ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় ট্রাম্প-পুতিন, ইউরোপ কেন উদ্বিগ্ন

usa-eu

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছিলেন, দায়িত্ব নিয়ে একদিনেই বন্ধ করে দেবেন এই যুদ্ধ। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তা না পারলেও যুদ্ধ বন্ধে তার প্রচেষ্টা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

এরইমধ্যে টেলিফোনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে জানিয়েছেন, ‘হাস্যকর যুদ্ধ’ বন্ধের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে তার প্রস্তাবে পুতিন সম্মত হয়েছেন। এ বিষয়ে আরো আলোচনার জন্য এবার সরাসরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প ও পুতিন। বৈঠকের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের এক আইনপ্রণেতা ও সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, সৌদি আরবে হতে পারে এই দুই নেতার বৈঠক।

তবে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প তৎপরতা শুরু করলেও তাতে রাখেননি ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত ইউরোপের শীর্ষনেতাদের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেননি তিনি। এ বিষয়ে  ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ দূত কিথ কেলোগ জানিয়েছেন, আলোচনায় ইউরোপীয় নেতাদের পরামর্শ নেওয়া হবে, তবে তারা সরাসরি অংশ নিতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসেবে কেলোগ বলেন, পূর্ববর্তী আলোচনাগুলো ব্যর্থ হয়েছে, কারণ এতে ‘অনেক বেশি পক্ষ জড়িত ছিল।’

বিবিসির এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন তৎপরতা ঘিরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা। তাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ হলো ২০১৫ সালের মিনস্ক চুক্তি। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যেকার সেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় হলেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়েছিল। ইউরোপীয় নেতারা মনে করেন, ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো চুক্তি হলে তা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে পারে। তাই তারা এই আলোচনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে চান।

২০১৭ সালে জি২০ সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ ছাড়াও ইউরোপীয় নেতাদের আশঙ্কা– ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তাদের বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে যে আলোচনা শুরু করেছেন, তাতে ইউরোপের চাওয়া অগ্রাহ্য করা হলে নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে গোটা ইউরোপ। এমন আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণে আগামী সপ্তাহে ফ্রান্সের প্যারিসে একটি শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হতে যাচ্ছেন ইউরোপের শীর্ষ নেতারা।

এই সম্মেলনে যোগদানের কথা রয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের। এ ছাড়া এই মাসের শেষ দিকে তার যুক্তরাষ্ট্র সফরেরও কথা রয়েছে, যেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে ইউরোপের নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাবনা তুলে ধরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেছেন, “আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এটা পরিষ্কার যে, ন্যাটোতে ইউরোপকে আরও বড় ভূমিকা নিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রাশিয়া থেকে যে হুমকি আসছে, সেদিকে নজর না সরিয়ে জোটের মধ্যে বিভেদ তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে এবং রাশিয়ার হুমকির মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার জন্য ইউরোপের ন্যাটোতে আরও বেশি ভূমিকা নেওয়া উচিত।

পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্ল সিকোরস্কি জানান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউরোপীয় নেতাদের এই সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন। ট্রাম্পের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি কর্মপদ্ধতি রয়েছে, যাকে রাশিয়ানরা বলছে যুদ্ধের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ। আপনি ধাক্কা দেন এবং দেখেন কী ঘটে, তারপর আপনি আপনার অবস্থান পরিবর্তন করেন– এটি বৈধ কৌশল। তবে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানানো প্রয়োজন।”

গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কি।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেইন তাদের অজান্তে কোনো চুক্তি মেনে নেবে না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার চলতি সপ্তাতে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে ফেরার পর দেশটিতে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে জেলেনস্কির। সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে ইউরোপের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র আর আগের মতো এগিয়ে আসবে না– এমন আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে শনিবার মিউনিখ সম্মেলনে জেলেনস্কি ‘ইউরোপের সেনাবাহিনী’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইউরোপকে এখন নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।

ওই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউরোপ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ইউরোপকে অবশ্যই ‘নিজের প্রতিরক্ষার জন্য বড় পরিসরে এগিয়ে আসতে হবে’।

পরে মিউনিখ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে প্রতিরক্ষায় আরও বেশি ব্যয় করতে হবে, কারণ ইউক্রেনে শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি হলেও তা ইউরোপের ‘অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন’ তৈরি করছে।

এ ছাড়া “পুতিন চলে যাবে না”– এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ন্যাটোভুক্ত ২৩ দেশ তাদের জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করছে, যা ইতিবাচক, তবে “আমরা সবাই জানি যে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

ইউরোপ কী পারবে ট্রাম্প ঝড় সামলাতে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads