যুক্তরাজ্যে সফররত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে ভোটের আভাস মিলেছে, যে সময়টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অভিমত জানিয়ে রেখেছে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া জামায়াতে ইসলামী।
অবশ্য ঈদের একদিন আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আরও দশ মাস পর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে যেকোনো একটি দিনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
আওয়ামী লীগশূন্য মাঠে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের মতামতকে উপেক্ষা করে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিল বিএনপি।
শুক্রবার দুজনের বহুল আলোচিত বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার ফেইসবুক পেইজে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচন বিষয়ক নতুন ভাবনার কথা প্রকাশ করা হয়।
লন্ডনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের লাগাতার বিক্ষোভের মুখে অস্বস্তিতে থাকা মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য বাড়তি আক্ষেপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দেখা না পাওয়া। তবে নির্বাচনের সময় ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির টানাপড়েনের মধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে এই বৈঠক সে অস্বস্তি খানিকটা আড়াল করতে পেরেছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিএনপি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। অন্যদিকে মুহাম্মদ ইউনূস বলে আসছিলেন ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা।
যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী, বৈঠকে তারেক রহমান আগামী রোজার আগে ভোটের প্রস্তাব করেন। তখন মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোজা শুরুর ‘আগের সপ্তাহেও’ ভোট করা যেতে পারে।
তারেক মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেন, তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।
আরবি মাসের হিসেব অনুযায়ী আগামী বছর রোজা শুরুর সম্ভাব্য সময় ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ। তারেকের প্রস্তাব অনুযায়ী ভোট করতে হবে ফেব্রুয়ারি প্রথম ভাগে, যে প্রস্তাব জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগেই দেওয়া হয়েছিল।
তারেকের প্রস্তাবের বিপরীতে ইউনূস বলেন, “সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের (জুলাই হত্যাকাণ্ডের) বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বৈঠককে রাজনীতির ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন দু’দিন আগে।
যৌথ বিবৃতিতে এটি স্পষ্ট হয়েছে দুই পক্ষ তাদের অবস্থান থেকে সড়ে এসে সমঝোতার পথে হাঁটছেন।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে লন্ডনের পার্ক লেইনে ডরচেস্টার হোটেলে ওই বৈঠকের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় দেড় ঘণ্টা।
বেলা ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে তারেক রহমান বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার আগে হোটেলের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তাকে বেশ হাস্যোজ্জল মনে হয়েছে।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয় “আজ (শুক্রবার) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে তাদের বৈঠক হয়।
খলিলুর রহমান বলেন, “জনাব তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই (নির্বাচন নিয়ে) অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও জনাব তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।”
এর আগে বৈঠকে অংশ নিতে লন্ডন সময় পৌনে ২টার দিকে ডরচেষ্টার হোটেলে ঢোকার পথে তারেক রহমানকে অভ্যর্থনা জানান প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
দু’জনের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয় কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। লন্ডনের আবহাওয়া নিয়েও তারা কথা বলেন। শুরুতেই তারেক রহমান বলেন, তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘সালাম’ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টাকে। তখন ইউনূস কৃতজ্ঞতা জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি ‘ওয়াটারম্যান’ কলম ও ইংরেজিতে লেখা দুটি বই উপহার দেন, যার একটি জলবায়ু আন্দোলনের সংগঠক গ্রেটা থুনবার্গের লেখা ‘নো ওয়ান ইজ টু স্মল টু মেইক আ ডিফরেন্স’ এবং অন্যটি ‘নেচার ম্যাটারস’ নামের একটি কবিতা সংকলন।
এ সংক্রান্ত আরও খবর: