বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে কি আওয়ামী লীগ থাকবে? সময় যত গড়াচ্ছে, এই প্রশ্নের তত বড় হয়ে উঠছে। তার মধ্যেই বাংলাদেশে জাতিসংঘের দূত গোয়েন লুইসের কথায় নতুন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ চায় যে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আগামী নির্বাচনে ‘সব’ কটি রাজনৈতিক দল অংশ নেবে।
রোববার এই কথাটি তিনি বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে; দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠকের পর।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে গোয়েন লুইসের মন্তব্যটি এসেছে এমনভাবে- “আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে। আশা করি, সব দল এই নির্বাচন অংশ নেবে।”
লুইস-ফখরুল বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু জানাতে সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট, নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আলোচনার মূল বিষয় ছিল দেশে গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা।
“আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে, সেটিকে সফলভাবে সমাপ্ত করতে হলে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।”
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস এর আগেও বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাওয়ার কথা একাধিকবার বলেছিলেন।
তবে গত জুন মাসে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে, রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্তি নয়। সব জনগণের অন্তর্ভুক্তি।
কিন্তু তার এবারের ‘সব’ দল নিয়ে নির্বাচনের বক্তব্য স্পষ্ট না হলেও সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক সফরে জেটিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের পর তা বেশ কৌতূহল তৈরি করেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
ওই সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, তাদের নিবন্ধনও স্থগিত করা হয়নি। শুধু দলের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ইউনূস শুরুতে বলেছিলেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে চান না।
এরপর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উপেক্ষাই করে যাচ্ছিলেন তিনি।
কিন্তু অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের চাপে তাকে অবস্থান পরিবর্তন করতে হয়। গত বছরের মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার।
সরকারের সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, জুলাই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
সরকারের সেই সিদ্ধান্তের আলোকে নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। ফলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা হারায়।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা এরই মধ্যে দিয়েছেন ইউনূস। ইসিতে নিবন্ধন স্থগিত থাকলে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে না।
তবে জেটিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগ দল হিসাবে বৈধ রয়েছে, তবে কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। যেকোনো সময় এ কার্যক্রম আবার চালু করা হতে পারে।
তিনি জেটিওর মেহেদি হাসানের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি।”
তাহলে তো আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না? এর উত্তরে ইউনূস বলেন, “দলটি এখনো আছে।
“তারা দল হিসেবে বৈধ, তবে এখন কার্যক্রম স্থগিত। যেকোনো সময় এর কার্যক্রম চালু করা হতে পারে।”
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি ইসির ওপর দেন তিনি। তবে এবিষয়ে ইসি নতুন করে কিছু এখনো বলেনি।
আওয়ামী লীগ তাদের সাড়ে সাত দশকের ইতিহাসে এখনই সবচেয়ে বড় সঙ্কটে রয়েছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়ে আছেন, বেশিরভাগ নেতাই হয় বিদেশে পালিয়ে, নয়তো দেশে কারাগারে।
অভ্যুত্থানের পর দলটির সব কার্যালয় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তারপর নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসায় দলটির সাংগঠনিক কোনো তৎপরতাও নেই।
তবে বিদেশে থেকে দলের নেতা-কর্মীদের চাঙা করার পাশাপাশি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে রাখতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট দলটির নেতারা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত কিছুদিন আগে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, নির্বাচন হলে তা যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, এই অবস্থান নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে চাপ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন।
এ সম্পর্কিত আরও খবর: