‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করার আশায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরে তার সাক্ষাৎ চেয়েও সাড়া পাননি শেখ হাসিনার ভাগ্নি, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। এবার জানা গেল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মুহাম্মদ ইউনূসের দেখা করার অনুরোধ “প্রত্যাখ্যান” করেছেন।
ব্রিটেনের ইংরেজি দৈনিক ফিনান্সিয়াল টাইমস বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে।
একদিন আগে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, তারা জানতে পেরেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কানাডা সফরে রয়েছেন, তাই এখনও তারা সাক্ষাতের সূচি পাননি।
অবশ্য আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল লন্ডনে চারদিনের ‘রাষ্ট্রীয় সফরে’ মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের প্রাথমিক সূচিও ঘোষণা করা হয়েছিল, যাতে বুধ অথবা বৃহস্পতিবার ওই বৈঠকের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছিল।
এনিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার পর ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এটি স্পষ্ট যে কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কোনো পূর্বনির্ধারিত সূচি-ই ছিল না।
ফিনান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে লুট করা কোটি কোটি ডলার উদ্ধারের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন সংগ্রহের লক্ষ্যে লন্ডন সফরের সময় স্যার কিয়ার স্টারমার বাংলাদেশের নেতার দেখা করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পত্রিকাটিকে ইউনূস বলেছেন, যুক্তরাজ্যের উচিত বাংলাদেশের নতুন সরকারকে পূর্ববর্তী শাসনামলে “চুরি করা” তহবিল খুঁজে বের করতে সাহায্য করার জন্য “নৈতিকভাবে” বাধ্য বোধ করা, যার বেশিরভাগই এখন যুক্তরাজ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইউনূস বলেছেন যে স্টারমার এখনও তার সাথে দেখা করতে রাজি হননি।
“তার সাথে আমার সরাসরি কোনও কথা হয়নি,” জানিয়ে ইউনূস বলেন, স্টারমার বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবেন বলে “কোন সন্দেহ নেই”।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, বর্তমানে স্টারমারের ইউনূসের সাথে দেখা করার কোনও পরিকল্পনা নেই এবং এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তারা।
ইউনূস জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য সরকার ইতোমধ্যে অর্থ উদ্ধারে সহায়তা প্রদান করছে। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাজ্য থেকে “আরও উৎসাহী সমর্থন” পাওয়া।
শান্তিতে নোবেল জয়ী ইউনূস, গত আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত চারশ’র বেশি মামলা হয়েছে, যার বেশিরভাগে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও এনেছে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার।
এরকম অভিযোগের মধ্যেই গেল জানুয়ারিতে ব্রিটেনের তৎকালীন দুর্নীতি দমনবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেন। যদিও তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ।
যুক্তরাজ্য সফরে আসার আগে চলতি সপ্তাহে এক চিঠিতে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন টিউলিপ। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক সৃষ্ট “ভুল বোঝাবুঝি” দূর করতে চান।
অবশ্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান তার ওই আহ্বানে সাড়া দেননি।
বরং বিষয়টিকে একটি আইন সমস্যা হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “এটি একটি আইনি সমস্যা … একটি আইনি প্রক্রিয়া। এটি আমার ব্যক্তিগত বিষয় নয়।”
শুরু থেকেই ইউনূস দাবি করে আসছেন ১৬ বছরের শাসনামলে, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে কিছু আত্মীয় এবং সহযোগীদের জন্য অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগে রূপান্তরিত করেছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনায় সরব মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও গত ১০ মাসে নানা কথা ওঠেছে। কেউ কেউ তাকে ইঙ্গিত করে বলতে শুরু করেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মুহাম্মদ ইউনূস নিজের প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৬ কোটি টাকার কর পরিশোধের দায় থেকে মুক্তি দিতে প্রভাব রেখেছেন।
এছাড়া ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে ইউনূসের বিরুদ্ধে।
এ সংক্রান্ত আরও খবর: