শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ‘অসাংবিধানিক’: শতাধিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের বিবৃতি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিবাদে বিবৃতি।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিবাদে বিবৃতি।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডকে অসাংবিধানিক, অস্বচ্ছ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত মন্তব্য করে শতাধিক নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতি দানকারীদের মধ্যে শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, নাট্যকর্মী, সাংবাদিক, কূটনীতিক ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।

রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে দেওয়া এই রায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে তারা বাংলাদেশি শিল্প-সংস্কৃতি বিশ্বে তুলে ধরে আসছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানবতা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ থেকেই তারা কাজ করছেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের এই রায় বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ওই রায় ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এই বিচার ও শাস্তি ন্যায্য নয় এবং মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়ায়। সংগঠনের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড আইসিটির স্বাধীনতার ঘাটতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সব ফৌজদারি বিচার আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। অনুপস্থিতিতে বিচার ন্যায্য বিচারের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে।

সংগঠনটি আরও বলেছে, শেখ হাসিনাকে পছন্দের আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং নিযুক্ত আইনজীবীরা কার্যকরভাবে সাক্ষীদের জেরা বা পাল্টা প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে রায় নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

সংস্থাটি বলেছে, ভুক্তভোগীদের জন্য রায়টি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তবে ন্যায়বিচার অবশ্যই ন্যায্য ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

বিবৃতিতে লা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে আইনি প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের দায়িত্ব নেওয়া আইনজীবীদের ‘মব’ দ্বারা ভয় দেখানোর অভিযোগও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ছাড়া বিচারকাজ পরিচালনা এবং ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রশ্ন তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে বলেও স্বাক্ষরকারী নাগরিকদের অভিমত।

তারা বলেছেন, প্রতিটি নাগরিকের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে আইসিটির আচরণ বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ করেছে।

স্বাক্ষরকারীরা পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন ওই বিবৃতিতে। এর মধ্যে রয়েছে, জুলাই–আগস্ট ২০২৪-এর হত্যাকাণ্ডসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত, বর্তমান রায় বাতিল ও নতুন করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে পুনঃবিচার, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত করা, অভিযুক্তের জন্য পছন্দের আইনজীবী নিয়োগসহ অবাধ আইনি অধিকার নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যৎ সব রায়কে সত্য, আইন ও প্রমাণের ভিত্তিতে দেওয়া।

বিবৃতিতে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও আবৃত্তি শিল্পী আহকাম উল্লাহ, চলচ্চিত্র বিষয়ক শিক্ষক ফরিদুর রহমান, লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, লেখক ও কূটনীতিক ড.হারুন আল রশীদ, কবি ও ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন।

নাট্য নির্মাতা ও সাংবাদিক সফিক বাবু, কবি ও সাংবাদিক এসএম আব্বাস, লেখক ও সাংবাদিক আজম খান, লেখক ও সাংবাদিক মাসুদা ভার্টি, লেখক ও সাংবাদিক সাব্বির খান, খান শওকত।

নাট্য ও চলচ্চিত্র শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন, রোকেয়া প্রাচী, অরুণা বিশ্বাস, মেহের আফরোজ শাওন, শিল্পী তারিন জাহান, সোহানা সাবা, শমি কায়সার, স্বাধীন খসরু, মনিরা রওনক বুবলী, দিপ্তানিতা রায় মার্টিন, সাইমন সাদিক, অভিনেতা জামশেদ শামীম, তমাল মাহবুব, এহসানুল আজিজ বাবু, মিষ্টি সুবাস, অধরা নিহারিকা, শিল্পী লিয়ানা জামান,সুজন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক কর্মী আল আমীন বাবু, জুটন দাস, শামীমা তুষ্টি, জ্যোতিকা জ্যোতি, রজনীগন্ধা রফিক, অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে আছেন, শাহাদাত রাসএল, সগীর মোস্তফা, এসএম কামরুজ্জামান সাগর, এফ এম শাহীন, সাজ্জাদ খান, সুবর্ণ সেলিম, সাজ্জাদ কাদির, আশরাফুল আলম (শিশির আশরাফ),শামীম রেজা জুয়েল, রাজিব হাসান, নিহাজ খান মোরশেদুর রহমান অন্তর, আলবার্ট খান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, ড.মাসুদ পথিক, খোরশেদুল আলম খোশরু, শাহ আলম কিরণ, সোহেল খান।

সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে নাম রয়েছে, অনিকেত রাজেশ, হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লব, আবদুর রায়হান,জুয়েল রাজ, সেলিনা আকতার জোছনা, সুরকার ও শিল্পী সংগীত সরকার(কলকাতা), সালাউদ্দিন বাদল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙালীর।

চিত্রশিল্পীদের মধ্যে সুনীল কুমার, চারু পিন্টু, মোশাররফ খান বাদল, মো: মনিরুজ্জামান, তূর্য কাজীর নাম রয়েছে ওই বিবৃতিতে।

এছাড়া কবি ও লেখকদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর সেলিম, দেলোয়ার হোসেন, নাসির হাসান, সোহানুর রহিম শাওন, শাহানা জেসমিন, আকন আবু বকর, মোশাররফ হোসেন, নাসরিন খান পাঠান, শাহিন আলিম জয়, আসাদুল্লাহ, পদ্মনাফ অধিকারী, কামরুল হাসান, নাসির উদ্দিন হায়দার, কামরুল ইসলাম, শানেজুল ইসলাম, শোয়েব নাঈম, কানিজ ফাতিমা চৌধুরী, নাসির আহমেদ, আহমেদ মনসুর, মিল্টন হাসনাত, তুহিন দাস, গোলাম মোরশেদ চন্দন, স্মৃতিভদ্র, কুতুব হিলালী, শারমিন সুলতানা রিনা, শরিফুল ইসলাম খান, কুলদা রায়, রাসেল আসাদ, রেদোয়ানুর রহমান জুয়েল, হুমায়ুন কবির ঢালী, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, মহাসিন খন্দকার, শেখ ফরিদ, কমল কর্মকার, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, করিম রেজা ও জুনাইদুল হক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads