মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মঙ্গলবার বেকসুর খালাস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
কিন্ত কোন কোন যুক্তিতে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো? ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছিল, যা পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ১৫ মার্চ।
এরপর তা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ওই বছরের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম।
জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আপিল বিভাগ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রিভিউ শুনে ফের আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত দেয়।
সে অনুযায়ী আপিল শুনানি শেষে ৮ মে আপিল বিভাগ রায় ঘোষণার জন্য ২৭ মে দিন ধার্য করে দেয়।
মঙ্গলবার বিচারকরা আসন গ্রহণ করার পর সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন আজহারের আইনজীবী শিশির মনির।
তিনি বলেন, “আদালত বলেছেন, অতীতের রায়ে বাংলাদেশসহ এই ভারতীয় সাব কনটিনেন্টের ক্রিমিনাল বিচার ব্যবস্থার পদ্ধতি চেইঞ্জ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল সবচাইতে বড় ভুল।
“আরো বলেছেন, আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণ অ্যাসেসমেন্ট করা ছাড়াই জনাব এটি আজারুল ইসলাম সাহেবকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
“এবং আরেকটি ইমপর্টেন্ট কথা বলেছেন, যে পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি ট্রাবেস্ট্রি অফ ট্রুথ, অর্থাৎ বিচারের নামে অবিচার।
“আরো বলেছেন, যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
শিশির মনির বলেন, ফলশ্রুতিতে আজকে জনাব এটিএম সাহেবকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে।
“এর মাধ্যমে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সত্য বিজয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে।”
যুদ্ধাপরাধ মামলায় এর আগে জামায়তে ইসলামী ও বিএনপির ছয় জন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রসঙ্গ ধরে শিশির মনির বলেন, “পাঁচজন, অন্তত পক্ষে পাঁচজন জেলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন নির্যাতনের শামিল।
“জনাব এটিএম আজারুল ইসলাম সাহেব সৌভাগ্যবান, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তাই আমরা এটা মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিসের অবসান হয়েছে। আমরা এটাও মনে করি, এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।”
এই আইনজীবী বলেন, “এখন থেকে জামায়াতে ইসলামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম ইজ অ্যান ইনোসেন্ট ম্যান।”
শিশির মনির বলেন, তারা আদালতের কাছে একটি ‘শর্ট অর্ডার’ চেয়েছিলেন, আদালত তা মঞ্জুর করেছে।
“আদালত বলেছেন, আমরা চেষ্টা করব আজকেই যেন এবং আজকে এবং কালকের মধ্যে যেন এই শর্ট অর্ডারটা প্রসেস হয়ে জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেব মুক্তি পেতে পারেন। এই জন্য সকল আইনি ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।”
আদালতের বাইরে উপস্থিত জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মহম্মদ তাহির বলেন, “আমি কোর্টকে ধন্যবাদ জানাই এবং এই দেশবাসীর প্রতি আমি ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের আন্দোলন সংগ্রামের একটি সুস্পষ্ট সুন্দর রেজাল্ট আজকে বেরিয়ে আসছে।”
রায়ের পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফেইসবুকে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কৃতিত্ব জুলাই গনআন্দোলনের অকুতোভয় নেতৃত্বের। এই সুযোগকে রক্ষা করার দায়িত্ব এখন আমাদের সবার।”