বড় আকারের বাণিজ্যিক চুক্তির লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথমবারের মতো তিন তেলসমৃদ্ধ দেশে চার দিনের সফরে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সৌদি আরব পৌঁছেছেন তিনি। পর্যায়ক্রমে কাতার ও আরব আমিরাতও তার সফর সূচিতে রয়েছে।
হোয়াইট হাউস বলছে, এটা মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের ‘ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন’ এবং প্রেসিডেন্ট নিজে এই সফরের জন্য মুখিয়ে ছিলেন।
সর্বশেষ আট বছর আগে প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। সে সময় তার ওই সফর নিয়ে বেশ হৈ চৈ হয়েছে, পত্রিকায়ও শিরোনাম হয়েছেন।
সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টরা মেক্সিকো, কানাডা বা যুক্তরাজ্যকেই তাদের প্রথম সফরের গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে ট্রাম্প ব্যতিক্রম, ভিন্ন পথে হেঁটেছেন তিনি। প্রথা ভেঙে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ট্রাম্প বর্তমান সময়ে ওই দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে স্বীকার করে নিচ্ছেন কি না- এমনটাও বলছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যে ধনকুবের ট্রাম্পের নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
মূলত এই সফরের মূল লক্ষ্য ধনী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সই করা। সেভাবেই সাজিয়েছেন তার সফরের নকশা ও পরিকল্পনা।
অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের স্কোক্রফট মিডল ইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের সম্মানিত ফেলো ড্যানিয়েল বি. শাপিরো বলেন, ‘হোয়াইট হাউস সূত্রগুলো যে ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে এটি স্পষ্ট প্রেসিডেন্ট চুক্তিতেই বেশি মনোনিবেশ করবেন।”
রিয়াদের পর দোহা ও আবুধাবিতেও ৭৮ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা ও রাজকীয় প্রথায় অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপসাগরীয় দেশগুলোয়, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তহবিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে সেটা ট্রাম্পের জন্য হবে বিশেষ অর্জন। পাশাপাশি দেশে ফিরে তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সাফল্যের কথা জোরেশোরে প্রচারও করতে পারবেন, যেমনটি তিনি করে আসছেন।
ট্রাম্পের সফরকে কেন্দ্র করে ওয়াল স্ট্রিট ও সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ নির্বাহীরা আগেই পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবে।
আজ রিয়াদে অনুষ্ঠেয় সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ সম্মেলনে ব্ল্যাকরক, প্যালান্টির, সিটিগ্রুপ, আইবিএম, কোয়ালকম, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ও ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটনের প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেবেন।
এমন এক সময়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নানা প্রতিকূলতার মুখে। ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের বলি হয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য, বিনিয়োগকারীদের আস্থা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অর্থনীতিও চাপে পড়েছে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উৎপাদন কমেছে, যা গত তিন বছরে এবারই প্রথম।
গত বছরের জানুয়ারিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা করেছিলেন, আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। তবে ট্রাম্পের প্রত্যাশা, এ অঙ্ক বাড়িয়ে এক ট্রিলিয়ন ডলার করা হবে।
মোহাম্মদ বিন সালমানের চুক্তি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “সৌদি যুবরাজ চমৎকার মানুষ। তাকে অনুরোধ করব যেন তিনি এটা (বিনিয়োগের পরিমাণ) বাড়িয়ে একটি পূর্ণ সংখ্যা, এক ট্রিলিয়ন করেন। আমার ধারণা তারা এটা করবে, কারণ আমরা তাদের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো আচরণ করেছি।”
সৌদি আরব আরও বেশি মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম কিনবে বলেও আশা করেন ট্রাম্প।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক সৌদি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, রিয়াদ যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়ন ডলার মূল্যের অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমান ও উন্নতমানের আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার জন্যেও ট্রাম্পের সঙ্গে দরকষাকষি করবে।