যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড ভারত সফরে এসে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের নেতৃত্বে প্রায় ২০টি দেশের গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ভারতের পর জাপান, থাইল্যান্ড ও ফ্রান্স সফরের কথা রয়েছে তার। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সফরের অংশ হিসেবেই ভারত সফর করছেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়ার পর এটি তুলসি গ্যাবার্ডের দ্বিতীয় বিদেশ সফর। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে তিনি জার্মানি যান মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে অংশ নিতে।
ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সফর নিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া তুলসি গ্যাবার্ডও তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ভারত সফর সম্পর্কে বেশি কিছু পোস্ট করেননি।
গত ১১ মার্চ একটি পোস্টে তিনি বলেন, তার সফরের লক্ষ্য হলো “শক্তিশালী সম্পর্ক, বোঝাপড়া এবং খোলামেলা যোগাযোগের লাইন তৈরি করা”, যা ট্রাম্পের “শান্তি, স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি” লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ।
দিল্লিতে পৌঁছানোর পর গ্যাবার্ড ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের নেতৃত্বে প্রায় ২০টি দেশের গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওই সভায় যোগ দেন তুলসি গ্যাবার্ড। ২০২২ সাল থেকে রাইসিনা ডায়ালগের সময় এই সভাটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল সেক্রেটারিয়েট আয়োজন করে আসছে।
সভার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত না হলেও উপস্থিত ব্যক্তিরা বলেছেন, এই সভায় গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী তহবিল ও নতুন প্রযুক্তি থেকে আসা হুমকি মোকাবিলায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ভারতও বিদেশ থেকে অপতৎপরতা চালানো কিছু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যেমন খালিস্তানপন্থী গোষ্ঠীগুলো।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, গ্যাবার্ড ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আছেন।
গ্যাবার্ড ১৮ মার্চ রাইসিনা ডায়ালগে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন এবং একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। রাইসিনা ডায়ালগ হলো ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন, যা পৃথিবীর রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই সভায় অংশগ্রহণকারী গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এককভাবে বৈঠক করবেন। এটি আগে রাইসিনা সিকিউরিটি ডায়ালগ ও রাইসিনা ইন্টেলিজেন্স ফোরাম নামে পরিচিত ছিল।
ভারতে যে সব দেশের গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এই সভায় অংশ নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
কেউ কেউ বলেছেন, ‘ফাইভ আইজ’ গ্রুপের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে সোমবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তুলসি গ্যাবার্ড।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব ভালো বন্ধু। তারা একসঙ্গে কাজ করতে চান। এটি ইসলামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে।
“যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক অনেক পুরনো। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই দুটি দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে। উভয় দেশ শান্তি, সমৃদ্ধি, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে।”
গ্যাবার্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে মোদীর সাক্ষাৎ হয়। সেখানে তাদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ, সাইবার নিরাপত্তা এবং অন্যান্য নতুন হুমকি মোকাবেলায় সহযোগিতা বাড়ানোর কথা হয়।
এবিষয়ে তিনি এনডিটিভিকে বলেন, “সেই বৈঠকটি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের জন্য একটি শক্তিশালী দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর আগে যে কাজগুলো করা হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই আমি এখানে এসেছি।”
৪৩ বছর বয়সী তুলসি গ্যাবার্ড যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম হিন্দু সদস্য। তিনি আমেরিকান সামোয়া অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নাগরিক হিসেবেও কংগ্রেস সদস্য হন। দেশটির সেনাবাহিনীতেও কাজ করেছেন তুলসি গ্যাবার্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক ডেমোক্রেট নেতা তুলসি গ্যাবার্ডকে তার জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক মনোনীত করেন। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তুলসির কিছু দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে ট্রাম্পের দলের মধ্যেও তার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক আছে।
জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক (ডিএনআই) হলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের প্রধান, যিনি জাতীয় গোয়েন্দা কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করেন। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন ডিএনআই।