প্রিমিয়ার লিগে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ‘৭০ শতাংশ কমেছে’

অভিজ্ঞ ব‍্যাটসম‍্যান মিঠুন এবার খেলবেন আবাহনী লিমিটেডের হয়ে।
অভিজ্ঞ ব‍্যাটসম‍্যান মিঠুন এবার খেলবেন আবাহনী লিমিটেডের হয়ে।

অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলোতে ক্রমেই কমছে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক। আসন্ন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে সেটা ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে শঙ্কা মোহাম্মদ মিঠুনের।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ক্লাব কিংবা খেলোয়াড় কেউই কখনও প্রকাশ করেন না। টুর্নামেন্টের আয়োজক সিসিডিএমও কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে পারিশ্রমিকের চিত্র প্রকাশ করেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুক্তি সেরে নেওয়া হয় মৌখিকভাবে।

এবারও সেটিই হচ্ছে। তবে কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পরও কয়েকটি ক্লাব ক্রিকেটাদের পারিশ্রমিক আরও কমানোর অনুরোধ করেছে। কোনো উপায় না থাকায় কম পারিশ্রমিকেই খেলতে রাজি হয়েছেন ক্রিকেটাররা। 

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ছেড়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে যোগ দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। রোববার দলবদলের প্রক্রিয়া সেরে আক্ষেপের কথা শোনালেন বাঁহাতি এই স্পিনার।

“আল্টিমেটলি টাকার জন্যই খেলে ক্রিকেটাররা। প্রত্যেক টুর্নামেন্ট থেকেই যখন টাকা কমে যায়, অবশ্যই এটা একটা দুঃখজনক বিষয়। শুধু জাতীয় দলের ক্রিকেটার নয়, অনেক ক্রিকেটার আছে যাদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে পরিবার চালাতে হয়। তাদের অনেক কঠিন হয়ে যায়। আমার মনে হয়, ইনশাল্লাহ এই পরিস্থিতি দ্রুত কেটে যাবে।”

কদিন আগে হয়ে যাওয়া বিপিএলেও কমেছিল ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক। সর্বোচ্চ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ৮০ লাখ থেকে নেমে আসে ৬০ লাখে। পারিশ্রমিক কমে অন্যান্য ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদেরও।

সে সময় দেশের সাম্প্রতিক অবস্থার কথা বলেছিলেন বিসিবি প্রধান ফারুক আহমেদ। একই সঙ্গে অন্যান্য টুর্নামেন্টেও টাকার পরিমাণ কমার আভাস দিয়েছিলেন তিনি। সেটাই সত‍্যি হয়ে গেল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে।

তাইজুলের মতোই কম পারিশ্রমিকে নতুন ক্লাবে যোগ দিয়েছেন মিঠুন। অভিজ্ঞ ব‍্যাটসম‍্যান এবার খেলবেন আবাহনী লিমিটেডের হয়ে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা লিগের সফলতম দলটি ব‍্যর্থ হয়েছে বেশিরভাগ ক্রিকেটারকে ধরে রাখতে।

কঠিন সময়ে আবাহনীতে মিঠুনের পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন মুমিনুল হক, পারভেজ হোসেন ইমনরা। দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা সারার পর দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অগ্রগতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মিঠুন।

“সত্যি বলতে আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে (পারিশ্রমিকের বিষয়ে) কোনো উন্নতি দেখছি না। সেটা বিপিএল হোক বা ডিপিএল, এটা প্রতিনিয়ত নিচের দিকেই যাচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় উন্নতি হয়। আমাদের এখানে অবনতি হচ্ছে।”

“যতই দেশের প্রেক্ষাপট বলেন বা অজুহাতের চেষ্টা করেন, দিন শেষে যখন চাকরি করবেন, আপনি যথাযথ পারিশ্রমিকই আশা করবেন। আমাদেরও পেশা কিন্তু ক্রিকেট। আমরা আশা করি, গত বছর যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে উন্নতি করার।”

“সব ক্রিকেটারের পারিশ্রমিক কমেছে, বড় অঙ্কে কমেছে। যেটা পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমরা আশা করি না। কত কমেছে, সেটা বলব না। সার্বিকভাবে যদি চিন্তা করেন, গত বছরের তুলনায় এবার ক্রিকেটাররা ৩০ শতাংশ পারিশ্রমিক পাচ্ছে কি না, সন্দেহ আছে।”

দলবদলে অংশ নেওয়া দশের অধিক ক্রিকেটার নিশ্চিত করেছেন, গত আসরের তুলনায় এবার প্রায় অর্ধেক বা কিছু ক্ষেত্রে এর চেয়েও কম টাকায় খেলতে হচ্ছে তাদের। নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তারা। সত‍্যতা স্বীকার করেছেন ক্লাব কর্মকর্তারাও। দের সঙ্গে আলাপ করেও পাওয়া গেছে এর সত্যতা। মোহামেডান ম্যানেজার সাজ্জাদ আহমেদ মেনে নিয়েছেন পারিশ্রমিক সমস্যার কথা।

“দিন শেষে সব দলেরই (পারিশ্রমিকের) সমস্যাটা চলছে, চলবে। কারণ এখন তো সরকারের অবস্থানটা একটু ভিন্ন অবস্থায় আছে। নতুন কোনো সরকার আসেনি। তাই পারিশ্রমিকের একটা সমস্যা থাকবেই। এর মধ্যেই যেভাবে পারা যায়, এডজাস্ট করার চেষ্টা করছি।”

আরও পড়ুন