খালেদা গেলেন, তারেক রহমান ফিরবেন কবে?

tarique-rahman-bnp

বিএনপির একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাও জানেন, দলের ভবিষ্যত কাণ্ডারী তারেক রহমান। দলটির মিছিল-সমাবেশে এই স্লোগান প্রতিনিয়ত শোনা যায়- “তারেক জিয়া বীরের বেশে, ফিরবে আবার বাংলাদেশে।”

কিন্তু তারেক রহমান দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন কবে? সেই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই দলের কর্মীদের।

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে নানা মামলায় দণ্ডের রায়ের কারণে তারেকের দেশে ফেরাটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তা এই কর্মীরা মানছেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশেও কেন তারেক রহমান ফিরছেন না, এই প্রশ্ন তাদের মনে উঠেছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন, তখন তারেক রহমান দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন।

কিন্তু মঙ্গলবার খালেদা জিয়া লন্ডনে গেলেও তারেকের দেশে ফেরার কোনও ইঙ্গিত বিএনপির কেউ দিতে পারেনি। ফলে বিএনপি কর্মীদের আশা পূরণ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হয়ে দেড় বছরের বেশি সময় ছিলেন কারাগারে।

২০০৮ সালে জামিনে মুক্তির পর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। তারপর থেকে লন্ডনেই থাকছেন তিনি। এর মধ্যে চারটি মামলায় তার দণ্ডের রায় হয়, দায়ের করা হয় অসংখ্য মামলা।

২০১৮ সালে মা কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে লন্ডন থেকেই দল পরিচালনা করে আসছেন তারেক। এখনও সেভাবেই চালাচ্ছেন। এখন খালেদা জিয়াও গেলেন লন্ডনে।

চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমানও ফিরতে পারেন, এমন আলোচনা রয়েছে।

সে বিষয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ ডয়চে ভেলে বাংলাকে বলেন, “আমরা এখন ম্যাডাম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি৷ আমাদের সব মনোযোগ সেদিকে৷ তিনি সুস্থ হওয়ার পর কবে দেশে ফিরবেন, তারেক রহমান সাহেব তার সঙ্গে ফিরবেন কি না, এসব নিয়ে এখন আমরা ভাবছি না।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি লন্ডন থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের যা বলেছেন, তাতে তারেক রহমানের আপাতত ফেরার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, “তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ আমরা এখনও সৃষ্টি করতে পারিনি৷ সেজন্য অল্প কিছু সময় লাগবে।”

কোন পরিবেশ হলে তারেক রহমান ফিরবেন, তার কোনও ব্যাখ্যা তিনি দেননি।

তারেকের ফেরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দিক থেকে যে কোনও বাধা নেই, তা স্পষ্ট করেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদাতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ।

তিনি ডয়চে ভেলে বাংলাকে বলেন, “আমরা কোনো টু-মাইনাস বা থ্রি-মাইনাস থিওরিতে বিশ্বাসী নই৷ তারেক রহমান  চাইলে যে কোনো সময় বাংলাদেশে আসতে পারেন৷ তার মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় দেখা হচ্ছে৷”

মামলাই যে তারেকের ফিরতে বাধা, সেই ধারণা পাওয়া যায় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের কথায়।

তিনি ডয়চে ভেলে বাংলাকে বলেন, “তারেক রহমান সাহেবের মামলাগুলো তো দ্রুত নিস্পত্তি হচ্ছে না৷ তার মামলাগুলোর বিরুদ্ধে সরকার বার বার আপিল করে স্লো করে দিচ্ছে৷ ফলে উনি চাইলেই তো এখনি ফিরতে পারছেন না।”

তারেক রহমান ২১ আগস্টের মামলাসহ দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে। আবার ২১ আগস্টের মামলায়ও অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল করতে বলেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

তা থেকে ধারণা করা যেতে পারে, তারেক রহমান সবগুলো মামলা থেকে মুক্ত হয়েই দেশে ফিরতে চান। অর্থাৎ পুনরায় জেলে যাওয়ার কোনও ঝুঁকি তিনি নিতে চান না।

বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডয়চে ভেলে বাংলাকে বলেন, “তারেক রহমান সাহেবের মামলাগুলো আমরা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করছি। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ৷ দেশে আসার ব্যাপারে তিনি যথাসময়ে পদক্ষেপ নেবেন।”

তবে সেই সময় কবে হবে, তার কোনো ইঙ্গিত আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন