বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুরা ‘ভয়াবহ পরিস্থিতিতে’: বেঙ্গলি হিন্দু কোয়ালিশন 

দ্য গ্লোবাল বেঙ্গলি হিন্দু কোয়ালিশন-জিবিএইচসির সংবাদ সম্মেলন।
দ্য গ্লোবাল বেঙ্গলি হিন্দু কোয়ালিশন-জিবিএইচসির সংবাদ সম্মেলন।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মীয়, আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠী ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’ পার করছে বলে অভিযোগ করেছে ‘দ্য গ্লোবাল বেঙ্গলি হিন্দু কোয়ালিশন-জিবিএইচসি’ নামের একটি সংগঠন। 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে সংখ্যালঘুদের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘মানবিক সংকট’ হিসেবে বর্ণনা করে এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপও চেয়েছে সংগঠনটি।

সোমবার ফরেন করেসপনডেন্টস ক্লাব অব সাউথ এশিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার টরন্টোভিত্তিক সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব বক্তব্য তুলে ধরা হয় বলে জিবিএইচসির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বাংলাদেশের আদমশুমারির তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরেন। তারা বলেন, বাংলাদেশে ১৯৫১ সালে মোট জনস্যংখ্যার ২২ শতাংশ হিন্দু থাকলেও ২০২২ সালের মধ্যে তা কমে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশে নেমে এসেছে।  

২০৪৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা শূন্যের ঘরে নেমে আসতে পারে বলে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সেটিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে ‘পদ্ধতিগত সহিংসতা, জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ এবং বাস্তুচ্যুতিকে’ দায়ী করেছে জিবিএইচসি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৮৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাঞ্জাবে জনসংখ্যা বিনিময় হয়েছিল, কিন্তু বাংলায় সেটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য এই অসমাপ্ত প্রক্রিয়াটি ফের পর্যালোচনার সময় এসেছে।”

লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনাচ্ছেন সীতাংশু গুহ।

৫ অগাস্টের পর গঠিত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

এ সময়ে বাংলাদেশে ৬৫টি মন্দিরে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট ছাড়াও জোর করে শ্মাশান দখলের মতো ঘটনাও ঘটেছে। 

উদাহরণ হিসেবে শরীয়তপুরে মন্দিরে হামলা ও দিনাজপুরের ফুলতলা কেন্দ্রীয় শ্মশান ভাংচুরের ঘটনা তুলে ধরে কোয়ালিশন।

রাজনৈতিক চাপে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়টিও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সংগঠনের প্রতিনিধি অরুণ দত্ত বলেন, “বিচারিক স্বাধীনতার অবক্ষয় এবং ভিন্নমতকে দমন করার জন্য ক্ষমতার পদ্ধতিগত অপব্যবহার সংখ্যালঘুদের আগের চেয়ে আরও বেশি দুর্বল করেছে।”

বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের নিয়ে চলা সংকট ঠেকাতে পাঁচটি দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো-

১. হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও উপজাতিদের সুরক্ষায় বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মোতায়েন

২. হিন্দু অধ্যূষিত এলাকায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আলাদা সুরক্ষিত অঞ্চল তৈরি

৩. ভূমিসহ জনসংখ্যা বিনিময় সম্পূর্ণ করা।

৪. জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ভারত সবসময়ই বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। ঢাকার বর্তমান প্রতিকূল এবং জিহাদিপন্থী শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারের কৌশল পুনর্বিবেচনা করা এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধের সাথে মিল রেখে ভূমিকা রাখা।

৫. বাংলাদেশে বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপে জাতিসংঘ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির অন্যতম প্রতিনিধি সিতাংশু গুহ বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের টিকে থাকার অর্থ শুধু ঐহিত্য রক্ষাই নয়, এটি ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইও।”

জিবিএইচসি ভারত, ব্রিটেন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে এসব দেশের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করে সংগঠনটি।

জিবিএইচসি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় উচ্চকণ্ঠ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ এবং ভারতের প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সাথে মিডিয়া এবং মানবাধিকার সংস্থার সদস্যরা। জোটের আবেদন বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান সঙ্কট মোকাবেলার জরুরিতার ওপর জোর দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে জিবিএইচসির বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সীতাংশু গুহ, যুক্তরাজ্যের পুষ্পিতা গুপ্ত, লন্ডনের সুশান্ত দাস গুপ্ত ছাড়াও কানাডা, ইউরোপ এবং ভারতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন