শেখ হাসিনা ও টিউলিপের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবীদের নিন্দা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের দণ্ডাদেশের প্রক্রিয়া নিয়ে নিন্দা ও সমালোচনা করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবীরা।

ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন’স হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউট (আইবিএএইচআরআই) এক বিবৃতিতে বলেছে, আগের প্রশাসনে সংঘটিত গুরুতর অপরাধসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অপরিহার্য।

“তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায্য বিচারের সমস্ত প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে। সব অবস্থায় মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা করে আইবিএএইচআরআই।”

“বিচারে স্বীকৃত আইনি মানদণ্ডের ঘাটতি রয়েছে” উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “যা গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণের ইঙ্গিত দেয়। এটি এমন এক বিচারব্যবস্থা তুলে ধরে, যা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।”

চব্বিশের জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এ ছাড়া শেখ রেহানার প্লট দুর্নীতির মামলায় তার মেয়ে ব্রিটিশ লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে দুই বছরের সাজা শুনিয়েছে ভিন্ন একটি আদালত।

এসব মামলা বিচার চলেছে আসামি হাসিনা পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে।

প্লট দুর্নীতি মামলায় টিউলিপের বিরুদ্ধে সাজার রায়ে বলা হয়, তিনি তার মা রেহানাকে প্লট পাইয়ে দিতে খালা শেখ হাসিনাকে ‘প্রভাবিত’ করেছিলেন।

যদিও এসব অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন উপহারের ফ্ল্যাট নিয়ে সমালোচনার মধ্যে যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে আসা টিউলিপ।

শেখ হাসিনা ও টিউলিপের বিরুদ্ধে রায়ের পর এর আগেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা উষ্মা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। খোদ জাতিসংঘের কাছ থেকে আসামিদের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের সমালোচনা করেছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। এর পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন। ঢাকার পক্ষ থেকে তার প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানালেও দৃশ্যমান সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি।

দ্বৈত পাসপোর্টধারী বোন শেখ রেহানা একইসময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে গেলেও পরবর্তীতে তিনি ব্রিটেনে পাড়ি জমান। আর টিউলিপ স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যেই থাকেন, তিনিও দেশটির নাগরিক।

তাদের অনুপস্থিতিতে ‘পলাতক’ দেখিয়ে এসব মামলার বিচার কাজ চলে; দেওয়া হয়নি আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ বলেছেন, “এই পুরো প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের’ ফলাফল যেমন অনুমানযোগ্য ছিল, তেমনি এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”

আইবিএএইচআরআই বিবৃতিতে বলেছে, শেখ হাসিনার পক্ষে একটি আন্তর্জাতিক আইনি দল তার বিচারের আইনি প্রক্রিয়ার দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেছেন।

অভিযোগ গঠনের আগে আনু্ষ্ঠানিকভাবে না জানানো, পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ করতে না পারা, রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করা হলেও তার সঙ্গে আসামির কোনো যোগাযোগ ছিল না বলেও উল্লেখ করা হয়।

“এমন বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচারের মানদণ্ড পূরণ করে না। ফলে দণ্ড কার্যকর করলে তা ন্যায্য বিচার ছাড়াই সংঘটিত হবে এবং সেটি হবে মানুষের জীবন বা বেঁচে থাকার অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন।”

টিউলিপের বিষয়ে আইবিএএইচআরআই এর সহ-সভাপতি মার্ক স্টিফেনস বলেন, “তার মামলায় আইনজীবীদের হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া গেছে, যা সুষ্ঠু বিচারের অধিকারের মর্মমূলে আঘাত এবং বাংলাদেশের আইনের শাসনকে দুর্বল করে। বিচারব্যবস্থায় এই ধরনের চর্চা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার গুরুতর অপব্যবহার তুলে ধরে।

“আইন পেশার ব্যক্তিরা নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিশোধ না নিয়ে ন্যায়বিচারের প্রতি সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে হবে।”

মৃত্যুদণ্ডের ওপর আনুষ্ঠানিক স্থগিতাদেশ জারি এবং পরে স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত করারও আহ্বান জানিয়েছে আইনজীবীদের সংগঠনটি।

আরও পড়ুন