সারা বাংলাদেশে একযোগে শুরু হলো এইচএসসি পরীক্ষা। এতে অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষা শুরুর এই খবরটি সব সংবাদমাধ্যমেই এসেছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর সেই খবর ছাপিয়ে যায় এক পরীক্ষার্থীর কান্নার দৃশ্যে।
ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, দেরিতে আসায় ওই কিশোরীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আর সেই দেরির কারণ জানার পর নেটিজানদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
বাবাহারা এই কিশোরীর অসুস্থ মাকে হাসপাতালে রেখে আসতে গিয়ে দেরির এই কারণটি কেন বিবেচনায় নিল না কর্তৃপক্ষ, সেই ক্ষোভ সবাই উগরে দিচ্ছেন ফেইসবুকে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেয়ে অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইউনিফর্ম পরা ওই তরুণী। কিছুক্ষণ ধরে অনুনয়-বিনয়ও করেন। কিন্তু ঢুকতে না পেরে ফিরে যান।
ভিডিওতে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত একজনকে বলতে শোনা যায়, তাদের হাত নিয়মের কাছে বাঁধা।
আরটিভির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এইচএসসি পরীক্ষার্থী এই মেয়েটির বাবা নেই। মায়ের বৃহস্পতিবার সকালেই স্ট্রোক হয়। পরিবারে দায়িত্বশীল কেউ নেই বলে মাকে নিয়ে তাকেই হাসপাতালে ছুটতে হয়েছিল। হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা কেন্দ্র মিরপুর বাঙলা কলেজে।
কিশোরীর এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকে একটি পোস্ট শেয়ার করছেন। এই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ছে ফেইসবুকের ওয়ালে ওয়ালে।

তাতে বলা হয়, “একজন মানুষ বোর্ড পরীক্ষার দিনে নিশ্চয়ই রঙঢঙ করে সময় নষ্ট করে না। অসুস্থ মাকে হাসপাতালের বেডে রেখে পরীক্ষার হলে ছুটে আসা— কিন্তু বস্তাপচা সিস্টেম মেয়েটির একটা বছর নষ্ট করে দিল। কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেবে— লেট করে আসলে প্রবেশের সুযোগ নেই। কিন্তু মানবিকতার চেয়ে নিয়ম বড় না। একটা বাচ্চা মানুষ মাকে হাসপাতালের বেডে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে পেরেছে, আর আপনারা যত নিয়ম ফলান।
“যত নিয়ম, যত সিস্টেম সব বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য, সব অসহায়দের জন্য। আর চোর-বাটপার, টাকা পাচারকারী, প্রভাবশালীদের জন্য সব জায়েজ। মানবিকতার চেয়ে মহান আর কি! এই প্রত্যয়ী মেয়েটিকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিলে দেশটা কি রসাতলে যেত? আর ওর পরীক্ষা না দেওয়ায় দেশটা কি সুইডেন হয়ে গেছে?”
ভিডিওতে তরুণীর ইউনিফর্ম দেখে বোঝা যায় যে তিনি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। কিন্তু তার বিষয়ে আর কিছু কোনও সংবাদ প্রতিবেদনে আসেনি। তার মায়ের সর্বশেষ অবস্থা কী, তাদের বাসার কোনও তথ্যও আসেনি কোথাও।
এই তরুণীর পরীক্ষা দিতে না পারা নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কিংবা শিক্ষা দপ্তরের কোনও কর্মকর্তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি কোনও সংবাদমাধ্যমে।
বরাবরের মতোই বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এইচএসসি, দাখিল ও এইচএসসি (ভকেশনাল) পরীক্ষা শুরু হয়। তিন পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন।
নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরু হওয়ার কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে ঢুকতে হয়। তবে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে ঢাকা বোর্ডের নির্দেশিকায় বলা আছে, কোনো পরীক্ষার্থী দেরি করলে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশেষ বিবেচনায় তার সম্পর্কিত সব তথ্য রেজিস্ট্রার খাতায় লিখে ঢোকার অনুমতি দিতে পারবেন। তবে ওই রেজিস্ট্রার খাতা অবশ্যই বোর্ডে জমা দিতে হবে।
বাঙলা কলেজে ওই কিশোরীর ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ কেন নেওয়া হলো না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সিআর আবরার) এদিন সকালে মিরপুরেরই ভাসানটেক সরকারি কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তবে ওই পরীক্ষার্থীকে নিয়ে তারও কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।