অজান্তেই শিবিরে নাম লেখাচ্ছে শিশুরা

ছাত্রশিবিরের সমর্থক ফরমে শিশুর নাম।
ছাত্রশিবিরের সমর্থক ফরমে শিশুর নাম।

নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরে ভেড়ানোর কৌশল ছিল ‘ফুলকুঁড়ির আসর’ নামে একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে শিশুদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা। শিবিরের কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত সেই সংগঠনে মূলত শিশুদের মগজে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে ভিন্ন তথ্য ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। পরবর্তীতে সেসব শিশুরাই ছাত্রশিবিরের নানা কর্মসূচিতে যোগ দিত।

এক লেখায় নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছিলেন শেখ মেহেদী মির্জা নামে একজন। কুমিল্লায় “ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে” পড়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে এমনটি জানিয়েছিলেন তিনি।

অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের পুরোটা সময় চাপে ছিল একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির।

সরকারের পতনের পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলা চলে। বাদ যায়নি প্রাথমিকের বাচ্চারাও।

যশোরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জোর করে ছাত্রশিবিরের ফরম পূরণ করানোর পর পুরনো সেই কৌশল আবারও সামনে এল। শহরের নতুন উপশহর খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ৭নং সেক্টরে প্রগতি আদর্শ মাদ্রাসায় এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে দ্য সান ২৪ এর স্থানীয় প্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন।

অভিভাবকদের অভিযোগ, খোদ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম এক্ষেত্রে শিবিরকে সহায়তা করছেন।

কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, সদস্য সংগ্রহের কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রগতি মাদ্রাসায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছাত্রশিবির। আর সেখানে কৌশলে ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে পূরণ করা হয় ‘সমর্থক ফরম’।

অভিভাবকদের কিছু না জানিয়ে ফরমে কোমলমতি শিশুদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন তারা।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন শিশুর সঙ্গে কথা বলেছে দ্য সান ২৪ এর এই প্রতিবেদক। বয়স বিবেচনায় এবং গণমাধ্যমের নীতিমালা মেনে তাদের নাম গোপান রাখা হলো।

‘আ’ আদ্যক্ষরের তৃতীয় এক শিশু জানিয়েছে, কয়েকজন তার বাবার নাম ও ঠিকানা জানতে চাইলে সে বলে দেয়। তারা সেগুলো লিখে একটি কাগজে তার স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।

ওই শিশুর বাবা সজাগ যশোরের নির্বাহী সদস্য মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান বলেন, “সম্পূর্ণ প্রতারণা করে আমার ছেলেকে শিবির বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

“এই বয়সে ও শিবিরের রাজনীতি কী বোঝে? পড়াশোনার জন্য তাকে মাদ্রাসায় দেওয়া হয়েছে অথচ তারা এই বয়সে তাকে রাজনীতিতে ভেড়াতে চাইছে।”

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এক্ষেত্রে জড়িত রয়েছেন বলেই তার অভিযোগ।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রশিবির যশোর জেলা শাখার সভাপতি আহমদ ইব্রাহিম শামীম বলেন, “তৃতীয় শ্রেণির বাচ্চাদের ফরম পূরণ করানোর মতো সাংগঠনিক নিয়ম নেই। কেন করেছে, কারা করেছে বিষয়টা আমার এই মুহূর্তে জানা নেই। আমি এখন যশোরের বাইরে আছি; বিষয়টি জেনে আপনাদেরকে সঠিক বিষয়টি বলতে পারব।”

এ ব্যাপারে প্রগতি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলামের কাছে ফোন করা হলে তিনি সংবাদকর্মীর পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল হেলাল আল মামুন বলেন, “মাদ্রাসায় ছাত্রশিবিরের একটি কালচারাল প্রোগ্রাম ছিল । সেই প্রোগ্রামেই শিবিরের ছাত্র নেতারা শিক্ষার্থীদের ওই ফরম পূরণ করায়।”

অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের জুবায়ের হোসেন ও রিজওয়ান হাসানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads