অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি সই

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিডেনকো নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। ছবি: বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিডেনকো নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। ছবি: বিবিসি

কয়েক মাস ধরে উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনার পর অবশেষে ইউক্রেনের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ যৌথভাবে উত্তোলনের বিষয়ে দেশটির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।

বিবিসি জানিয়েছে, এই চুক্তির অধীনে উভয় দেশ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিপর্যস্ত ইউক্রেনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠনে সম্মত হয়েছে।

ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগদানের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মুখোমুখি বৈঠক করার কয়েকদিনের মধ্যেই চুক্তিটি সই হলো।

বুধবার সন্ধ্যায় নিউজনেশন নেটওয়ার্কে ফোন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ভ্যাটিকান সিটিতে তিনি জেলেনস্কিকে চুক্তিটি করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “আমি তাকে বলছিলাম যে, যদি আমরা এমন একটি চুক্তি করতে পারি যাতে আপনি স্বাক্ষর করেন তবে এটি খুব ভালো হবে, কারণ রাশিয়া অনেক বড় এবং অনেক শক্তিশালী। রাশিয়া কেবল এগিয়ে যাচ্ছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের শুরু থেকে ইউক্রেনকে দেওয়া বহু বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা এবং ‘তাত্ত্বিকভাবে আরও অনেক বেশি’ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।

ট্রাম্প বলেন, “তাই আমি তাদের কাছে গেলাম এবং বললাম, ‘দেখুন, আমাদের বিরল খনিজ পেতে হবে।’ তাদের প্রচুর বিরল খনিজ আছে, মানে কিছু নির্দিষ্ট খনিজ, উপাদান।” তিনি আরও বলেন, “তাদের এমন জিনিস আছে যা অনেক জায়গায় নেই। এটি তাদের একটি বড় সম্পদ।”

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি ইউক্রেনের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতি উভয় পক্ষের অঙ্গীকারের প্রমাণ।

কিয়েভের জন্য এই চুক্তিটি মার্কিন সামরিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ধারণা করা হয়, ইউক্রেনে গ্রাফাইট, টাইটানিয়াম ও লিথিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বিশাল মজুদ রয়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তি ও শিল্প অবকাঠামোতে এই খনিজগুলোর চাহিদা অত্যন্ত বেশি।

এই চুক্তিটি এমন সময়ে স্বাক্ষরিত হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে একটি ‘বাণিজ্য যুদ্ধে’ লিপ্ত, যেখান থেকে বর্তমানে বিশ্বের ৯০ শতাংশ বিরল খনিজ সরবরাহ করা হয়।

বুধবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতি অনুসারে, নবগঠিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইউক্রেনকে দেওয়া আর্থিক ও বস্তুগত সহায়তাকে স্বীকৃতি দেয়।

ক্রেমলিন এখনও এই চুক্তির বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিডেনকো, যিনি বুধবার চুক্তি স্বাক্ষর করতে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন, তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, নতুন তহবিল “আমাদের দেশে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে”।

চুক্তির বিধানগুলোর তালিকা দিয়ে তিনি বলেন, এতে খনিজ, তেল ও গ্যাস খাতের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যদিও সম্পদ ইউক্রেনের মালিকানাধীন থাকবে। অংশীদারিত্ব সমান হবে, ৫০:৫০ ভিত্তিতে, এবং কিয়েভের আইন প্রণেতাদের দ্বারা এটি অনুমোদিত হতে হবে।

চুক্তির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে নতুন সহায়তা প্রদান করবে, যার মধ্যে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার কিয়েভকে ভবিষ্যতে কোনো নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে এই চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads