সেহরির সময় গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলা, নিহত ২২০

নতুন করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ছবি: আনাদোলু
নতুন করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ছবি: আনাদোলু

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ব্যাপক মাত্রায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সেহরি সময় শুরু হওয়া বিমান হামলায় অন্তত ২২০ জন নিহত হয়েছে বলে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বলেছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে চিহ্নিত স্থানগুলোতে বিমান হামলা চালাচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, গাজার উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অঞ্চলটির সর্বোচ্চ পদস্থ হামাস নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাহমুদ আবু ওয়াফাহ হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এটিই গাজায় সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। গাজার যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর জন্য আলোচনা কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার মধ্যেই ইসরায়েল এ হামলা চালালো।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রমজানের রোজা রাখার জন্য ফিলিস্তিনিরা যখন সেহরি খাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই গাজায় বিস্ফোরণ শুরু হয়। তারা বলেছেন, ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান উড়ে আসে এবং গাজা সিটি, রাফাহ ও খান ইউনিসের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা শুরু করে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার সকালে এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “হামাস বারবার আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছে এবং মার্কিন প্রেসিডেনশিয়াল দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।” এতে আরও বলা হয়, “ইসরায়েল এখন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।”

এর আগ আইডিএফ গত সপ্তাহে হামলার পরিকল্পনা উপস্থাপন করলে তা রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুমোদন পায়। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন হামাসকে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সতর্ক করে বলেছেন, “আমরা আমাদের শত্রুদের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না।”

হামাস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি উল্টে দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনেছে। তারা বলেছে, ইসরায়েল গাজায় অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের “অজানা ভাগ্যের” দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে হামাস এখনও যুদ্ধ পুনরায় শুরুর ঘোষণা দেয়নি বরং মধ্যস্থতাকারী ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র ফক্স নিউজকে জানান, হামলা চালানোর আগে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে।

এর আগে গত ১ মার্চ অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর আলোচকরা একটি সমাধানের পথ খুঁজছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রথম ধাপ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাবের মধ্যে হামাসের হাতে থাকা জিম্মি এবং ইসরায়েলের হাতে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের আরেক দফা বিনিময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, উইটকফের প্রস্তাবিত চুক্তির মূল বিষয়গুলো নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মতৈক্য হয়নি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের চালানো নজিরবিহীন এক হামলার জেরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েল। সেদিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে চালানো হামাসের হামলায় এক হাজার দুইশ’র বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়। এ ছাড়া হামাসের যোদ্ধারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।

সেদিন থেকে গাজায় ব্যাপক আকারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে গত প্রায় দেড় বছরে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় প্রায় ৫০ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানাচ্ছে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যে তথ্যকে সঠিক বলে মনে করে জাতিসংঘ। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু।

ইসরায়েলি আগ্রাস শুরুর পর থেকে গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন