মিয়ানমারে বিদ্যমান সংকট ঘিরে বৈঠকে বসেছে প্রতিবেশি বাংলাদেশ, চীন, ভারত, লাওস ও থাইল্যান্ড। মিয়ানমারেরও ওই বৈঠকে থাকার কথা রয়েছে।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বৃহস্পতি দুই দিনব্যাপী বৈঠকটি শুরু হওয়ার খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অবশ্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতিনিধি সেখানে থাকছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠকের পর দ্বিতীয় বৈঠকটি হবে অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের। এতে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি বার্মিজ সার্ভিস।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।
জান্তাবাহিনী বিদ্রোহীদের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে মূলত সীমান্ত এলাকাগুলোতে। রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
বাংলাদেশের অপর পাশে প্রায় পৌনে তিনশ’ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই তাদের দখলে।
শুধুমাত্র রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান সম্প্রতি ঢাকায় এক সেমিনারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের উদ্যোগ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ইতোমধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে তারা আলোচনা শুরু করেছেন।
অবশ্য আরাকান আর্মির সাথে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ হয়েছে কি না কিংবা যোগাযোগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়।
বাংলাদেশের একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বায়েজিদ সরোয়ার মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর এই বৈঠককে বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
অবশ্য রাখাইনে ভারত ও চীনের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ ‘পরস্পর বিপরীতমুখী’ বলে মনে করেন মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক এমদাদুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “আরাকান আর্মির ওপর চীনের প্রভাব থাকায়, তাদের কর্মকাণ্ড ভারতের স্বার্থের বিপক্ষে যাচ্ছে।”
ভারতের ওপি জিন্দাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত অবশ্য মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে সব ইস্যুতে যে বৈরিতা থাকে তা নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান অভিন্নও হতে পারে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ও সীমান্তের কারণে মিয়ানমার প্রসঙ্গ বাংলাদেশের কাছ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ।
থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আলাপকালে সাংবাদিকদের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে তিনি বলেন, “ইনফরমাল আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তিনটি বিষয় আছে বর্ডার, ক্রাইম এবং মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ। এগুলো নিয়েই কথাবার্তা হবে।”
“আমি কী বলবো সেটা নির্ভর করবে ওইখানে কথাবার্তা কোনদিকে এগোয় তার ওপর,” যোগ করেন তিনি।
মিশর সফরে থাকা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়ার এক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে গত কয়েক মাসে ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সরকারের একটাই লক্ষ্য, যখন মিয়ানমার শান্ত হবে তখন যাতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যায়। এ লক্ষ্যেই কাজ করবে বাংলাদেশ।
যদিও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমদাদুল ইসলাম মনে করেন, রাখাইনের দখল আরাকান আর্মির হাতে চলে যাওয়ায়, প্রত্যাবাসন নিয়ে জটিলতা আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, “একদিকে মিয়ানমারের সরকারকে আস্থায় রাখতে হবে অন্যদিকে আরাকান আর্মিও একটা স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) হয়ে যাচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন প্রথম থেকেই খুব একটা প্রো-অ্যাক্টিভ অ্যাপ্রোচ (সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি) দেখালেও পরিস্থিতির তো কোনো পরিবর্তন হয়নি।”
সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোথাও একসঙ্গে বসছে, এটিকে একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে চান অধ্যাপক দত্ত।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় রাখাইনে বাস্তুচ্যুতদের জন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের মতো উদ্যোগে কথা বলে আসছেন মুহাম্মদ ইউনূস ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক বায়েজিদ সরোয়ার বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানকে সম্পৃক্ত করার একটি সুযোগ বাংলাদেশ পাচ্ছে।
তাছাড়া বাংলাদেশের আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় দেশগুলোর সমর্থন পেতেও এই যোগাযোগকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।