আওয়ামী লীগের সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন- সোশাল মিডিয়ায় এমন খবর চাউর হতেই অভিনেত্রী, কণ্ঠশিল্পী মেহের আফরোজ শাওনকে ধরে নিয়ে গেল গোয়েন্দা পুলিশ।
শাওন জনপ্রিয় লেখক প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী। শাওনের মা তহুরা আলী এক সময় আওয়ামী লীগের নারী সংসদ সদস্য ছিলেন। শাওন গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী ছিলেন, তবে তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দেখা যায়নি কখনও।
শাওনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের। আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে বিএনপিসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগই আনা হতো। এখন মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথে হাঁটছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ঢাকার ধানমণ্ডির বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ শাওনকে তুলে নিয়ে যায়। হুমায়ুন মারা যাওয়ার পর দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে থাকেন শাওন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাকে নেওয়ার পর শুরুতে পুলিশ কর্মকর্তারা এবিষয়ে কথা বলতে চাইছিলেন না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে সে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সে অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে।”
কী ষড়যন্ত্রে শাওন জড়িত ছিলেন, সে বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। তাকে নির্দিষ্ট কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে কি না, সে বিষয়ে রেজাউল বলেন, এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটি পরে জানানো হবে।
ঢাকায় শাওনকে গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা আগেই জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দি রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শাওনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পূর্তির দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ডাকে বুধবার রাত থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ চলছে।
ভারতে থাকা শেখ হাসিনা বুধবার রাতে লাইভে আসার ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথমে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা হয়। ঐতিহাসিক এই ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার স্বামীর বাড়ি সুধা সদনেও ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ঘটে। এরপর বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় ভাংচুর।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন বলে ইউনূস সরকারের অভিযোগ।
সম্প্রতি ফেইসবুকে খবর ছড়ায়, ধ্বংসাত্মক কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করার মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতা দখলে নেওয়ার লক্ষ্য পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। গত ১৫ জানুয়ারি কলকাতার হোটেল পার্কে এজন্য একটি সভা হয়েছে। সেই সভায় বিভিন্নজনকে নানা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়ে কিংবা বিদেশে পালিয়ে থাকায় কথিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশে শাওনকে আওয়ামী লীগের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও ফেইসবুকে ছড়ায়।
তারপর থেকে সোশাল মিডিয়ায় আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন শাওন। তার আগের বিভিন্ন পোস্ট নিয়ে ট্রল হতে থাকে। শেষে তিনি আটকই হলেন।
শাওন শৈশবেই সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। নৃত্যশিল্পী হিসেবে তিনি নতুন কুঁড়িতে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে হুমায়ূন আহমেদের নক্ষত্রের রাত ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয়ের শুরু।
হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে শীলা আহমেদের বন্ধু ছিলেন শাওন। পরে হুমায়ুন মেয়ের বন্ধু শাওনকে বিয়ে করলে তা নিয়ে সমালোচনা ওঠে।
শাওনের বাবা মোহাম্মদ আলী একজন প্রকৌশলী ছিলেন। তার মা তহুরা আলী ১৯৯৬-২০০১ ও ২০০৯-২০১৪ মেয়াদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
শাওন রাজনীতিতে না জড়ালেও গত সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তা না পেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিও হতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে তার কোনো আশাই পূরণ হয়নি।