জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচার’ বললেন ট্রাম্প, গভীর হচ্ছে বিভেদ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বাঁয়ে) ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বাঁয়ে) ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে “স্বৈরাচার” বলে আক্রমণ করেছেন, যা দুই নেতার মধ্যে বিভেদকে আরও গভীর হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা থেকে কিয়েভ বাদ পড়ায় জেলেনস্কি বলেছিলেন, ট্রাম্প ‘মস্কোর নিয়ন্ত্রিত তথ্যের ভুবনে’ বাস করছেন। এর জের ধরে ফ্লোরিডায় একটি সৌদি-সমর্থিত বিনিয়োগ সম্মেলনে ট্রাম্প বাক্যবাণের শিকার হন জেলেনস্কি। সেখানে ট্রাম্প বলেন, জেলেনস্কির একমাত্র দক্ষতা হলো ‘জো বাইডেনকে নিজের ইচ্ছামতো নাচানো।’

বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্পের ‘স্বৈরাচার’ মন্তব্যে ইউরোপীয় নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বলেছেন, “জেলেনস্কির গণতান্ত্রিক বৈধতা অস্বীকার করা সম্পূর্ণ ভুল ও বিপজ্জনক।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফোনে জেলেনস্কির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা। ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র বলেন, “যুদ্ধ চলাকালে নির্বাচন স্থগিত করা যুক্তিসঙ্গত, যেমনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্য করেছিল।”

প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনে মার্শাল ল’ জারি থাকায় নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকও ট্রাম্পের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। বেয়ারবক জার্মান টিভি চ্যানেল জেডডিএফ-কে বলেন, “টুইট না করে বাস্তব দুনিয়ার দিকে তাকালে বোঝা যায়, ইউরোপে কারা স্বৈরাচারের অধীনে বাস করে—রাশিয়া ও বেলারুশের মানুষ।”

এর আগে ফ্লোরিডায় ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচার’ বলে অভিহিত করেন, যা তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টেও উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, “জেলেনস্কি নির্বাচন করতে অস্বীকার করছেন। ইউক্রেনের প্রকৃত জনমত জরিপে তার জনপ্রিয়তা কম। শহরগুলো ধ্বংস হয়ে গেলে কীভাবে জনপ্রিয় থাকা যায়?”

যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সফরকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কি। ছবি : রয়টার্স

ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, জেলেনস্কির সরকার ইউক্রেনের দুর্লভ খনিজ সম্পদ নিয়ে তার চুক্তি ভেঙেছে।

ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে তিনি জেলেনস্কির নেতৃত্বকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “ইউক্রেন ভেঙে পড়েছে, লাখো মানুষ অযথা মারা গেছে।” তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে সফলভাবে আলোচনা করছে।

এর আগে মঙ্গলবার মার-এ-লাগোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেন। বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ইউক্রেনীয়রা (আলোচনা থেকে) বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ, কিন্তু তিন বছর ধরে তাদের জন্য আলোচনার চেয়ার খালি পড়ে ছিল। এটা সহজেই সমাধান করা যেত। যুদ্ধ শুরু করা উচিত হয়নি।”

জবাবে জেলেনস্কি কিয়েভে বলেন, “অনেক মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা রাশিয়া থেকে আসছে। ট্রাম্প এই তথ্যের ভুবনে বাস করছেন।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র পুতিনকে বছরের পর বছর বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।”

জেলেনস্কি ঘোষণা দেন, তিনি বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের ইউক্রেন দূত কিথ কেলোগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আর্সেনি ইয়াতসেনিউক বিবিসিকে বলেন, “জেলেনস্কি সম্পূর্ণ বৈধ প্রেসিডেন্ট। মার্শাল ল’র অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়।”

ট্রাম্প জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দাবি করেন, তার সমর্থন মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু বিবিসি ভেরিফাইয়ের তথ্য বলছে, এ মাসের জরিপে ৫৭ শতাংশ ইউক্রেনীয় জেলেনস্কির প্রতি ভরসা রাখেন।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রুশ অ্যালুমিনিয়াম, তেল পরিবহনকারী জাহাজ ও ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা।

আরও পড়ুন