‘রিফাইন্ড’ চক্রান্ত আওয়ামী লীগের বড় মাথাব্যথা

Sheikh Hasina-al

পরিচিত কিছু নেতা-নেত্রীকে সামনে রেখে ‘রিফাইন্ড’ বা নব্য আওয়ামী লীগকে বাজারে আনার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ‘একটি পক্ষ’। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে এলাকায় ফিরে নির্বাচনেও অংশ নিতে দেওয়া হবে।

কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তারা জানিয়েছেন, এই কাজটি সরকারের পক্ষ থেকে করছেন দেশের শীর্ষ দুইজন ব্যবসায়ী। কয়েকজন তাদের এই ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের প্রস্তাবে রাজিও হয়েছেন।

তবে দলটির বর্তমান নেতৃত্ব এই অপচেষ্টাকে ‘প্রতারণা’ এবং ‘দলকে ধ্বংস করার চক্রান্ত’ বলে মনে করে।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রিফাইন্ড বা পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ কে করবে, সেটা বড় প্রশ্ন। দলের বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের পদ ছেড়ে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ দিয়ে দল পুনর্গঠন করবেন—এমন কোনো ইঙ্গিত দলটির নেতারা এখনো পাননি।

তবে কোনো কোনো নেতার ধারণা, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে যেসব নেতার নাম আলোচনায় এসেছে, তাদের পক্ষে এটা কতটা সম্ভব বা তাদের উদ্যোগে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কতটা সাড়া দেবেন—সেই প্রশ্নও রয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি)-র নেতা হাসনাত আবদুল্লার একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে হৈ চৈ হয়েছিল।

সেই পোস্টে হাসনাত অভিযোগ করেছিলেন, সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান একান্ত বৈঠকে তাদের বলেছিলেন— সাবেক স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরী, ঢাকার সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস, সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির’ নেতাদের নেতৃত্বে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের মেনে নিতে হবে।

হাসনাত লেখেন, “আমাদের বলা হয়— রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবেন, হাসিনাকে অস্বীকার করবেন এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবেন এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবেন।”

শেখ হাসিনাসহ দলের অনেকে ভারতে আছেন। সেখান থেকে দল পুনর্গঠনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে তাতে শেখ হাসিনার ইচ্ছা ও মতামত বেশি গুরুত্ব পাবে বলে ধরে নেওয়া যায়। এর বাইরে কোনো ‘সংস্কার’ বা পরিশুদ্ধির উদ্যোগ কেউ নিলে তা আত্মগোপনে থাকা নেতাদের বাধার মুখে পড়বে বলে দেশে থাকা দলটির নেতাদের অনেকে মনে করছেন।

আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, “হাসনাতের পোস্টের আগেই আমরা এই চক্রান্তের বিষয়টি জানতে পারি। নামগুলো নতুন নয়। এভাবে তারা দেখাতে চায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেও অংশ নিতে দেওয়া হয়েছে। তবে সেটা হবে প্রতারণা। মানুষকে এভাবে ভুল বোঝানো যায় না।”

এই নেতা বলেন, “২০০৬-এ-ও সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের পরে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে অন্য কিছু নেতাকে নিয়ে একটা আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা করেছিল পশ্চিমি শক্তি। তা ব্যর্থ হয়। এ বারেও তাই হবে।”

ওই নেতার ভাষ্য, “চক্রান্তকারীরাও জানে, হাসিনাহীন আওয়ামী লীগ টিকবে না। আদতে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য।”

কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, আপাতত এই ‘রিফাইন্ড’ চক্রান্তই তাদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হবে। এলাকায় ফিরে নির্বাচনে অংশ নিতেও দেওয়া হবে। অন্যথায় তাদের ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার।

কয়েক জন বিএনপি নেতা এবং সেনাদের অনুগত ব্যবসায়ী ফোন করে এই প্রস্তাব দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

হাসিনা-ঘনিষ্ঠ এই নেতা জানান, কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া কিছু নেতাও এই দিকে ঝুঁকছেন বলে তারা খবর পেয়েছেন। এরা অন্যদেরও টানতে চেষ্টা করছেন।

ওই নেতা বলেন, “যাদের ‘ক্লিন’ বলা হচ্ছে, তাদের কেউই পরিচ্ছন্ন নন। এদের অনেকে চীন বা পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা করেন। সে সব বাঁচাতেই দলের বিরুদ্ধে চক্রান্তে রাজি হয়েছেন।”

কীভাবে এই চক্রান্তের মোকাবিলা করছে আওয়ামী লীগ? প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের ওই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, জেলায় জেলায় ভার্চুয়াল মিটিং করছেন নেতৃত্ব। সেই মিটিংয়ে শেখ হাসিনা নিজে যুক্ত হচ্ছেন। ঘণ্টা কয়েক ধরে তিনি কর্মীদের কথা শুনছেন। দলের সভাপতি বলছেন, ‘এদের দিন ফুরিয়ে আসছে। আমি যখন বেঁচে রয়েছি, শিগগিরই ফিরব। কর্মীদের উপরে হওয়া প্রতিটি নির্যাতনের বিচার করব।’

৬৪টি জেলার মধ্যে ২৩টি জেলার কর্মীদের সঙ্গে এই বৈঠক শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads