সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করার একদিনের মাথায় চাকরি হারালেন তিন জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।
একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম।
চাকরিচ্যুত তিন সাংবাদিকের মধ্যে রয়েছেন দীপ্ত টিভির ‘সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট’ রহমান মিজান, এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বি ও চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার রফিকুল বাশার।
এদের মধ্যে দু’জনের অব্যাহতিপত্র সোশাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে, ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।

অবশ্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দাবি করেছেন, গণহত্যার পক্ষ নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করার প্রেক্ষিতে দীপ্ত টিভির সংবাদ বিভাগ তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে বলে তাদেরকে জানিয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা পুরনো। উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার দায়ে চাকরিচ্যুতির ঘটনা সেই সমালোচনাকে আরও উগ্রে দিল বলেই অনেকের অভিমত।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা ফারুকীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে দীপ্ত টিভির রহমান মিজান জুলাই মাসে ১৪০০ শহীদের সংখ্যার রেফারেন্স জানতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি মামলার রায়ের আগে কীভাবে কাউকে তিনি খুনি বলছেন সে প্রশ্নও ছুড়ে দেন।

জবাবে নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা থেকে উপদেষ্টা বনে যাওয়া ফারুকী খানিকটা ‘বিব্রত’ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উল্টো একাত্তরে হতাহতের প্রসঙ্গ টেনে এনে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকের কাছে।
চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার রফিকুল বাসার কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “জাতীয় ঐক্য কীভাবে হবে যদি শোভাযাত্রায় আপনারা হাসিনার মোটিফ রাখেন।”
এছাড়া এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বিও প্রশ্ন রাখেন ফারুকীর কাছে।
এদিকে মঙ্গলবার দীপ্ত টিভির স্ক্রলে ভেসে আসে- “অনিবার্য কারণবশত দীপ্ত টিভির সকল সংবাদ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফারুকীকে প্রশ্ন করা ওই তিন সাংবাদিককে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে রাতেই ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজ থেকে তাদের চাকরিচ্যুত করার দাবি জানানো হয়।
ওই পেইজে ঘোষণা দেওয়া হয় চাকরিচ্যুত না করা হলে ‘মার্চ টু দীপ্ত টিভি, চ্যানেল ও এটিএন বাংলা’ হবে।
তিন সাংবাদিককে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের প্রতিবাদে ফেইসবুক সয়লাব হয়ে গেছে।
রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক লিখেছেন, “বাক স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে বাঁশ স্বাধীনতা পেয়েছে বাঙালি।
“এখন এদের নামে হত্যা মামলা করাবে ফারুকী। সাংবাদিকদের নামে হত্যা মামলা করা এই বাটপার সরকারের নতুন ফ্যাশন।”

অনলাইন সংবাদপত্র সকালসন্ধ্যার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরী অব্যাহতিপত্র ও দীপ্ত টিভির ঘোষণা সম্বলিত ছবি জুড়ে দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছেন, “স্বাধীন গণমাধ্যমের এই সময়ে।”
লেখক ও সাংবাদিক মুনমুন শারমিন শামস নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “সাংবাদিকতা মানে প্রশ্ন না করা!”
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ‘রাজনৈতিক বিচারে’ বাংলাদেশে গণমাধ্যমে ছাঁটাইয়ের ঘটনা এবারই যে প্রথম এমনটি নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে সম্পাদক থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি তাদের নামে দেওয়া হয়েছে খুন, অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে মামলা।
অভিযোগ রয়েছে, ছাঁটাইকৃতদের চেয়ারে বিভিন্ন সময় বসানো হয়েছে নিজেদের লোকজন।
সংযোজন: রাত ১১টার দিকে সংবাদ প্রচার শুরু করেছে দীপ্ত টিভি।
এ সংক্রান্ত আরও খবর: