তবে কি ‘নভেম্বরেই’ ফিরছেন তারেক রহমান

লন্ডনে মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমান।
লন্ডনে মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমান।

বেশ কয়েকমাস ধরেই তারেক রহমানের ফেরার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ‘নভেম্বরেই ফিরছেন’- দলের পক্ষ থেকে এমনটি আগেও বলা হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু তিনি ঠিক কবে ফিরছেন সেই দিনক্ষণ এখনও অজানা, যেমনটি এখনও অজানা বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের সুর্নির্দিষ্ট তারিখ!

অবশ্য মঙ্গলবার একটি অনলাইন পোর্টালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে চলতি নভেম্বরের শেষ দিকে দেশে ফিরছেন বলে আবারও আশ্বস্ত করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ইনসাইড আউটে তিনি বলেছেন, “আমরা আশা করছি এই মাসের শেষ নাগাদ তিনি দেশে ফিরতে পারেন। নাহলে কমপক্ষে দুয়েকদিন এদিক-ওদিক হতে পারে হয়ত, আশা করছি।”

এর আগে বেশ কয়েকবার বিএনপির কর্মীরা আশা করলেও তাদের মনের আশা পূরণ হয়নি; লন্ডন থেকে মায়ের সঙ্গে ফিরতে পারেন এমনটি শোনা গেলেও শেষমেশ সে পথে হাঁটেননি দলের ভবিষ্যতের কর্ণধার তারেক রহমান।

তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমান দেশে ফেরার পর তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি, যাতে উল্লেখ করা হয়েছিল জোবাইদা রাজনীতিতে জড়িত না হলেও তারেকের স্ত্রী হিসেবে তার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।

তারেক রহমান কেন ফিরছেন না, তার একটি ধারণা পাওয়া যায় ওই চিঠি থেকে। স্ত্রী জুবাইদার মতো তারও জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে- এমন ধারণাই দেওয়া হয়েছে নানাভাবে।

তারেকের জন্য যদি তার স্ত্রীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, তাহলে তার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করাই যায়। তাহলে প্রশ্ন উঠবে ঝুঁকিটি কোন দিক থেকে? বিএনপি অবশ্য কখনও এবিষয়টি খোলাসা করেনি। তাতে দলটির কর্মীদের মধ্যে রয়েছে হতাশা।

বৈরী প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হলেও  দলটির নেতারা এক কথাই বলে আসছেন, ফেরার ‘পরিবেশ’ হলেই ফিরবেন তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তারেক রহমান। তার আগে মা প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় প্রশাসনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। হাওয়া ভবনে বসে তিনি সব কিছু চালাতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়ার পরের বছর রাজনৈতিক সমঝোতায় মুক্তি পাওয়ার পর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য তারেক লন্ডন চলে যান, তারপর আর ফেরেননি।

এর মধ্যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চারটি মামলায় তারেকের কারাদণ্ড হয়। তার মধ্যে একটি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা। বৈরী অবস্থায় তারেক তার ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরও দেশে ফেরেননি। মা খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেও দেশে আসেননি তারেক।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মাঝে-মধ্যেই বলতেন, তারেক রহমানের সাহস থাকলে দেশে এসে তার বিরুদ্ধে মামলা মোকাবেলা করুক। তাকে ফেরত আনতে চেষ্টাও চালায় আওয়ামী লীগ সরকার, কিন্তু সফল হয়নি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসন অবসানের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। প্রথমেই কারাগার থেকে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এরপর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে আদালতও তাকে অব্যাহতি দেয়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাসহ অন্য মামলার দণ্ড থেকেও অব্যাহতি পান তারেক।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তারেকের পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়ায় তিনি পাসপোর্টহীন ছিলেন বলে বিএনপি অভিযোগ করত প্রায় নিয়মিতই, যদিও বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের দেশে ফেরার জন্য পাসপোর্ট অপরিহার্য নয়।

আগস্টের পালাবদলের পর অবশ্য পাসপোর্ট সমস্যার সুরাহাও হয়েছে।

এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশ যাবেন, তখন তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। যদিও চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ১১ মাস কেটে গেছে।

সর্বশেষ ৬ অক্টোবর বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কবে দেশে ফিরছেন। উত্তরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই ইনশাআল্লাহ।”

তার কাছে আবারও জানতে চাওয়া হয়েছিল, নির্বাচনের আগে তিনি দেশে থাকবেন কি না।

তারেক রহমান উত্তরে বলেন, “রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব?

প্রায় দুই দশক ধরে দল ও নির্বাচন পরিচালনায় জড়িত থাকলেও তিনি কখনো সরাসরি ভোটের মাঠে প্রার্থী হননি। তবে এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মায়ের আসন বগুড়া-৬ (সদর) থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমদের কথা যদি সত্যিই হয় তাহলে নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের ১ বা ২ তারিখে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads