হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাধা উপেক্ষা করে রাজধানীর খিলক্ষেতে রেলওয়ের জমিতে থাকা একটি দুর্গা মন্দির উচ্ছেদ করেছে প্রতিষ্ঠানটির এস্টেট বিভাগ। এ সময় ওই মন্দিরে নিয়মিত পূজা অর্চনায় অংশ নেওয়া ভক্তদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অভিযোগ ওঠেছে, এক জামায়াত নেতার আল্টিমেটামের পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই মন্দিরটি উচ্ছেদে উদ্যোগী হয়ে ওঠে।
২৬ জুন সকালে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতে বুলডোজার দিয়ে মন্দিরটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
মন্দির কমিটি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দ্য সান ২৪– এর প্রতিনিধি জানতে পেরেছেন, মন্দির উচ্ছেদের পেছনে ধর্মীয় উসকানি ছিল। গত ২৪ জুন রাতে খিলক্ষেত বাজারের ইসলামিয়া সুইট অ্যান্ড লাইভ বেকারির কর্ণধার মুফতি মাহমুদুল হাসান এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন খিলক্ষেত থানার সভাপতি আব্দুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে ওই মন্দিরে হামলার চেষ্টাও চালানো হয়েছিল।
বাধার মুখে তারা ফিরে গেলেও পরদিন দুপুর ১২টার ওই জায়গা থেকে মন্দিরটি উচ্ছেদের আল্টিমেটাম দিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন মন্দির প্রাঙ্গণে হিন্দু মহাজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
শুধু মন্দির কেন উচ্ছেদ?
রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১৯৭০ সালের ২৪ নম্বর অধ্যাদেশের ৫(১) ও ৫(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে খিলক্ষেত বাজার পর্যন্ত এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মন্দির ঘিরে আশেপাশে বহু অবৈধ স্থাপনা, দোকান ও বাসাবাড়ি থাকলেও শুধু দুর্গা মন্দিরটিকেই উচ্ছেদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় প্রবীণ বলেন, “মুসলিম ব্যবসায়ীরা রেললাইনের পাশে ২০-৩০ বছর ধরে দোকান চালালেও সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি, শুধু আমাদের মন্দির ভাঙা হলো।”
খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরটিতে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হয়ে আসছিল।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, “তারা কোনো কথা না শুনেই ভাঙচুর শুরু করে। বলছিল, এখানে মন্দির থাকতে পারবে না। আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান ও আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদকে তার ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে মন্তব্য চাওয়া হলেও রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি কোনো জবাব দেননি।