মুরাদনগরে হিন্দু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় যা জানা গেল

muradnagar

কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে ঘরের দরজা ভেঙে এক হিন্দু নারীকে (২৫) ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অভিযুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এই ঘটনায় গত শুক্রবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে রোববার ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে । তাঁরা হলেন মো. সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলায়।

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই নারী প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাবার বাড়ির পাশে পূজা হচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন; তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন।

ওই নারীর পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসি। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে আমরা ওই নারীকে উদ্ধার করি। এ সময় কিছু লোক তাঁকে মারধর ও ভিডিও করেন। পরে তারা বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে মারধর করেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।”

ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান। পরে রোববার তাকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় একটি ভিডিও শনিবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা করার পর পুলিশ অভিযানে নামে। ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচনের আগে-পরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়।

২০০১ সালের ৮ অক্টোবর রাতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়ার পূর্ণিমা রাণী শীলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে এবং তার মা’কে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির পাশের একটি ক্ষেতে। পনেরো থেকে বিশজন মিলে ধর্ষণ করে কিশোরী পূর্ণিমাকে। মায়ের সামনেই মেয়ের ছোট্ট শরীরটার ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল নরপিশাচের দল। তখন কান্না করতে করতে পশুগুলোর কাছে মিনতি করছিলেন মা। বলছিলেন, “বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, নইলে ও মরে যাবে।

২০০২ সালের ২১ শে আগস্ট গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ছবি রানী নামের এক হিন্দু গৃহবধূ। বাসস্ট্যান্ড থেকে ছবি রানীর কাপড় খুলে নেওয়া হয়েছিল। এরপর পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করা হয়। তারা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, ছবি রানীর গোপন অঙ্গে মরিচের গুড়া, বালি আর কাচের গুড়া ঢুকিয়ে নির্যাতন করেছিল।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব বলছে, ১৯৯৬, ২০০১ বা তার আগের প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পরের বছরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টা বেশি। শুধু ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর। ১৯৯৬ এর নির্বাচনের বছরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২১৪টি, পরের বছরে ৫৫৪টি । আবারও সেই নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়েছে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের আগে-পরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারীদের উপর যে বর্বরতা দেখা যায়- সেটি আবারও শুরু হয়ে গেছে। অন্যবার ভোটের কয়েকদিন আগে শুরু হতো। আর ২০২৫ সালে এসো- তা এখন থেকেই শুরু হয়েছে অর্থাৎ নির্বাচনের আট মাস আগেই।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ডা. এম. কে. রায় জানান, ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ছোট বড় সাড়ে তিন হাজার মামলা হয়েছে। একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের তাড়িয়ে দিয়ে সম্পদ ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। তাই যারা সাম্প্রদায়িক হামলা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকে প্ররোচিত করছে বলেও জানান তিনি।

হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ও ওপর মহলে মৌলবাদের আখড়া তৈরি হয়েছে।

তিন বলেন, গত দুই মাসের মধ্যে সারা দেশে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর, জমি দখল, হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অপহরণ, নারী নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করার হুমকির মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। অথচ প্রশাসন বরাবরের মতো নীরব ভূমিকা পালন করছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads