ট্রাম্প-মোদী বৈঠকে কী বার্তা পেল বাংলাদেশ

হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।
হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হলেও পররাষ্ট্র নীতি তেমন বদলায় না- এমন কথা যারা বলে আসতেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ফেরার পর তাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। আর তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে হচ্ছে কানাডাকে, ইউক্রেনকে।

গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েই আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ কানাডার পণ্যেও বাড়তি শুল্ক চড়িয়ে দেন ট্রাম্প। এটাও তিনি বলেন যে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যই হয়ে যেতে পারে।

তখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে কাঁদো কাঁদো হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসতে হয়েছিল; বলতে হয়েছিল, এতদিন ধরে তারা কীভাবে প্রতিটি কাজে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকেছিলেন।

রুশবিরোধী অবস্থান থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনের জমানায় ওয়াশিংটনের অর্থ-অস্ত্র সবই পাচ্ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প এসেই গোল বাঁধিয়ে দেন।

তিনি বুধবারই বলে দেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করবেন তিনি। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আশা ছাড়তে বলেন তিনি, পাশাপাশি এটাও জানিয়ে দেন যে শান্তির জন্য ইউক্রেনকে ভূমির দাবিও ছাড়তে হতে পারে।

হতভম্ব জেলেনস্কিকে নিয়ে মিউনিখ সম্মেলনে ইউরোপের দেশগুলোর নেতারা বলেন যে ইউক্রেন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে জেলেনস্কি আর ইউরোপকে নিয়েই তা নিতে হবে। কিন্তু ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর রুশ নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ হুঙ্কারের সুরেই বলেন, ইউরোপের সময় শেষ।

জেলেনস্কির ভাগ্য যেভাবে পুতিনের পরে সঁপে দিলেন ট্রাম্প; সেভাবে বাংলাদেশের ভাগ্যও কি ভারতের হাতে তুলে দিলেন তিনি? বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পর সেই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনই কেবল ঘটেনি; ভারতকে প্রতিবেশী দেশটিতে তার ঘনিষ্ঠ মিত্রকে হারাতে হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয়ও দিতে হয়েছে নয়া দিল্লিকে।

এরপর কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যে নয়া দিল্লিকে দেখতে হচ্ছে, মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা-ইসলামাবাদ সুসম্পর্ক নিরাপত্তার দিক থেকে ভারতের জন্য যে বড় উদ্বেগ, তা বলাই বাহুল্য। শেখ হাসিনার গত দেড় দশকের শাসনে যা নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি নয়া দিল্লির শাসকদের।

এখনকার উদ্বেগ মোদী যে ট্রাম্পের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তুলেছেন, তা ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি।

তাকে উদ্ধৃত করে ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, ট্রাম্প ও মোদীর আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশও ছিল, যেখানে মোদী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বলতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন এবং বাংলাদেশে ইসলামি উগ্রবাদীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কার কথাই বলে থাকেন নয়া দিল্লির কর্মকর্তারা।

দুই মাস আগে ঢাকা সফর করে যাওয়া মিস্রি বলেন, মোদী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে তার মতামত, প্রকৃতপক্ষে তার উদ্বেগ শেয়ার করছেন এবং ভারত কীভাবে এই পরিস্থিতিকে দেখছে, তা ট্রাম্পকে জানিয়েছেন। তিনি এটাও বলেছেন, ভারত আশা করে যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন একটি দিকে এগিয়ে যাবে, যেখানে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক ও স্থিতিশীল সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারে।

হোয়াইট হাউজে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিন্তু এই উদ্বেগ শুনে ট্রাম্প কী বলেছেন? তা জানার সুযোগ হয়নি। বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক এনিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন ট্রাম্পকে। তিনি শুধু বলেছেন যে বাংলাদেশে হাসিনা সরকার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না।

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এখন ভূমিকা কী হবে- সেই প্রশ্নে তিনি মোদীকে দেখিয়ে বলেছেন, এটা নিয়ে ভারত বহু দিন ধরে, বলতে গেলে বছরের পর বছর ধরে কাজ করে আসছে।

“কাজেই বাংলাদেশের বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর (মোদী) ওপরই ছেড়ে দেব,” বলেই ট্রাম্প পাশে বসা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করেন। কিন্তু মোদী আর এনিয়ে কোনো কথা বাড়াননি।

ট্রাম্পের সরাসরি কিছু না বলার অর্থও দাঁড়ায় যে বাংলাদেশ প্রশ্নে তিনি মোদীর ওপরই নির্ভর করবেন। ট্রাম্প যে এমনটাই করবেন, তা সম্প্রতি ‘দ্য ডিপ্লোমেট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক লেখায় উল্লেখ করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নীরব থাকবেন। তার মানে হবে বাংলাদেশের বিষয়ে নাক গলাতে ভারতকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া।

সেই অবস্থায় বাংলাদেশ পাকিস্তান ও চীনের দিকে আরও ঝুঁকে পড়তে চাইতে পারে। তবে চীন ও ভারতের সম্পর্ক গলার যে ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে, তাতে বেইজিংও ভারতকে চটিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে কিছু করতে চাইবে না।

পাকিস্তানের দিকে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ঝুঁকে পড়েছে, সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করেছে, বিমান চলাচল শুরু করতে চাইছে। ইউনূস এরই মধ্যে দুই দফায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যেখানে মোদীর সঙ্গে একবারও হয়নি।

কিন্তু মোদী-ট্রাম্প বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় পাকিস্তানকে যেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে, সেটা আবার বাংলাদেশের জন্যও সতর্কবার্তা হবে।

ওই ঘোষণায় পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে বলা হয়েছে, তাদের দেশের ভেতরে সন্ত্রাসবাদীরা আস্তানা গেঁড়ে যেন অন্য দেশে আক্রমণ করতে না পারে।

দৃশ্যত ভারতের তৎপরতায়ই এই ধরনের বক্তব্য যৌথ ঘোষণায় স্থান পেয়েছে, যা দেখে ইসলামাবাদ থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরে মুখপাত্র শাফাকাত আলি খান বলেছেন, দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে তৃতীয় দেশের নাম ধরে কথা বলা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন, এটা একতরফা ও বিভ্রান্তিকর।

ডিপ্লোমেটের ওই কলামে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, ইউনূস সরকার ‘দিল্লির দাসত্ব মুক্তির’ আওয়াজ তুললেও সার্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘হঠাৎ পাকিস্তানপ্রেমী’ বাংলাদেশ পড়ে যাচ্ছে যুদ্ধংদেহি ভারতের সামনে।

বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আগে থেকে ট্রাম্পের বিজয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আসছিল। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-মোদী বৈঠকের সময়ও একদল বাংলাদেশি হোয়াইট হাউজের সামনে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নাজুক বলে তাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস চালায়।

আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এমনটাই ধারণা করছে যে যেহেতু ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটদের বন্ধু হিসাবে পরিচিত, তিনি আগের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের তহবিলে অর্থ জুগিয়েছিলেন, তাতেই বোঝা যায় রিপাবলিকান ট্রাম্প তার পক্ষে থাকবেন না।

মাস্ককে কাছে টানার চেষ্টায় ইউনূস

ট্রাম্প-মোদী বৈঠক নিয়ে বৃহস্পতিবার যখন সংবাদমাধ্যমে মাতামাতি চলছে, তখন আগের দিন বুধবার দুবাইয়ে থাকা মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিও কলে কথা বলেন ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ইলন মাস্কের সঙ্গে।

স্টারলিংক, স্পেসএক্স, এক্স, টেসলার মালিক ধনকুবের মাস্ককে ট্রাম্প গুরু দায়িত্ব দিয়ে বসিয়েছেন তার প্রশাসনে। তার পদটি হচ্ছে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ দপ্তরের প্রধান। এই দপ্তরটিই বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের মূল কারিগর।

মুহাম্মদ ইউনূস।

দৃশ্যত মাস্কের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে যেতে চাইছেন ইউনূস। আলোচনায় তিনি মাস্ককে ঢাকায় আমন্ত্রণের পাশাপাশি বাংলাদেশে স্টারলিংকের ব্যবসা দেওয়ার প্রস্তাবও দেন।

বাসস জানিয়েছে, ইউনূস এবং ইলন মাস্ক স্টারলিংকের স্যাটেলাইট যোগাযোগে বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোগী যুবক, গ্রামীণ ও পিছিয়ে থাকা নারী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের কমিউনিটির রূপান্তরমূলক প্রভাবের উপর জোর দেন। কম খরচে কীভাবে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট সংযোগ বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষমতায়ন অনুন্নত অঞ্চলে এবং এর লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে জাতীয় সীমানার বাইরে প্রবেশাধিকার দিতে পারে, সে বিষয়ে তারা আলোচনা করেন।

ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোতে স্টারলিংকের সংযোগ লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং দেশকে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল অর্থনীতিতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংহত করবে।

নিজের গড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে মাস্কের স্টারলিংককে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার আশা দেখিয়ে তিনি বলেন, “স্টারলিংক হবে গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণফোনের একটি সম্প্রসারণ, যা গ্রামের নারী ও যুবকদের বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করার পথপ্রদর্শক হতে পারে। তারা বিশ্ব উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে।”

দুবাইয়ে বসে যখন ইউনূস ভিডিও কলে কথা বলেন মাস্কের সঙ্গে তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পৌঁছে যান মাস্কের অন্দরমহলে। শুধু মাস্কই নন, তার স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে সময় কাটান মোদী, সেই ছবি আবার এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ারও করেন। মাস্কের সন্তানদের জন্য উপহারও নিয়ে যান তিনি।

মোদী এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন- “খুব ভালো আলোচনা হলো ইলন মাস্কের সঙ্গে। নানা বিষয়ে, বিশেষ করে তার যেসব বিষয়ে আগ্রহ যেমন মহাকাশ, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন নিয়ে।”

মাস্ক তার কোম্পানি স্টারলিংকের ব্যবসা ভারতে সম্প্রসারণ করতে চাইছেন অনেকদিন ধরে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, স্টারলিংক অচিরেই ভারতে তাদের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু করতে পারে।

ইলন মাস্কের পরিবারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী।

শুধু স্টারলিংকই নয়, মাস্ক স্পেসএক্সসহ তার অন্য সব কোম্পানির জন্য ভারতের বিশাল বাজারকে আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে ভাবছেন।

ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, মোদী ও মাস্ক প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের একটি রূপরেখা তৈরিতেও একমত হয়েছেন। ভারতে টেসলা গাড়ির কারখানা স্থাপনেও তাদের মধ্যে কথা হয়েছে।

সেই সঙ্গে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সঙ্গে মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের সহযোগিতা বাড়ানো নিয়েও কথা হয়েছে মাস্ক ও মোদীর।

ফলে মোদী যখন এতকিছু মাস্ককে দিতে চাইছেন, তখন শুধু স্টারলিংককে ব্যবসা দিয়ে তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়াটা ইউনূসের জন্য যে কঠিনই হবে, তা স্পষ্ট।

এ সম্পর্কিত আরও প্রতিবেদন:

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কেন সরাসরি কথা বললেন না ট্রাম্প?

বাংলাদেশের সমাধান মোদীর কাছে, বললেন ট্রাম্প

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads