তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানোর পর দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবিসি জানিয়েছে,২০২৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাই করতে রোববার রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) দলীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এই নির্বাচনে ইমামোগলু একমাত্র প্রার্থী থাকায় প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন চূড়ান্তই ছিল।
কিন্তু আটকের কয়েকদিন বাদে রোববারই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এতে রোববার রাতে দেশটিতে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় অস্থিরতা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়।
গ্রেপ্তারের আগে এক্স (সাবেক টুইটার) এ ইমামোগলু অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, “আমি কখনোই মাথা নত করব না।”
এরদোয়ান বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে সিএইচপির বিরুদ্ধে “শান্তি বিঘ্নিত এবং জনগণকে বিভক্ত করার” চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন।
রোববার সন্ধ্যায় ইস্তাম্বুলের সিটি হলের কাছে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। তারা তুর্কি পতাকা নেড়ে স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে।
ইমামোগলুর স্ত্রী দিলেক কায়া ইমামোগলু সিটি হলের বাইরে জড়ো হওয়া বিশাল জনতাকে বলেন, তার স্বামীর প্রতি ‘অবিচার’ প্রতিটি বিবেককে নাড়া দিয়েছে।
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় হওয়া বিক্ষোভগুলো ২০১৩ সালের গেজি প্রতিবাদের পর থেকে তুরস্কে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ২০১৩ সালে ইস্তাম্বুলের একটি স্থানীয় পার্ক ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে গেজি বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির হিসাব অনুযায়ী, তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে অন্তত ৫৫টিতে বিক্ষোভ হয়েছে।

এর আগ গত বুধবার ইমামোগলুসহ ১০০ জনেরও বেশি লোককে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে অন্যান্য রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ীও ছিলেন।
এরপর রোববার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে ‘একটি অপরাধী সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, বেআইনিভাবে ব্যক্তিগত ডেটা রেকর্ড করা এবং টেন্ডার কারচুপির’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
তুর্কি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইমামোগলুকে মেয়রের পদ থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইমামোগলু তার গ্রেপ্তারকে ‘আমাদের গণতন্ত্রের কালো দাগ’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। তিনি দেশজুড়ে মানুষকে বিক্ষোভে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার রাতে তার আইনজীবীদের মাধ্যমে এক্স-এ শেয়ার করা একটি বার্তায় ইমামোগলু বিক্ষোভকারীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং বলেছেন, ভোটাররা দেখিয়েছেন যে তুরস্ক এরদোয়ানকে ‘যথেষ্ট’ দেখেছে।
গ্রেপ্তার হলেও তাতে ইমামোগলুর প্রার্থিতা বা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে তার অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবে না। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনোটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে সেক্ষেত্রে আর নির্বাচনে লড়তে পারবেন না।
ইমামোগলুর সিএইচপি পার্টি জানিয়েছে, দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে রোববার প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ ভোট এর সদস্যদের কাছ থেকে এসেছে, বাকি ভোটগুলো এসেছে তাদের কাছ থেকে যারা দলীয় সদস্য নয়, কিন্তু ইমামোগলুর প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে। তাদের জন্য আলাদা ব্যালট বাক্সে দেওয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোয়ান ২২ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতায় রয়েছেন। ইমামোগলুকে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়। অবশ্য সংবিধান পরিবর্তন না করলে মেয়াদ সীমার কারণে ২০২৮ সালে আর প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই এরদোয়ানের।