হার্ট অ্যাটাক যেকোনো মানুষের জন্য আকস্মিক বিপদ ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় এটি নীরবে আসে, আবার কখনও তীব্র ব্যথা দিয়ে সতর্ক করে। উপসর্গ চিনে দ্রুত ব্যবস্থা নিলেই প্রাণহানির ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
হৃদযন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজন নিয়মিত ও পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ। কিন্তু যদি হার্টে রক্ত পৌঁছানোর নালী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, তখন মাংসপেশি অক্সিজেনের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ঘটে হার্ট অ্যাটাক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে থেকে অসুস্থ না হয়েও এ সমস্যায় পড়তে পারেন অনেকে। এমনকি আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মানুষও হঠাৎ করে আক্রান্ত হতে পারেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হিমেল সাহা বলেন, হার্ট অ্যাটাকের কিছু উপসর্গ রয়েছে যেগুলো দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। কিন্তু অনেক সময় সাধারণ মানুষ এগুলো শনাক্ত করতে না পারায় হাসপাতালে যেতে দেরি করেন, যা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
অস্ট্রেলিয়ার হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। কারও ক্ষেত্রে ‘ক্লাসিক লক্ষণ’ অর্থাৎ তীব্র বুক ব্যথা থাকে না।
আবার অনেক সময় মাত্র একটি উপসর্গ দেখা দেয়, আবার কারও ক্ষেত্রে একাধিক উপসর্গ একসঙ্গে প্রকাশ পায়। এমনকি কোনও সতর্কতামূলক উপসর্গ ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, যাকে বলা হয় সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক।
প্রধান উপসর্গগুলো কী কী
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যানুসারে হার্ট অ্যাটাকের কিছু সাধারণ ও গুরুতর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
১. বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা
হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হলো বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা, যাকে চিকিৎসকেরা বলেন সেন্ট্রাল চেস্ট পেইন। এ ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং মনে হয় যেন বুকের মধ্যে ছুরি চালানো হচ্ছে বা হাতি বসে আছে। এর সঙ্গে বুক ধড়ফড় বা অস্থিরতাও থাকতে পারে।
২. হাত ও ঘাড়ে ব্যথা
বুকের ব্যথা অনেক সময় বাম হাত ও ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মনে হয় যেন গলার মাংসপেশি কেউ চেপে ধরছে। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডেভিড নিউবি বলেন, যদি গলায় চেপে ধরা অনুভূত হয় বা গলতে সমস্যা হয়, তবে সেটি হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত। নারীদের ক্ষেত্রে এই উপসর্গ বেশি দেখা যায়।
৩. পেটের ব্যথা
বুকের ব্যথা অনেক সময় পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে গ্যাস্ট্রিক ভেবে ভুল করেন। তবে পার্থক্য হলো, হার্ট অ্যাটাকজনিত ব্যথা তীব্র হয় এবং সঙ্গে জ্বালাপোড়া থাকে।
৪. শ্বাসকষ্ট ও কাশি
হার্ট অ্যাটাক চিকিৎসা না হলে তা হার্ট ফেইলরের দিকে যায়। এ অবস্থায় ফুসফুসে পানি জমে এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এর সঙ্গে কাশি দেখা দিতে পারে, যা আসলে হার্ট ফেইলরের উপসর্গ।
৫. অস্বাভাবিক ঘাম
গরমে বা ব্যায়ামে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বুকে ব্যথার সঙ্গে হঠাৎ অতিরিক্ত ঘাম দেখা দিলে তা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। এই সময় রোগী অস্থির ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
৬. মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
সিডিসি’র তথ্যানুযায়ী, দুর্বল অনুভূতি, মাথা ঘোরা কিংবা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া- সবই হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্য উপসর্গ। তীব্র ব্যথা রোগীকে সংজ্ঞাহীন করে দিতে পারে।
৭. বমি বমি ভাব ও বমি
এটি এককভাবে হার্ট অ্যাটাকের প্রমাণ নয়, তবে বুক ব্যথা ও অস্বস্তির সঙ্গে থাকলে সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় হঠাৎ অকারণে ক্লান্তি ও বমিও হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ বেশি দেখা যায়।
ডা. হিমেল সাহা জানান, ডায়াবেটিস রোগীদের ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা কম থাকে। ফলে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হলেও তারা তা বুঝতে পারেন না। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভোগা রোগীরা তাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।
চিকিৎসকদের মতে, হার্ট অ্যাটাক হয় মূলত রক্ত জমাট বেঁধে ধমনীর পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার পর রক্ত পাতলা করার ও নালী প্রসারিত করার ওষুধ দিতে হবে। সময়মতো এ চিকিৎসা দিলে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব।
করণীয়
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্য কোনও উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত জরুরি বিভাগে যেতে হবে। প্রতিটি মুহূর্ত এখানে মূল্যবান।