সাকিবকে বাদ দেওয়ার কারণ কী? যা জানা গেল

Sakib Al Hasan

জটিল এক পরিস্থিতির সহজ সমাধান যেন সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞা। সেটাকে ঢাল বানিয়ে সব দিক সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালালেন গাজী আশরাফ হোসেন। প্রধান নির্বাচক বারবার সাকিবের বোলিং করতে না পারার প্রসঙ্গই সামনে আনলেন। তবে এরপরও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, চ‍্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ের না থাকার কারণ কি অন্য কিছু?

সে কারণেই হয়তো শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিবকে ৮ দলের আসন্ন টুর্নামেন্টের দলে রাখা যেত কি না, তা নিয়ে খুব একটা বলতে চাইলেন না আশরাফ।

সাকিব বিরল অলরাউন্ডারদের একজন যিনি দলে কেবল ব‍্যাটসম‍্যান বা বোলার হিসেবেও জায়গা পেতে পারেন। পরিসংখ‍্যান সেই কথাই বলছে, দুই ক্ষেত্রেই তিনি সেরাদের একজন, বোলিংয়ে হয়তো সেরা-ই।

ইংল‍্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) থেকে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাকিব দুইবার পরীক্ষা দিয়ে বোলিংয়ের ছাড়পত্র পাননি। তাই আপাতত তাকে খেলতে হবে কেবল ব‍্যাটসম‍্যান হিসেবে। পারফরম‍্যান্স বলছে অনায়াসেই ব‍্যাটসম‍্যান হিসেবে চ‍্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে থাকতে পারতেন তিনি।  

২০২৩ সালে সবশেষ দেশের হয়ে ওয়ানডে খেলেন তিনি। এই সংস্করণে সবশেষ ১০ ম্যাচে পাঁচটিতেই খেলেন চল্লিশ ছোঁয়া ইনিংস। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে গত বছরের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৬ ইনিংসে ৪৩.৬৬ গড় ও ৯৯.২৪ স্ট্রাইক রেটে ২৬২ রান করেন তিনি।

চ‍্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা করে রোববার প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বললেন, শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিবকে দলে থাকার পাওয়া উপযুক্ত মনে করেননি তিনি।

“বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যে সমস্যায় আছেন সাকিব, সেটা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। দুঃখজনকভাবে ফলটা নেতিবাচক হওয়ায় তিনি একজন ব‍্যাটসম‍্যান হিসেবেই শুধু খেলতে পারবেন। দল নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তাই সাকিব আল হাসানের অবস্থানটা শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিল আমাদের কাছে। এই দলে আসলে সমন্বয় সাজাতে গিয়ে তাকে এই ১৫ জনের মধ্যে আমরা জায়গা দিতে পারিনি।”

“একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে নিয়ে কোন জায়গাটার জন্য তাকে দলে রাখা গেল না, এটা নিয়ে পাবলিকলি এত খোলামেলা আলোচনা করা খুব একটা ভালো কথা নয়। এই মুহূর্তে যারা দলে আছে, তারা এগিয়ে আছে। কারণ তারা আমাদের সঙ্গে আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তারা খেলছে। তারা আস্থাশীল সেই কারণেই।”

রাজনৈতিক পরিচয়ের জন‍্য সাকিবের দলে না থাকা নিয়ে ভিন্ন একটা আলোচনাও আছে। গত অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আর দেশে ফিরতে পারেননি বাঁহাতি অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে গত সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া ৩৭ বছর বয়সী ক্রিকেটার গত অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিদায়ী টেস্ট খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তা শঙ্কায় দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে হয় তাকে।

বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার আগে থেকেই দেশের হয়ে খেলার সুযোগ মিলছে না সাকিবের। সে কারণেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাকে না নেওয়ার ক্ষেত্রে মূল কারণটা ক্রিকেটীয় নাকি রাজনৈতিক তা পরিষ্বকার হওয়া জরুরি। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই দলে পরিবর্তন আনা যাবে। এর মধ্যে সাকিব বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষায় উতরাতে পারলে দলে জায়গা পাওয়ার দাবি জোরাল করতেই পারেন।

প্রধান নির্বাচক সেদিকটায় গেলেনই না। বারবার শুধু বোলিং অ্যাকশনের কথা বললেন।

“সাকিবের বিষয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্ট (ফারুক আহমেদ) বলেছিলেন, কেউ অবসর না নিলে দল নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অ্যাভেইলঅ্যাবল। বোলিং অ্যাকশনের বিষয়টা আসায় আমরা আর দ্বিতীয় প্রসঙ্গে (রাজনৈতিক সমস্যা) যাইনি। যে কারও ব্যাপারে আমরা কয়েক জায়গা থেকে ছাড়পত্র চাই। ফিটনেস বা কারও অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা।”

“যাদের দলে নিয়েছি, নামগুলো আগেই বোর্ডে জমা দিয়েছি। আমাদের পরিকল্পনায় সাকিব না থাকার কারণেই সম্ভবত অন্য যে বিষয়টা (রাজনৈতিক সমস্যা), তা নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। যদি সে তালিকায় থাকত, তাহলে হয়তো আরও পরিষ্কারভাবে এটা আমি বলতে পারতাম। বোর্ড থেকেও হয়তো পরিষ্কার উত্তর নিতে পারতাম।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads