জন্য কানাডিয়ানরা যে রিবেট পান, তা আগামী এপ্রিলে শেষবারের মতো দেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কানাডার রাজনীতি মূলত ট্রাম্পের শুরু করা ‘বাণিজ্যযুদ্ধের’ ছায়ায় পড়ে গেছে। জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প এই ‘যুদ্ধ’ শুরু করেন।

কানাডার আগামী অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সময় নির্ধারিত রয়েছে। তবে মার্ক কার্নি চাইলে আগাম নির্বাচনও দিতে পারেন। সেই নির্বাচনের আগে লিবারেল পার্টির নতুন এই নেতা নিজেকে ট্রাম্পের মোকাবিলায় সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে চান।

এর আগে কানাডা ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কার্নি উভয় দেশকেই বড় আর্থিক সংকট থেকে উদ্ধার পেতে সহায়তা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে আগামী সপ্তাহে তিনি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে যাবেন। কার্নি বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার জন্যও উন্মুখ।

“আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সম্মান করি। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সম্মান করি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এজেন্ডার শীর্ষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন।”

কার্নি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যতক্ষণ ট্রাম্প কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ সার্বজনীন শুল্ক বহাল রাখবেন, ততক্ষণ কানাডাও আমেরিকান পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক বজায় রাখবে।

কানাডার অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হলে কানাডা মন্দার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

কার্নির নতুন মন্ত্রিসভায় ট্রুডোর অধীনে কাজ করা বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন, বিশেষ করে যারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন মেলানি জোলি (পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী), ডেভিড ম্যাকগুইন্টি (জননিরাপত্তামন্ত্রী), জোনাথন উইলকিনসন (জ্বালানিমন্ত্রী), ডমিনিক লেব্লঙ্ক (অর্থ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী) এবং ফ্রঁসোয়া-ফিলিপ শঁপ্যাঁ (শিল্প থেকে অর্থমন্ত্রী)।

আগামী ফেডারেল নির্বাচনে কার্নির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন কনজারভেটিভ নেতা পিয়ের পোয়ালিভ্র। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের হুমকির আগে কনজারভেটিভরা কিছু নির্বাচনী জরিপে ২০ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল, তবে সাম্প্রতিক জরিপে তাদের অবস্থান প্রায় সমানে সমান দেখা গেছে।

কার্নির শপথের পর পোয়ালিভ্র বলেন, লিবারেলরা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার যোগ্য নয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে ট্রাম্পকে সরাসরি মোকাবিলা করবেন এবং প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads