মাহফুজ ও আসিফ পদত্যাগ করছেন?

মাহফুজ আলম (বায়ে) ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (ডানে)।
মাহফুজ আলম (বায়ে) ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (ডানে)।

মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা দুই ছাত্র প্রতিনিধি মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বুধবার পদত্যাগ করবেন বলে খবর দিয়েছে বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকা।

এই দুই জনের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মাহফুজ এবং স্থানীয় সরকারের দায়িত্বে ছিলেন আসিফ।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে এমন তথ্য দিয়েছে প্রথম আলো

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে বুধ বা বৃহস্পতিবার। এর আগেই দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন বলে দৈনিকটির খবর।

এরই মধ্যে তারা সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবহিত করেছেন।

উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চাঁদাবাজি, ঘুষ কেলোঙ্কারি, রাষ্ট্রীয় সফরকালে অস্ত্র বহন এবং প্রভাব বিস্তারসহ নানা অভিযোগ ওঠেছে ছাত্র থেকে সরাসরি রাষ্ট্রের উপদেষ্টা বনে যাওয়া আসিফের নামে। তার ব্যক্তিগত সহকারীর শত কোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারি এবং বাবার টেন্ডার বাণিজ্যের খবরেও পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছেন তিনি। যদিও তিনি তার বিরুদ্ধে থাকা প্রায় সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। অভিযোগের মুখে তার একাত্ত সহকারীকে (এপিএস) সরিয়ে দেওয়া হয়।

কয়েক মাস ধরেই আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল তিনি পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এরই মধ্যে গত ৯ নভেম্বর কুমিল্লা থেকে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে ঢাকা-১০ সংসদীয় এলাকার ভোটার হয়েছেন আসিফ।  

নানা আলোচনার মধ্যে বুধবার বুধবার বেলা তিনটায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন তিনি।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্য জানানো হয়েছে, উপদেষ্টা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার ও আসিফ মাহমুদের কয়েকটি সূত্রের বরাতে ওই দৈনিক বলছে, পদত্যাগের বিষয়টি জানাতেই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হতে পারে।

প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যমুনায় বৈঠকে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়টি ওঠে। সন্ধ্যায় সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিশ্চিত হন যে দুই উপদেষ্টা বুধবার পদত্যাগ করছেন।

এর আগেও অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

তবে তাদের মধ্যে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন করবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। আর আসিফ সময় চেয়েছিলেন।

পরে গত মাসের মাঝামাঝিতে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আবারও তাদের তাগাদা দেওয়া হয়েছিল।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন সরকারে জায়গা পান। এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় পান।

আসিফ মাহমুদকে প্রথমে শ্রম উপদেষ্টা করা হলেও পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পাঠানো হয় তাকে। মাহফুজ আলম শুরুতে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যাত্রা শুরু করে। নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে দলটির আহ্বায়ক হন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন মাহফুজ আলম।

অবশ্য মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের এনসিপিতে কোনো পদে না থাকলেও দলটিতে তাদের প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এদিকে আসিফ মাহমুদ যে আসনের ভোটার হয়েছেন সেই ঢাকা-১০ আসনে এনসিপি এবং বিএনপি- দুই দলই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ফলে তিনি স্বতন্ত্র নাকি অন্য কোনো দল থেকে ভোট করবেন- সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।

মাহফুজ আলমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর-১ আসনে। আসনটিতেও বিএনপি দীর্ঘদিন দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলেও সোমবার বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তাকে ওই আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ফলে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে মাহফুজের ভোট করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠনের চেষ্টায় আছে। এরই মধ্যে এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ে একটি নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করেছে।

আরও পড়ুন