এবার ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিতণ্ডার একটি মুহূর্ত। ছবি: বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিতণ্ডার একটি মুহূর্ত। ছবি: বিবিসি।

সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করার পর এবার ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তার প্রসঙ্গে বুধবার জানতে চাইলে ওয়াল্টজ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা একধাপ পিছিয়ে এসেছি।” এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন “এই সম্পর্কের সমস্ত দিক” খতিয়ে দেখছে বলেও জানান ওয়াল্টজ।

পরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্যারিসে আগামী সপ্তাহে ইউরোপীয় সেনাপ্রধানদের একটি বৈঠকের ঘোষণা দেন। টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াই এগিয়ে যাওয়ার জন্য ফ্রান্সকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে চাই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে থাকবে, কিন্তু যদি তা না হয় তবে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

ইউরোপ একটি ‘নতুন যুগে’ প্রবেশ করেছে এবং এর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো উচিত– এমন মন্তব্য করে ম্যাক্রোঁ জানান, ফ্রান্স, ইউক্রেন এবং অন্যান্য দেশ মিলে একটি টেকসই শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেছে।

২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে আসছিল। গত সপ্তাহে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগযুদ্ধের পর সোমবার কিয়েভে সামরিক সহায়তা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র।

গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান স্থগিত করা আংশিক নাকি সম্পূর্ণ এবং তা কতদিন কার্যকর থাকবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সিআইএ পরিচালক জন র‌্যাটক্লিফও বুধবার ফক্স বিজনেসে একটি সাক্ষাৎকারে এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জেলেনস্কি শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিনা তা নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত প্রশ্ন তুলেছিলেন ট্রাম্প।

তবে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য প্রদান বেশিদিন স্থগিত থাকবে না বলেও ইঙ্গিত দেন র‌্যাটক্লিফ। তিনি বলেন, জেলেনস্কির শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকার ঘোষণার মাধ্যমে দ্রুত প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

“সামরিক ও গোয়েন্দা ক্ষেত্রে যে স্থগিতাদেশ, তা চলে যাবে এবং আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব,” বলেন র‌্যাটক্লিফ।

যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষ গোয়েন্দা তথ্য প্রদান বন্ধ হলে যুদ্ধক্ষেত্রে এর গভীর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, গোয়েন্দা তথ্য ইউক্রেনকে কৌশলগতভাবে মস্কোর পরবর্তী পদক্ষেপ বোঝার পাশাপাশি রুশ সেনাদের অবস্থান ও লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে সহায়তা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক উপ-সহকারী সচিব এবং সিআইএর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিক মুলরয় বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেন গোয়েন্দা তথ্য বন্ধ করার ‘তাৎক্ষণিক প্রভাব’ পড়বে এবং তা ইউক্রেনের আত্মরক্ষার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তার মতে, “যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সক্ষমতার বিকল্প আমাদের ইউরোপীয় মিত্ররা দিতে পারবে না। এটি সম্ভবত রাশিয়াকে ইউক্রেনের আরও ভূমি দখলে উৎসাহিত করবে এবং আলোচনার টেবিল থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।”

আরও পড়ুন