গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল থেকে কোমল পানীয় কোকাকোলা বিক্রির অভিযোগ বিভিন্ন স্থানে রেস্টুরেন্টে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। পাশাপাশি থাকা আন্তর্জাতিক জুতার ব্র্যান্ড বাটাতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে।

কক্সবাজার
কক্সবাজার বিক্ষোভ মিছিল থেকে পর্যটন জোনে অবস্থিত কেএফসিসহ অন্তত পাঁচটি রেস্তোরাঁ ভাঙচুর করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দান থেকে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল হলিডে মোড় ঘুরে লাবণী হয়ে কলাতলী যায়। এসময় ভাঙচুর চালানো হয়।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ আলী বলেন, ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের সবসময় সংহতি রয়েছে। আজকের বিক্ষোভ মিছিলেও আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। তবে, ইসরায়েলি পণ্য রাখার অজুহাতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক কেএফসি, পিৎজা হাটের পাশাপাশি কাঁচা লংকা, পানসি রেস্টুরেন্ট এবং মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালায়। এসময় কাচ লেগে কয়েকজন পর্যটক আহত হন।
তিনি আরও বলেন, “অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা কক্সবাজারের পর্যটনের জন্য অশনিসংকেত। আমরা ইসরায়েলের পণ্য যত সম্ভব বর্জন করছি। তারা যদি সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলে বলতো, তাহলে সুন্দর একটা সমাধান হতো। ভাঙচুর করে পর্যটকদের মাঝে একটা আতঙ্ক তৈরি করা হলো। আহতও হলো কয়েকজন। বিষয়টি প্রশাসনের তদারকি করা উচিত।”
কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনের সুগন্ধা লংবিচ এলাকায় তিনতলা ভবনের ওপর তলায় কেএফসি এবং দ্বিতীয় তলায় পিৎজা হাটের অবস্থান। ভাঙচুরের পর বেশকিছু কাচ ভেঙে পড়ায় বন্ধ রয়েছে পিৎজা হাট।
কক্সবাজার পিৎজা হাটের ইনচার্জ পারভেজ মিয়া বলেন, ‘মূলত কেএফসির ওপর মানুষের ক্ষোভ বেশি। তারা হঠাৎ মিছিল থেকে কেএফসি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারা শুরু করে। তবে কেএফসি ওপরের ফ্লোরে হওয়ার এগুলো এসে পড়ে পিৎজা হাটে। আমাদের বেশকিছু কাচ এবং যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আপাতত রেস্তোরাঁ বন্ধ রেখেছি।’
কাঁচা লংকা রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ডে সেভেন আপের বিজ্ঞাপন ছিল। এই অজুহাতে আমাদের রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালানো হয়। আমরাও তো ফিলিস্তিনকে সাপোর্ট করি। আমাদের বললে আমরা সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলতাম। রেস্তোরাঁ ভাঙচুর কোনোভাবেই ফিলিস্তিনের পক্ষে সাপোর্ট প্রমাণ করে না।’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান বলেন, মিছিলের দৈর্ঘ্য বিশাল হওয়ায় মাঝখান থেকে কিছু অতি উৎসাহী লোকজন ইসরায়েলি পণ্য রাখার অভিযোগে কয়েকটি রেস্তোরাঁয় হামলা করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সিলেট
ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল থেকে কোমল পানীয় কোকাকোলা বিক্রির অভিযোগ এনে সিলেট নগরীতে ফাস্ট ফুড চেইন কেএফসিতে ভাঙচুর চালানো হয়। পাশাপাশি থাকা আন্তর্জাতিক জুতার ব্র্যান্ড বাটাতেও হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জিয়াউল হক জানান, সোমবার বিকাল ৩টার দিকে নগরীর মিরবক্সটুলার কেএফসি এবং দরগা গেইট এলাকার বাটার শো-রুমে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বিক্ষুব্ধ জনতা সিলেট নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকায় কেএফসি রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর করেছে। এ সময় রেস্টুরেন্টের ভেতরে থাকা ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কোমলপানীয় নষ্ট করা হয়।
প্রত্যক্ষর্শীরা জানান, গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে একটি মিছিল কেএফসির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু লোক সেখানে ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর শুরু করে। তারা কেএফসির ভেতরে থাকা বিভিন্ন কোমল পানীয় রাস্তায় ফেলে নষ্ট করে। তারা লাঠি দিয়ে গ্লাস ভেঙে ফেলে। ভাঙচুরের পর কেএফসি বন্ধ রয়েছে।
একই মিছিলের একটি অংশের লোকজন পাশের সড়কের বাটার শো-রুমে গিয়ে হামলা চালায় এবং সেখানকার গ্লাস ভাঙচুর করে। এ সময় দোকানের কর্মচারীরা ভয়ে বের হয়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ভাঙচুরের সময় বিক্ষুদ্ধরা অভিযোগ করেন, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যাকারী ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের ঠাঁই হবে না এই দেশে। এই কেএফসিতে ইসরায়েলি বিভিন্ন কোমল পানীয় বিক্রি করা হচ্ছে। এটি মেনে নেওয়া হবে না।
তারা বলেন, চলমান হামলা শুধু একটি অঞ্চলের নয়; সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রতি আঘাত। এই অমানবিকতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চট্টগ্রাম
বিক্ষোভ মিছিল থেকে চট্টগ্রামে কেএফসির দুটি রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়েছে।
সোমবার বিকালে ‘মার্চ ফর গাজা’ মিছিল থেকে নগরীর নাসিরাবাদ ও চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া জিইসি মোড়ে আন্তর্জাতিক কোমল পানীয় কোকাকোলার সাইনবোর্ডও ভাঙচুর করা হয়।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিকালে নগরীর ষোলশহর থেকে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সংহতি জানিয়ে মিছিল বের করা হয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন বয়েসী লোকজন অংশ নেন।
মিছিলে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে ইসরাইলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মিছিলটি জিইসি মোড়ের দিকে আসার সময় ভেতর থেকে কিছু লোক নাসিরাবাদ সানমার ওশান সিটির পাশের ভবনে কেএফসি রেস্তোরাঁয় ঢিল ছুড়লে সামনের কাচ ভেঙ্গে যায়।
সেখান থেকে কিছু লোক জিইসি মোড়ে জামান হোটেলের কোকোকোলার সাইনবোর্ড ও ভাঙচুর করে। এসময় রেস্তোরাঁটিরও সামনের অংশের কাচ ভেঙ্গে যায়।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান বলেন, “ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে করা মিছিল থেকে কেএফসি রেস্টুরেন্টে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে রেস্টুরেন্টটি বন্ধ ছিল।”
চেরাগী পাহাড় মোড়েও কেএফসির একটি রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ড ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
কোতোয়ালী থানার ওসি আব্দুল করিম বলেন, মিছিল থেকে সাইনবোর্ডে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। ভেতরে কোনো সমস্যা হয়নি।
গাজীপুর
গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় বাটা শো-রুমসহ কয়েকটি দোকানের সামনে বিলবোর্ড, ব্যানার, ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নূর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন বলেন, বিক্ষোভকারীরা বিকালে বাটা শো-রুমের বাইরের ব্যানার ভাঙচুর করেছে। তবে শো-রুমের ভেতরে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা ৩টার দিকে গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকা থেকে সর্বস্তরের মুসলিম তৌহিদি জনতার ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
এ সময় সেখানে বাটা শো-রুমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ জানান, উত্তেজিত জনতা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বোর্ড বাজার এলাকায় সেভেন আপ সম্বলিত ব্যানার বিলবোর্ড ভাঙচুর করেছে।
“ইসরায়েলের পণ্য যেসব দোকানে রয়েছে সেসব তারা রাখবে না বলেছে। এসব পণ্য বর্জন করতে সড়কের পাশে ৩-৪টি দোকানের সামনে বিলবোর্ড, ব্যানার ভাঙচুর করে ছিড়ে ফেলেছে। তবে কোনো দোকান ভাঙচুর করা হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে।”
অপরদিকে বিক্ষোভকারীরা গাজীপুর শহরের শিববাড়ির আশপাশে থাকা বাটা দোকানের সামনে অবস্থান নিতে গেলে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় বলে জানান সদর থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজবাড়ী মাঠ এলাকায় এসে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
এছাড়া বাদ আসর গাজীপুর কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর জামায়াতে ইসলামী।
বগুড়া
ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বের হওয়া মিছিল থেকে বগুড়ার বাটার শো-রুমে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীরা শহরের সাতমাথায় এসে বাটার শো-রুমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং গ্লাস ভাঙচুর করে।
প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তারা সেখানে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের দাবিতে স্লোগান দেয় এবং ভাঙচুর চালায়। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন। কিছুটা দূরে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও বিপুল সংখ্যক মানুষের সামনে তাদের কিছুই করার ছিল না।