ইউক্রেন কি ন্যাটোর সদস্যপদ পাবে, যা বললেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার ইচ্ছা অনেক দিনের। রাশিয়া বরাবরই ইউক্রেনের এই অবস্থানের বিরোধিতা করে এলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকার। নানাভাবে চাপ দিয়ে এই লক্ষ্য থেকে সরাতে না পেরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণই করে বসে রাশিয়া। এরপর থেকে গত তিন বছর ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে দেশ দুটি। এরই মধ্যে ইউক্রেনের একটি বড় অংশ গেছে রাশিয়ার দখলে। উভয়পক্ষেই হয়েছে বহু প্রাণহানি।

তবে এতকিছুর পরেও বহু আকাঙ্ক্ষিত ন্যাটোর সদস্যপদটি সম্ভবত পাওয়া হচ্ছে না ইউক্রেনের। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার এক ন্যাটো সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, এই সামরিক জোটে ইউক্রেনের যোগদানের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের একই ইঙ্গিত দেন।

ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের বক্ত্যব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মনে করি এটা সম্ভবত সত্যি।”

এর আগে পুতিনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ প্রসঙ্গে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান, রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে তার ‘দীর্ঘ ও অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ আলাপ হয়েছে। এই ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরু করার বিষয়ে পুতিন রাজি হয়েছেন।

ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প এ বিষয়ে বলেন, “আমরা আমাদের নিজ নিজ টিমকে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি এবং একে অপরকে আমাদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।”

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও লিখেছেন, “এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করার সময় এসেছে, যেখানে ব্যাপক ও সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। ঈশ্বর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মানুষকে আশীর্বাদ করুন!”

গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কি।

পরে পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়ে হোয়াইট হাউসেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ট্রাম্প। ফোনালাপে পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ না হলেও ট্রাম্প বলেন, “আমরা সৌদি আরবে দেখা করব।”

তবে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হলেও ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, তিনি মনে করেন ইউক্রেন তার ২০১৪ সালের সীমান্তে ফিরে যেতে পারবে না, তবে কিছু ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই ফোনালাপে পুতিন ট্রাম্পকে মস্কো সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনও মনে করেন, যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরু করা এখন সময়ের দাবি।

এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ‘স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য শান্তি’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কথা বলেছেন।  তিনি জানান, শুক্রবার মিউনিখে ইউক্রেন বিষয়ক একটি প্রতিরক্ষা সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। তবে ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি জেলেনস্কি।

এ ছাড়া ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের সম্ভাবনা নেই বলে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিলেও জেলেনস্কি সে বিষয়েও কোনো মন্তব্য করেননি।

আরও পড়ুন