বাংলাদেশের স্থপতির জন্মদিনে নেই রাষ্ট্রীয় আয়োজন

রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের একটি মুহূর্ত।
রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের একটি মুহূর্ত।

বেঁচে থাকলে আজকের এই দিনে ১০৫তম জন্মদিন পালন করতেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

বিগত বছরগুলোতে দিবসটি ঘিরে নানা আয়োজন থাকলেও এবছর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা অনুপস্থিত। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে কোনো পর্যায় থেকে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। বরং উল্টো বাতিল করা হয়েছে এদিনে থাকা সরকারি ছুটি।

গতবছর যেভাবে সরব ছিল বাংলাদেশের খবরের কাগজগুলো, প্রতিবেদনের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাল্লা দিয়ে, এবছর তেমনভাবে দেখা যায়নি জাতির জনকের বিশেষ দিনটি নিয়ে কোনো সংবাদ।

২০২৪ সালে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিদর্শন বইয়ে নিজের প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “আজ ১৭ মার্চ, ২০২৪। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন। জাতীয় শিশু দিবস। আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”

দেশের সব শিশুর উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা করে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, “আজকের এই পবিত্র দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা, বাংলাদেশের সকল শিশুর উন্নত ভবিষ্যৎ ও উন্নত জীবন নিশ্চিত করব।”

গেল বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পরিদর্শন বইয়ে নিজের প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছিলেন শেখ হাসিনা।

জন্মদিন ঘিরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ পৃথক কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে। যদিও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তা কতোটা আলোর মুখ দেখবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

নিজেদের ফেইসবুক পাতায় এক পোস্টে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে সোমবার ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে তারা শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন।

অবশ্য গত ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ওই ভবন ও প্রতিকৃতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া একইদিন গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ।

দলটির অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের আলোচনা সভা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কন্টেন্ট প্রচার ও ভার্চুয়াল আলোচনা সভা।

শিশু-কিশোরদের মাঝে রচনা, চিত্রাঙ্কন ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করবে বলে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে।

এদিকে, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে সংগঠনটিও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ঘিরে বিভিন্ন কর্মসূচি রেখেছে।

অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে শিশুদের নিয়ে জন্মদিন পালন, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডায় প্রার্থনা, খাদ্য উপকরণ ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ এবং শিশুদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম নিয়ে রচিত বই উপহার।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতির জনকের প্রতি জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলা হয়, “বাঙালি জাতিকে একটি মুক্ত-স্বাধীন মাতৃভূমি উপহার দেয়ার কারিগর, মহাবিজয়ের মহানায়ক তোমাকে জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।”

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।

বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে এতে বলা হয়, “তোমার এই ত্যাগ, এই সংগ্রাম সফল হয়েছে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার মাধ্যমে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে।

“হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার গোষ্ঠী এক তোমার শক্তি-সাহস-সংকল্প-সংগ্রাম-নেতৃত্বের কাছে পরাজিত হয়েছে।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বলা হয়, “একাত্তরের সেই পরাজিত হানাদার ও ঘৃণিত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ইউনূস নাম ধারণ করে আবার ফিরে এসেছে, তোমার স্বাধীন দেশকে, তোমার প্রিয় জনতাকে নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছে। হানাদার-রাজাকার বাহিনীর নেতা ইউনূস তোমার জন্মদিবস, মৃত্যুদিন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, ১০ জানুয়ারির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সকল রাষ্ট্রীয় আয়োজন বন্ধ ঘোষণা করেছে। তারা বাংলাদেশের আঁতুড়ঘর তোমার ধানমণ্ডি-৩২ ঘুড়িয়ে দিয়েছে, জ্বালিয়ে দিয়েছে।

“তাতে কি! ওরা জানেনা, এই বাংলায়, এই বাংলার মাটি-পানি-বৃক্ষ-আকাশ-বাতাসে তোমার ‘ভাইয়েরা আমার’ উচ্চারণের শক্তি কতোটা প্রখর, তোমার ঊর্ধ্বগামী তর্জনির সীমা কতোটা আকাশচুম্বী, তোমার বুক জুড়েই এদেশের ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল। পৃথিবীর মানচিত্রে যতদিন এদেশ থাকবে, এদেশে যতোদিন একটি শিশুরও জন্ম হবে ততোদিন তোমার নাম, তোমার কীর্তি চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।”

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে আবারও পরাজিত করার সংকল্প তুলে ধরা হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাঙালির সব বড় আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু জনগণকে ধাবিত করেন স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পৃথিবীতে স্বাধীন দেশ আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরাজিত ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের হত্যা করে। বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।     

আরও পড়ুন