‘সব বানোয়াট’ দাবি শেখ হাসিনার, সরকারকে হেগে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ

ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: রয়টার্স
ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়ার পর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই আদালত ‘কারসাজিপূর্ণ’, ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ এবং ‘রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত’।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ভারতে নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অভিযোগ সত্য হলে এগুলো হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) উপস্থাপন করা হোক, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের তো সে সাহস নেই।”

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রাজসাক্ষী হওয়া আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।

বিবৃতিতে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, একটি অনির্বাচিত সরকার তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে যাদের কোন গণতান্ত্রিক বৈধতা নেই।

তিনি দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে থাকা প্রভাবশালী উগ্রপন্থী শক্তি ‘বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই রায় ব্যবহার করছে।

মৌলবাদী শক্তির মূল উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা বলেও অভিযোগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

শেখা হাসিনা বলেন, “সাধারণ মানুষ এই ধরনের রাজনৈতিকভাবে সাজানো রায় কখনওই মেনে নেবে না। এটি গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টা।”

বিবৃতিতে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের সহিংসতা সম্পর্কিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে উপস্থাপিত অডিও–ট্রান্সক্রিপ্টসহ যেসব প্রমারণের কথা বলা হচ্ছে তা ‘খণ্ডিত’, ‘অপ্রাসঙ্গিক’ এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে সেসবে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

“সহিংসতার সময় মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিল, রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়।”

জুলাই আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যায় উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দেওয়া, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয় শেখ হাসিনা ও বাকি দুই আসামিদের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে চার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে ট্রাইব্যুনাল।

আওয়ামী লীগের লেটার প্যাডে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে সঠিকভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং তাছাড়া তিনি নিজের পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ করতেও পারেননি।

“আইসিটি কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক বা নিরপেক্ষ নয় এবং রায় আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল,” বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।  

২০২৪ সালের সহিংসতাকে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শুরুতে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। তবে পরবর্তী সময়ে সরকারি স্থাপনা, থানা, মানুষের বাড়িঘর, অস্ত্রাগার ও যোগাযোগ অবকাঠামোতে হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতেই আইসিটি ওই রায় দিয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

দলটির অভিযোগ, তাদের সমর্থকদের ওপর হামলার কোন বিচার হয়নি, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ও নারীর অধিকার গুরুতর হুমকির মুখে, মৌলবাদী শক্তি প্রশাসনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে।

একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ভয় দেখানো, আটক ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে, অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে ওই বিবৃতিতে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads