চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী মাসের মাঝামাঝিতে দেশে ফিরতে পারেন। তবে ছেলে তারেক রহমান তার সঙ্গে দেশে ফিরছেন না বলেই ইঙ্গিত মিলেছে।
লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউকে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এমন ইঙ্গিত দেন বলে জানিয়েছে বাসস।
মালেক বলেন, “আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম ঈদ করে দেশে যেতে। তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। এখন তিনি ঈদের পরে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন।”
ডাক্তাররাও সে অনুপাতে প্রস্তুতি নিয়ে খালেদা জিয়াকে সেভাবেই চিকিৎসা দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে এখানে ফ্লাইটেরও একটি বিষয় আছে। ফ্লাইট যদি নির্ধারিত সময়ে না পাওয়া যায়, তাহলে দুই এক দিন এদিক সেদিক হতে পারে। তবে ম্যাডাম দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সাংবাদিকদের মালেক বলেন, “আমাদের লিডারের দেশে যাওয়ার সময় নিয়ে এখনো নিশ্চিত বলতে পারছি না।
“ম্যাডাম খালেদা জিয়া যাওয়ার কিছু দিন পরে হয় তো তিনি দেশে ফিরবেন। এক সাথে দুই জন অবশ্যই যাবেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি।”
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালে তারেক সপরিবারে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর পর আর ফেরার কথা ভাবেননি। কারণ এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় সাজার রায় হয়। আওয়ামী লীগ আমলে পাসপোর্টও নবায়ন করতে পারেননি।
তারেকের অনুপস্থিতির মধ্যে বিএনপির জন্য বড় আঘাত হয়ে আসে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়া। জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি কারাগারে যাওয়ার পর জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়ও তার সাজার রায় হয়।

দুই সাজা নিয়ে বন্দি থাকা অবস্থায় কোভিড মহামারি দেখা দিলে ২০২০ সালের মার্চে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়ে বাসায় থাকতে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা তারপর নানা রোগে ভুগে বাসা-হাসপাতালেই দিন কাটাচ্ছিলেন। বিদেশ যেতে চাইলেও সরকার অনুমতি দেয়নি। ছেলে তারেকও মাকে দেখতে দেশে ফেরেননি।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে যান। কিছুদিন হাসপাতালে থাকার পর মাকে লন্ডনের নিজের বাসায় নিয়ে রেখেছেন তারেক। মা-ছেলে দুজনে এখন একসঙ্গে আছেন, দলও চালাচ্ছেন ভার্চুয়ালি।
সাম্প্রতিক সময়ে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে দূরত্ব বেড়েছে বিএনপির। যাদের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটেছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তো মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপিকে আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে দেশে তারেক রহমানের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা।
এমন অবস্থায় খালেদা জিয়া আগামী মাসের মাঝামাঝিতে দেশে ফিরবেন বলে জানা গেলেও তারেক কবে ফিরছেন তা নিয়ে অস্পষ্টতা থেকেই গেল।