ওবায়দুল কাদেরের বিবৃতিতে তৃণমূলে বিস্ফোরণ, ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান

আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ করা হয় ওবায়দুল কাদেরের ওই বিবৃতি।
আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ করা হয় ওবায়দুল কাদেরের ওই বিবৃতি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হদিস মিলছিল না নয় মাসের বেশি সময় ধরে। অবশেষে তার সন্ধান মিলেছে বিবৃতিতে, যেখানে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনাও করেছেন।

সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টার দিকে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ থেকে ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তাকে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে তিনি বলেছেন, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট ইউনূস অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। গত নয় মাসে জনগণের কল্যাণে তারা কিছু করতে না পারলেও বিদেশি প্রভুদের সন্তুষ্ট করার সকল কাজ করে গেছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। করিডোর দিয়ে বহির্শক্তির আগ্রাসনকে অনুমোদন এবং চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়াসহ দেশ বিক্রির সকল পরিকল্পনা জনগণের সামনে ফাঁস হয়ে গেছে।

জনগণের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন কাদের।

এদিকে, দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা আওয়ামী লীগের এই নেতার বিবৃতির পোস্টে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তৃণমূলের কর্মীরা। সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৬৫৭টি প্রতিক্রিয়ার বেশিরভাগই ছিল নেতিবাচক, যেখানে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ এসেছে।

অরণ্য নির্ঝর নামে একজন লিখেছেন, “কাদেরের বিবৃতি আওয়ামী লীগকে দুর্বল করবে এবং ধ্বংস করবে। এখনও যারা আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে তারমধ্যে ১%লোক পাওয়া যাবে না যারা কাদেরকে পছন্দ তো দূরের কথা সহ্য করতে পারে। শেখ হাসিনার সতর্ক হওয়া উচিত।”

“তৃণমূলের কর্মীদের হাতে মার না খেতে চাইলে আওয়ামী লীগ থেকে ওবায়দুল কাদের, হাসান মাহমুদ, শেখ তাপস- এদেরকে বাদ দিন। এরা বাদেও আরো অসংখ্য হাইব্রিড আছে। এই সবগুলোকে বাদ দিতে হবে। নতুন ক্লিন ইমেজ নিয়ে আসুন,” লিখেছেন স্বর্ণা আক্তার নামে একজন।

অনেকেই দলের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর ব্যক্তিদের দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

সাহাদাৎ হোসেন নামে একজন লিখেছেন, “যারা আনফিট ,কলঙ্কিত, কলুষিত, তাদের ছেটে সাহসী ও উদ্যমী নেতাদের মূল্যায়ন করুন! চাটুকার চাটবে আর দুর্নীতি করবে আর দলকে ডুবাবে। যদি সিনিয়র/ প্রবীণ নেতাদের মূল্যায়ন করতে হয়, তাদের দলের উপদেষ্টা হিসেবে কাজে লাগান, কোন মন্তব্য ও বক্তৃতা করতে দেয়া উচিত না “

দিদারুল আলম নামে আরেকজন লিখেছেন, “আওয়ামী লীগের পেজে ওবায়দুল কাদেরের বিবৃতি যত বেশি প্রচার হবে, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তত বেশি দল ও আন্দোলন থেকে সরে পড়বে।“

“কাউয়া কাদের আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করেছে, সে এখন বিবৃতি দেবার কোন অধিকার রাখে না। কাউয়া কাদেরকে বহিষ্কার না করলে আওয়ামী লীগ আরো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেই ৬/৭ নেতার জন্য আওয়ামী লীগকে এখন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে তাদের নাম আমরা শুনতে চাই না,” মোহাম্মদ হারিস নামে একজনের মন্তব্য।

রাসেল ফেলন নামে একজন লিখেছেন, “কাউয়ায় চাইটা খাইছে এই দল, আবার সেই কাউয়া আসলে সাধারণ সমর্থক আর আম-মানুষ আওয়ামী লীগ করা বাদ দিবে।”

ওবায়দুল কাদেরের যেকোনো বক্তৃতা বিবৃতি প্রকাশ ও প্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকেই।

মো. আজহারুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, “আপনারা আসলে মানুষ হবেন না। কাউয়া কাদেরকে একটা মানুষ পছন্দ করে না। তার বিবৃতি আবারো দিচ্ছেন। এজন্য দলের এই অবস্থা।”

গত জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু হলে তা কঠোর হাতে দমন করে আওয়ামী লীগ সরকার। সরকার পতনের আগে প্রায় প্রতিদিনই বক্তব্য-বিবৃতি দিতেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারিয়ে এখন ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ।

দলটির সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়া দিল্লিতে থাকলেও ঠিক কোথায়, কীভাবে আছেন, তা প্রতিবেশী দেশটির সরকার প্রকাশ করেনি।

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশে অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে ফোনে কথা বললেও দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ওবায়দুল কাদেরের কারও সঙ্গে কথা বলার তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি।

কিছুদিন আগে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লেও সম্প্রতি আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ থেকে ওবায়দুল কাদেরের বিবৃতি প্রকাশিত হতে দেখা গেছে, যা নিয়ে তৃণমূলের কর্মীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, প্রকাশ করে চলেছেন ক্ষোভ।

আরও পড়ুন