দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেপ্তার

Yoon Suk Yeol

কয়েক সপ্তাহের অচলাবস্থার পর দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে গ্রেপ্তার করেছে তদন্তকারীরা।

সামরিক আইন জারির চেষ্টার পর বিদ্রোহের অভিযোগে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর ইউনকে দুর্নীতি তদন্ত অফিসে (সিআইও) নেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘রক্তপাত’ এড়াতে এই অবৈধ তদন্তকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছেন।

পরোয়ানা জারির পর তার নিরাপত্তা কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী অচলাবস্থার পর তদন্তকারীরা মই ব্যবহার করে ইওলের বাসভবনে ঢোকেন।

তদন্তকারীরা এই মাসের শুরুতে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলেও প্রতিরোধের মুখে তারা ব্যর্থ হন।

এটি দেশটির ক্ষমতায় থাকা প্রথম কোনো প্রেসিডেন্টের গ্রেপ্তারের ঘটনা। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সাবেক নেতাদের বিচার ও কারাবন্দি করার নজির রয়েছে।

এরপর ইউনের অভিশংসন ট্রায়ালের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে তিনি ক্ষমতায় থাকবেন নাকি অপসারিত হবেন।

ট্রায়াল গতকাল শুরু হলেও তার অনুপস্থিতিতে মাত্র চার মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

গত ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারির পর আইনপ্রণেতারা তার অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। এরপর থেকে ইউন পাহাড়ি এলাকায় তার বাসভবনে অবস্থান করছিলেন।

ইউন বলেন, বুধবার ভোর থেকে প্রায় তিন হাজার পুলিশ কর্মকর্তা তার বাসভবনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় সহিংসতা এড়াতে তিনি জেরার মুখোমুখি হতে সম্মত হয়েছেন।

সিআইও এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ইঙ্গিত করে ইউন এক বিবৃতিতে বলেন, “অবৈধ তদন্ত হওয়া সত্ত্বেও অনাকাঙ্ক্ষিত রক্তপাত এড়াতে আমি সিআইও এর তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

ইউন তার বাসভবন ছেড়ে একটি গাড়ি বহরে করে সিআইও কার্যালয়ে পৌঁছান। ইউনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কর্তৃপক্ষের হাতে ৪৮ ঘণ্টা সময় রয়েছে। এরপর পরোয়ানা চাইতে হবে যাতে তাকে ২০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা যাবে।

এদিকে ইউনের আইনজীবীরা পরোয়ানাটিকে অবৈধ দাবি করে বলছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যে আদালত জারি করেছে তার এটি করার এখতিয়ার নেই। এছাড়া তদন্ত কমিটির কোনো আইনি বৈধতা নেই বলে দাবি তাদের।

ইউনের সামরিক আইনের ঘোষণায় নজিরবিহীন রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর গত ১৪ ডিসেম্বর আইনপ্রণেতারা তাকে অভিশংসন করে দায়িত্ব থেকে অপসারণের পক্ষে ভোট দেন।

অন্যদিকে তাকে অভিশংসিত করে অপসারণ করা হবে নাকি তার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা হবে তা খতিয়ে দেখছে দেশটির সংবিধানিক আদালত।

ভোরের দিকে ইউনকে গ্রেপ্তারের জন্য যখন জড়ো হয় তখন সারা দেশেরে দৃষ্টি সেখানেই ছিল। সেখানে পুলিশ ও ইউনের সমর্থকদের মধ্যে অল্প-বিস্তর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে বলেও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

এছাড়া সেখানে প্রতিবাদকারীরাও জড়ো হয়েছিল ‘চুরি বন্ধ কর’ স্লোগান যুক্ত প্ল্যাকার্ডা নিয়ে।

ইউনের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করতে আসা ৭০ বছর বয়সী কিম উ-সুব বলেন,“আমাদের দেশকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখা খুব দুঃখজনক।”

যদিও জরিপগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার বেশিরভাগ মানুষ ইউনের সামরিক আইন ঘোষণাকে অসমর্থন করে তার অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছে।

তবে দেশের এই রাজনৈতিক স্থবিরতা তার সমর্থক ও দল পিপল পাওয়ার পার্টিকে (পিপিপি) সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে পুনর্জীবিত করেছে।

সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ রিয়েলমিটার জরিপে পিপিপির সমর্থন ছিল ৪০.৮%, আর প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থন ছিল ৪২.২%; গত সপ্তাহের তুলনায় ১০.৮% ব্যবধান কমেছে।

সূত্র-রয়টার্স/বিবিসি

আরও পড়ুন