‘আমরা ষড়যন্ত্রে নেই’- চাকরিচ্যুতি ও দীপ্ত কাণ্ডে ফারুকী-মাহফুজের সাফাই

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধে ‘সরকারের হাত নেই’ এমন দাবি আগেই করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা মাহফুজ আলম। এবার যাকে নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা, সেই মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দাবি করলেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, তার কোনোরকম সংশ্লিষ্টতা নেই তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতিতে।

মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাতা থেকে উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়ে যাওয়া ফারুকী এমন দাবি করেছেন।  

ফারুকী লিখেছেন, “সবার উদ্দেশ্যে ফর দ্য রেকর্ড বলে রাখছি, তাদের চাকরির ব্যাপারে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নাই। এই বিষয়ে সংশয় থাকলে ঐ চ্যানেলগুলোর সাথে যোগাযোগ করলেই সবাই সত্য জানতে পারবেন। অনুমানে দুইয়ে দুইয়ে চার না মেলানোই ভালো।”

সোমবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ফারুকীকে প্রশ্ন করার একদিনের মাথায় চাকরি হারান তিন জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম।

চাকরিচ্যুত তিন সাংবাদিকের মধ্যে রয়েছেন দীপ্ত টিভির ‘সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট’ রহমান মিজান, এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বি ও চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার রফিকুল বাশার।

এদের মধ্যে দু’জনের অব্যাহতিপত্র সোশাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।

মাহফুজ আলম।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ফারুকীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে দীপ্ত টিভির রহমান মিজান জুলাই মাসে ১৪০০ শহীদের সংখ্যার রেফারেন্স জানতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি মামলার রায়ের আগে কীভাবে কাউকে তিনি খুনি বলছেন সে প্রশ্নও ছুড়ে দেন।

জবাবে নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা থেকে উপদেষ্টা বনে যাওয়া ফারুকী খানিকটা ‘বিব্রত’ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উল্টো একাত্তরে হতাহতের প্রসঙ্গ টেনে এনে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকের কাছে।

চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার রফিকুল বাসার কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “জাতীয় ঐক‍্য কীভাবে হবে যদি শোভাযাত্রায় আপনারা হাসিনার মোটিফ রাখেন।”

এছাড়া এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বিও প্রশ্ন রাখেন ফারুকীর কাছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা পুরনো। উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার দায়ে চাকরিচ্যুতির ঘটনা সেই সমালোচনাকে আরও উগ্রে দিল বলেই অনেকের অভিমত।

এ বিষয় নিয়ে ফারুকী আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখেছেন, “প্রেস কনফারেন্সে তাদের কথাগুলা আমাকে বিস্মিত করলেও ধৈর্য নিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপর মানুষ তাদের ক্ষোভ জানিয়েছে।”

কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ফারুকীর কাছ থেকে ‘নির্দেশপ্রাপ্ত’ হয়ে একটি গোষ্ঠী ওই তিন সাংবাদিককে উদ্দেশ করে নানা নেতিবাচক প্রচারণা চালায়।

সারাদিন সমালোচনার ঝড় বয়ে গেলেও ফারুকী দাবি করেছেন, সন্ধ্যায় তিনি ওই তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে জানতে পেরেছেন।

তিনি লিখেছেন, “প্রত‍্যেক চ‍্যানেলেরই নিজস্ব এডিটোরিয়াল পলিসি থাকে। তারা সেই পলিসির আলোকে কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের ব‍্যাপার। তারপরও অনলাইনে কাউকে কাউকে একটা কথা বলার চেষ্টা করতে দেখছি যে আমাকে প্রশ্ন করায় চাকরি গেছে তাদের। হাস্যকর কথা। বিষয়টা যে আমি না, বিষয়টা যে জুলাই এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পলিসির ব্যাপার- এটাও তারা বুঝতে পারছে না।”

এর আগে মাহফুজ আলমও দাবি করেছিলেন, “সরকার কোনোভাবেই দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ করেনি। আমরা জেনেছি, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ কিছু সিদ্ধান্তের ফল।”

দুই উপদেষ্টার সাফাইয়ের বিষয়ে মন্তব্য নিতে দ্য সান ২৪ যোগাযোগ করেছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সংবাদকর্মীর সঙ্গে। অবশ্য তাদের কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি, মন্তব্য প্রকাশেও ছিল আড়ষ্টতা।

এরমধ্যে একটি নিউজ চ্যানেলের সাবেক হেড অব নিউজের কাছে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রশ্ন করার সময় উপদেষ্টার সঙ্গে বাহাস করায় তিন সাংবাদিকের চাকরি গেছে এটাই সত্য। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ তা স্বীকারও করেছেন। নিজের ইমেজ বাঁচানোর জন্য উপদেষ্টা ফারুকী এই ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন- যা যুগের পর যুগ সাংবাদিকেরা দেখে আসছেন।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

উপদেষ্টা ফারুকীর ‘কোপে’ চাকরি খোয়ালেন তিন সাংবাদিক, বন্ধ দীপ্ত’র সংবাদ

গণমাধ্যমে ‘বলপ্রয়োগে’ চাকরিচ্যুতি, কে বসল কার চেয়ারে?

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ads