ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব তাকে জামিন দেন। যদিও এই জামিনের বিরোধীতা করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আসামি।
ছাড়া পাওয়ার পর ‘তৌহিদি জনতা’র নাম একদল মানুষ ফুলের মালা, সাদা পাগড়ি পড়িয়ে আর হাতে কোরআন শরিফ দিয়ে আসিফকে সংবর্ধনা দেন।
একজন ইভটিজারকে এভাবে জামিন এবং সংবর্ধনা দেওয়ার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ট্রল হচ্ছে। কেউ বলছেন, “জামিনের মাধ্যমে দেশে ইভটিজারদের উৎসাহিত করা হয়েছে।” আরেকজন প্রশ্ন করেছেন, “একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে ইভটিজারকে জামিন দিতে পারলেন?” কেউ লিখেছেন “বাংলাদেশের প্রথম সফল ইভটিজার শরিফ”। কারো মন্তব্য “মবের রাজ্যে সবই সম্ভব।? এমন হাজার হাজার মন্তব্যে ছেয়ে গেছে সামাজিক মাধ্যম।
ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে বুধবার সন্ধ্যায় মোস্তফা আসিফকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা-পুলিশ। হেনস্তার শিকার ছাত্রী এ বিষয়ে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেন এবং পরে শাহবাগ থানায় মামলা করেন।
হেনস্তার শিকার ওই ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে অভিযুক্ত আফিসের ছবি দিয়ে লেখেন, “এই লোকটা আজ আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই ইত্যাদি। তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল। পরে তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি, আপনি কোন হলে থাকেন, কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন। বলেন, তিনি এই ক্যাম্পাসের কেউ না।”
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওই ব্যক্তি ছাত্রীটিকে তার পোশাক নিয়ে রাস্তায় হেনস্তা করেন। ছাত্রীটি এ নিয়ে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন এবং পরে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেন। পরে বিকেলে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তকে শনাক্ত করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে। এ সময় ওই ব্যক্তি ছাত্রীটিকে হেনস্তার করার কথা স্বীকার করে। পরে তাকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয় এবং গ্রন্থাগারকে এ বিষয়ে জানানো হয়।
কিন্তু আসিফের মুক্তির দাবিতে নিজেদের ‘তৌহিদি জনতা’ পরিচয় দেওয়া একদল বিক্ষুব্ধ জনতা বৃহস্পতিবার রাত থেকে শাহবাগ থানার প্রবেশপথ ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। অন্তত ৮ ঘণ্টা তারা শাহবাগ থানা এলাকায় অবস্থান করে।
বেশিরভাগ তরুণদের নিয়ে গঠিত এই বিক্ষুব্ধ জনতা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে থানার সামনে জড়ো হয় এবং আধা ঘণ্টা পর থানার ভেতরে ঢুকে পড়ে। তাদের কয়েকজন শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষের ভেতর থেকে ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে।
আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে ‘বৈষম্যবিরোধী কারামুক্তি আন্দোলন’-এর যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দেন, একাধিকবার ফেসবুকে লাইভে যান। একটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি আটক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। আটক ওই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের একজন চুক্তিভিত্তিক বাইন্ডার হিসেবে কর্মরত।
দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিক্ষুব্ধ জনতা সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে। একপর্যায়ে দায়িত্বরত অফিসার এসআই একরামুল ইসলাম জনতাকে জানান, কাউকে আটক বা মুক্তির বিষয়ে তার কোনো আইনি ক্ষমতা নেই।
দায়িত্বরত কর্মকর্তা বারবার জনতাকে ‘মব’ তৈরি না করার অনুরোধ জানান। এর জবাবে জনতা বলে, “আমরা কোনো মব তৈরি করিনি। আমাদের এক সহযোদ্ধাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার প্রতি সংহতি জানাতেই আমরা এসেছি।”
আলতাফ হোসেন তার এক ফেসবুক লাইভে বারবার বলেন, “আমি এখানে (থানায়) আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা জানাতেই এসেছি।”
শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা একরামুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, রাত ২টা ১৫ মিনিটের পর জনতা থানা থেকে বেরিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেয়।
থানার মধ্যে ‘তৌহিদি জনতা’র নামে ‘মব’ তৈরি করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উল্টো তাদের দাবি মেনে এক হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন হয় অভিযুক্ত আসিফের।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে নারী নিপীড়নের ঘটনা ‘বেড়েই চলেছে’ মন্তব্য করে বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
এক বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, “জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ন্যাক্কারজনকভাবে নারীবিদ্বেষী কথা বলেছেন এবং সেটির সঙ্গে ধর্ম ও আইনের ভুল-ভাল ব্যাখ্যা কৌশলে যুক্ত করে দিয়েছেন।”
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে বিবৃতিতে, যেখানে নারী নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনাও তুলে ধরা হয়।