ভূমিকম্পের সেই ক্ষত আজও তাড়া করে ফেরে

২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি হাইতির রাজধানীকে কাঁপিয়ে দেওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্প। ছবি: জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি হাইতির রাজধানীকে কাঁপিয়ে দেওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্প। ছবি: জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

স্মরণকালের শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আঘাত আসতে পারে আবারও। হলোও তাই। শনিবার মৃদু ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল। তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানি না হলেও পরপর দু’দিন ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল প্রায় কাছাকাছি, নরসিংদীতে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটের এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৩। এটির কেন্দ্র ছিল নরসিংদী থেকে ১১ কিলোমিটার পশ্চিমে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।

ঢাকার এত কাছাকাছি ভূমিকম্পে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বিশেষজ্ঞরাও দেখছেন ‘অশনি সংকেত’।

ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা মুহূর্তের মধ্যে শহর, গ্রাম, মানুষের জীবন ওলটপালট করে দিতে পারে। ইতিহাসে এমন অনেক বিধ্বংসী ভূমিকম্প আছে, যার প্রভাব শুধু মানুষের জীবনেই নয়, পৃথিবীর ভূগোল, উপকূলরেখা, নদীর গতিপথ- সবকিছু বদলে দিয়েছে।

পাঁচটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের তথ্য থাকছে এই প্রতিবেদনে, যেগুলোকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তালিকায় উপরের দিকে রাখা হয়।

চিনের শানসি ভূমিকম্প, ১৫৫৬

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ভূমিকম্প হয়েছিল ১৫৫৬ সালে চিনের শানসি অঞ্চলে। মিং রাজবংশের জিয়াজিং সম্রাটের রাজত্বকালে হওয়ায় একে ‘জিয়াজিং গ্রেট ভূমিকম্প’ বলা হয়।

আনুমানিক ৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন ওই আঘাতে। সেসময় অনেক মানুষ গুহায় থাকতেন, আর ভূমিকম্পে সেসব ধসে পড়ে।

বিপর্যয়ের পর সেই এলাকার ভূমির উচ্চতা ও জমির আকারেও পরিবর্তন দেখা যায়।

চিলি ভূমিকম্প, ১৯৬০

১৯৬০ সালের ২২ মে চিলিতে যে ভূমিকম্প হয়েছিল, রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল ৯.৫। ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী ভূকম্পন ছিল এটি। কম্পনের তীব্রতায় বহু সেতু ও রাস্তাঘাট মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। মাটিতে সৃষ্টি হয় বিশাল আকৃতির ফাটল।

ওই ভূমিকম্প চিলির ভৌগলিক রূপ সম্পূর্ণভাবে বদলে দেয়। প্রশান্ত মহাসাগরে সুনামি তৈরি হয়ে দূরবর্তী হাওয়াই, জাপান, ফিলিপাইন পর্যন্ত ক্ষতির শিকার হয় সেবার।

সুমাত্রা-আন্দামান ভূমিকম্প, ২০০৪

মাত্র কয়েক মিনিটে সাগরের নীচে এক বিশাল শক্তির বিস্ফোরণ ঘটে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সকালে। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৯.১ থেকে ৯.৩। এই কম্পন থেকে সুনামির জন্ম হয়, যা ভারত মহাসাগরের চারপাশের ১৪টি দেশ কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছিল।

প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ মারা যান সেবার। উপকূলের ভূগোল বদলে যায়, কোথাও জমি ডুবে যায়, কোথাও সাগর-নদীর বুক চিড়ে উঠে আসে নতুন জমি।

জাপানের তোহোকু ভূমিকম্প, ২০১১

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের উত্তর-পূর্বে ঘটেছিল ৯.০ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প। এর পরপরই বিশাল সুনামি আছড়ে পড়ে উপকূলে।

ওই ভূমিকম্পের প্রভাবে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জাপানের কিছু অঞ্চল কয়েক মিটার পর্যন্ত দেবে যায়, বদলে গিয়েছিল উপকূলের চিত্র।

নেপাল ভূমিকম্প, ২০১৫

২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল নেপালে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঠমান্ডু উপত্যকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঐতিহাসিক মন্দির, পুরনো স্থাপত্য, হাজারও ঘরবাড়ি ধসে পড়েছিল সেবার।

হিমালয়ের কিছু অংশে জমি সরে গিয়েছিল, কিছু এলাকায় ভূমির উচ্চতা বদলে যায়। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, ওই ভূমিকম্পে হিমালয় কয়েক সেন্টিমিটার দেবে গিয়েছে।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে ক্ষতচিহ্ন এঁকে দেওয়া এসব ভয়াবহ ভূমিকম্প মানব জাতিকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির শক্তির সামনে মানুষ কতটা অক্ষম, আর পৃথিবীর ভৌগোলিক গঠন কতটা পরিবর্তনশীল!

আরও পড়ুন