পোপ ফ্রান্সিসের শাসনকাল ক্যাথলিক চার্চকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এক যুগ ধরে তিনি যেভাবে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোকে গুরুত্ব দিয়েছেন, তা ছিল চার্চের জন্য এক নতুন পথ।
তিনি বলেছিলেন, চার্চ যেন তার আরামদায়ক পরিবেশ ছেড়ে বেরিয়ে এসে গরিবদের মধ্যে তাঁবু গাড়ে। পোপ ফ্রান্সিস এমন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেন, যা আগে ক্যাথলিক চার্চে নিষিদ্ধ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, নারীদের ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা শুরু হয়।
পোপ ফ্রান্সিস এলজিবিটিকিউ ক্যাথলিকদের “ঈশ্বরের সন্তান” হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি তালাকপ্রাপ্ত ও পুনর্বিবাহিত ব্যক্তিদের পুনরায় ধর্মীয় অনুশাসনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। তিনি অর্থনৈতিক বৈষম্যের কড়া সমালোচনা করেন এবং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তবে পুরো শাসনকালে তাকে কঠোর বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিছু সংখ্যক রক্ষণশীল ক্যাথলিক গোষ্ঠী খুব জোরালোভাবে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আবার চার্চের উচ্চপর্যায়ের অনেক বিশপ তার সংস্কারের প্রতি নিরুৎসাহী ছিলেন বা নীরব প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
এখন যখন কার্ডিনাল কলেজের ১৩৩ জন ভোটার একটি গোপন বৈঠকের মাধ্যমে নতুন পোপ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তাদের সামনে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তারা হয়তো পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কার ও দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নেবেন, নয়তো গতি কমিয়ে পুরনো পথে ফিরবেন।
পোপ নির্বাচনের অবস্থা জানতে সিএনএন কয়েকজন কার্ডিনাল ও চার্চের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছে। তাদের অনেকে এমন একজন প্রার্থী চান যিনি ঐক্য বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেবেন। তবে পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী বলেছেন, এমন একজন “নিরাপদ” প্রার্থী নির্বাচন করা হলে তা চার্চের জন্য “মরণচুম্বন” হবে।

যারা বুধবার সিস্টিন চ্যাপেলে নতুন পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন, তারা নিশ্চয়ই পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর জনগণের ভালোবাসার প্রকাশ দেখতে পেয়েছেন।
কার্ডিনাল কলেজের প্রধান কার্ডিনাল জিওভান্নি ব্যাতিস্তা রে যখন পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তার দর্শনের কথা তুলে ধরছিলেন, তখন সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে জড়ো হওয়া মানুষ বারবার করতালি দিয়ে তা সমর্থন জানিয়েছে। ২০২৪ সালে ফ্রান্সিস যে পূর্ব তিমুর সফর করেছিলেন, সেখানে তার মৃত্যুর দিনে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ একসঙ্গে প্রার্থনায় অংশ নেয়। এসব ঘটনার পর একজন অবসরপ্রাপ্ত কার্ডিনাল অন্যদের উদ্দেশে বলেন—এই বার্তাগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।
পোপ ফ্রান্সিসের এক সময়কার ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন কার্ডিনাল ওয়াল্টার ক্যাসপার। তিনি ইতালির দৈনিক পত্রিকা লা রেপুব্লিকাকে বলেন, “ঈশ্বরের জনগণ ইতোমধ্যেই ভোট দিয়ে ফেলেছেন ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। তারা চান যেন ফ্রান্সিসের পথই অব্যাহত থাকে।”
অর্থাৎ, চার্চের পরিবেশের ভাষা বুঝতে হবে।
পোপ ফ্রান্সিসের সমর্থকদের মতে, কেবল সেই ব্যক্তি পোপ হতে পারেন যিনি তার শুরু করা কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক।
তবে পোপ নির্বাচনের রাজনীতি অনেক সূক্ষ্ম। কেউ প্রকাশ্যে পোপ হওয়ার জন্য প্রচার চালালে সে নিজেই নিজেকে অযোগ্য প্রমাণ করে। কার্ডিনালদের উচিত হবে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুধাবন করে ভোট দেওয়া। তবে তার মানে এই নয় যে তারা কেবল কক্ষে বসে প্রার্থনা করেই ভোট দেবেন।
প্রাক-নির্বাচনী সময়ে প্রতিদিন সকালে কার্ডিনালরা পল ষষ্ঠ সাইনড হলে একত্রিত হন “সাধারণ অধিবেশনে” অংশ নিতে। এরপর সন্ধ্যায় তারা অনেকটা সময় একসঙ্গে পাস্তা আর ওয়াইন খেতে খেতে আলোচনা চালিয়ে যান। অনেককে দেখা যায় ভ্যাটিকানের পাশে ছোট গ্রামের মতো এলাকা বোর্গো পিওর ট্রাটোরিয়ায় খেতে বসতে।
ইতোমধ্যে মতপার্থক্যের রেখা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। কিছু কার্ডিনাল চান পরবর্তী পোপ যেন ফ্রান্সিসের পথ অনুসরণ করে এবং ক্যাথলিক চার্চের বৈচিত্র্যের ওপর গুরুত্ব দেয়। কারণ এখন চার্চের কেন্দ্র ইউরোপ বা পশ্চিমে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। আবার কিছু কার্ডিনাল চান একতা বজায় রাখা হোক। এটি আসলে একটি সংকেত বা “কোড” যা দিয়ে বোঝানো হচ্ছে, চার্চ যেন আরও পূর্বানুমানযোগ্য ও স্থির পথে চলে।
পোপ বিষয়ক জীবনীকার ও বিশ্লেষক অস্টেন ইভারেই এই দুটি অবস্থানকে এইভাবে ব্যাখ্যা করেন।
তার মতে, “প্রথম অবস্থান, অর্থাৎ বৈচিত্র্যপন্থীরা মনে করেন, ফ্রান্সিস হচ্ছেন চার্চের এক নতুন যুগের প্রথম পোপ। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন কীভাবে আজকের যুগে ধর্ম প্রচার করতে হয় এবং পারস্পরিক পার্থক্যগুলোকে কীভাবে ফলপ্রসূভাবে ধরে রাখা যায়।
“অন্যদিকে, দ্বিতীয় অবস্থান, অর্থাৎ ঐক্যপন্থীরা মনে করেন, ফ্রান্সিসের সময়টা ছিল একধরনের ব্যত্যয় বা ব্যাঘাত। এখন সময় এসেছে সেই ব্যাঘাত থেকে সরে এসে আগের মতো ঐক্যবদ্ধ পথে ফিরে যাওয়ার।”
‘ঐক্য’ সমর্থকদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্সিসের সবচেয়ে কড়া সমালোচকদের একজন, কার্ডিনাল গারহার্ড মুলার। তিনি ছিলেন ভ্যাটিকানের সাবেক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক প্রধান। পোপ ফ্রান্সিস তাকে ২০১৭ সালে অপসারণ করেছিলেন।
তিনি সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “সব স্বৈরশাসকই সমাজকে বিভক্ত করে।” এই মন্তব্যে তিনি মূলত পোপ ফ্রান্সিসের শাসনকালকে ইঙ্গিত করেন।
তবে অধিকাংশ কার্ডিনাল মুলারের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। তারা বারবার পোপ ফ্রান্সিসের সমাজের প্রান্তিক মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার সংযোগ তৈরির দক্ষতার প্রশংসা করেছেন।
তবুও অনেক কার্ডিনাল এখন ‘ঐক্য’ স্লোগানের পক্ষে যুক্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে পোপ ফ্রান্সিসের শাসনকাল নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, তিনি বহু বছরের সংস্কার প্রক্রিয়া—যেমন সিনড —শুরু করেছেন। এতে নারীদের নেতৃত্ব ও চার্চের ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
কিছু কার্ডিনাল আবার বিরক্ত হয়েছেন ফ্রান্সিসের সেইসব মন্তব্যে, যেখানে তিনি চমকপ্রদ পোশাক পরা যাজকদের সমালোচনা করেন বা সমলিঙ্গ দম্পতিদের জন্য আশীর্বাদের আহ্বান জানান। আফ্রিকার কিছু বিশপ এই আশীর্বাদ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এই ‘ঐক্য’ সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে কিছু অবসরপ্রাপ্ত কার্ডিনালও রয়েছেন। তাদের ধারণা, পরবর্তী পোপ যেন ফ্রান্সিসের স্টাইলের না হন। তিনি যেন কম অস্থির হন এবং আরও স্থিতিশীল পথে চার্চকে পরিচালিত করেন।
লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারের আর্চবিশপ কার্ডিনাল ভিনসেন্ট নিকোলস সিএনএনকে বলেন, “একজন পোপের প্রথম দায়িত্ব হলো চার্চের ঐক্য রক্ষা করা এবং সেটিকে আরও গভীর করা।”
তিনি পোপ ফ্রান্সিসের মানুষকেন্দ্রিক আচরণ ও কার্যকলাপের প্রশংসা করেন। তবে তিনি এটাও বলেন, “এখন কিছু ভারসাম্য আনার প্রয়োজন হতে পারে। যদিও সেটি তর্ক, শিক্ষা বা মতবাদ নিয়ে নয়।”
বর্তমানে ‘ঐক্য’ শিবিরের প্রধান প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন কার্ডিনাল পিয়েত্রো প্যারোলিন। তিনি ভ্যাটিকানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পোপ ফ্রান্সিসের কাজের পুরোপুরি বিরোধিতা করেন না। তবে তার নেতৃত্বের ধরন অনেকটাই ভিন্ন।
প্যারোলিন একজন শান্ত স্বভাবের, চিন্তাশীল ইতালিয়ান যাজক। তিনি ভ্যাটিকানের কূটনৈতিক কাজ পরিচালনা করেন। তার তত্ত্বাবধানে চীনের সঙ্গে বিশপ নিয়োগ বিষয়ক একটি সাময়িক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, চার্চের তৃণমূল পর্যায়ে প্যারোলিনের কাজ করার অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত। তারা আরও মনে করেন, ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পরদিন সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে ২ লক্ষ তরুণ-তরুণীর অংশগ্রহণে আয়োজিত একটি প্রার্থনাসভায় তার দেওয়া বক্তৃতা খুবই ম্লান ছিল। তিনি যখন হাতে লেখা বক্তব্য পড়ে শুনাচ্ছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি উপস্থিত মানুষদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারছেন না। অথচ পোপ ফ্রান্সিস প্রায়ই কাগজ ছাড়াই সরাসরি কথা বলতেন এবং তরুণদের সঙ্গে প্রাণবন্তভাবে মতবিনিময় করতেন।
তবে প্যারোলিন ভ্যাটিকানের কূটনৈতিক মহলে যথেষ্ট সমর্থন পাচ্ছেন। তিনি নিজেও সে গোষ্ঠীর সদস্য। সিএনএন-এর ভ্যাটিকান বিশ্লেষক এলিজাবেত্তা পিকে হলেন আর্জেন্টিনার লা নাসিওন পত্রিকার সংবাদদাতা।
তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত ইতালিয় কার্ডিনাল ও সাবেক কূটনীতিক বেনিয়ামিনো স্তেলা প্যারোলিনের এক শক্তিশালী সমর্থক হিসেবে বিবেচিত। তিনি ৮৩ বছর বয়সী এবং একসময় ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। কিন্তু গত ৩০ এপ্রিল তিনি এক মন্তব্যে উপস্থিত কার্ডিনালদের চমকে দেন।
বেনিয়ামিনো বলেন, পোপ ফ্রান্সিস সাধারণ সদস্যদের চার্চের শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে ভুল করেছেন। তার মতে, যাজক বা বিশপের অভিষেক থেকে চার্চ শাসনের ক্ষমতা আলাদা করা উচিত নয়। অথচ পোপ ফ্রান্সিস ভ্যাটিকানের বিভিন্ন অফিসে নারীদের নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং সাধারণ সদস্যদের নেতৃত্বে আনার সুযোগ তৈরি করেছিলেন।
অনেকে আবার মনে করেন, ‘ঐক্য’ শব্দটি শুনতে ভালো লাগলেও এর প্রকৃত লক্ষ্য সঠিক নয়। এদের মধ্যে আছেন কার্ডিনাল মাইকেল স্জারনি। তিনি পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন এবং ভ্যাটিকানে মানব উন্নয়ন বিষয়ক দপ্তরের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঐক্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটি কোনও প্রোগ্রাম বা নীতিমালা হতে পারে না।
তার ভাষায়, “সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদ হলো, যদি কেউ ঐক্যকে একমাত্র লক্ষ্য বানায় এবং একে ঘিরে আবেশ তৈরি করে। তাহলে আমরা শেষমেশ ‘ইউনিফর্মিটির’ মধ্যে ঢুকে পড়ি। আর এটাই হলো সেই জিনিস, যা আমরা চাই না। আমরা বহু দশক ধরে চেষ্টা করছি যাতে ইউনিফর্মিটির সীমা ছাড়িয়ে একটি সত্যিকারের ক্যাথলিক চেতনা ও বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, “দেখতে দুইটি শব্দ—ইউনিটি ও ইউনিফর্মিটি—প্রায় কাছাকাছি হলেও তাদের পার্থক্য বিশাল। আমার মতে, একটি হলো মরণচুম্বন, আর অন্যটি জীবন, এবং তা প্রাণবন্ত জীবন।”
জনগণের ইচ্ছা
পোপের মৃত্যু পরবর্তী আনুষ্ঠানিক শোকাবহ নয় দিনের প্রতি রাতে একজন কার্ডিনাল একটি প্রার্থনাসভা পরিচালনা করেন। এই অনুষ্ঠানে তারা পোপ ফ্রান্সিসের সময়কার কার্যক্রম ও নেতৃত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সুযোগ পান। এই সময়ে কার্ডিনালদের জন্য ফ্রান্সিসের সমালোচনা প্রকাশ্যে করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ অনেকেই এই প্রার্থনাসভায় প্রশ্ন রাখেন—কীভাবে ফ্রান্সিসের শুরু করা কাজগুলোকে এগিয়ে নেওয়া যায়?
এই সপ্তাহে এক প্রার্থনাসভায় রোমের ভাইস-কার্ডিনাল বলদাসারে রেইনা বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস চার্চজীবনের যেসব সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, তা শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের সীমার মধ্যে নয়, আরও বিস্তৃত। মানুষ তাকে একজন সার্বজনীন যাজক হিসেবে দেখেছে। এই মানুষগুলোর হৃদয়ে এক গভীর চিন্তা রয়েছে। আমি তাদের মধ্যে একটি প্রশ্ন স্পষ্ট দেখতে পাই—এই যে সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো শুরু হলো, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে?”
ফ্রান্সিসের শুরু করা এই সংস্কার চলমান রাখার প্রয়োজনীয়তা এমন প্রার্থীদের পক্ষে যেতে পারে, যারা এই সংস্কারের ধারায় বিশ্বাসী। যেমন—কার্ডিনাল মারিও গ্রেক (সিনোড দপ্তরের প্রধান)। এই দপ্তর চার্চের বৈচিত্র্য তুলে ধরেছে।
সংস্কারপন্থী জার্মান কার্ডিনাল রেইনহার্ড মার্কসও এমন একজন পোপের পক্ষে মত দিয়েছেন, যিনি ফ্রান্সিসের পথ অনুসরণ করবেন। সিনোড প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণকারী লুক্সেমবার্গের কার্ডিনাল জঁ-ক্লোদ হোলারিশও এই মত পোষণ করেন।
‘বৈচিত্র্যপন্থী’ একজন প্রার্থী এশিয়া থেকে আসতে পারেন অথবা চার্চের মাঠপর্যায়ের (ফ্রন্টলাইন) কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে ফিলিপাইনের কার্ডিনাল লুইস আন্তোনিও তাগলের নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে তিনিই একমাত্র সম্ভাব্য ব্যক্তি নন।

ফলাফল অনুমান করা কঠিন
যেসব কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্বাচন করতে যাচ্ছেন, তারা পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্ত থেকে আসা এক বৈচিত্র্যময় দল। ফ্রান্সিস তার সময়কালে এমন সব দেশে কার্ডিনাল নিয়োগ দিয়েছেন, যেসব দেশে আগে কখনো কোনও কার্ডিনাল ছিলেন না। এর ফলে কার্ডিনালদের একটি নতুন ধরনের সমন্বয় গড়ে উঠেছে।
তবে এই বৈচিত্র্যের ফলে অনেকেই একে অপরকে ভালোভাবে চেনেন না। পল ষষ্ঠ সিনোড হলে চলমান আলোচনায় অংশ নেওয়ার সময় তারা নামের ব্যাজ পরে থাকেন। এছাড়া সংবাদমাধ্যমের প্রচণ্ড আগ্রহও অনেক কার্ডিনালকে বিস্মিত করেছে। ভ্যাটিকানে প্রবেশ কিংবা বের হওয়ার সময় ক্যামেরা ও সাংবাদিকদের ভিড় তাদের অনেকের কাছে অস্বস্তিকর।
এমন একটি বৈচিত্র্যময় দলের ভোটের অভিমুখ আগেভাগে অনুমান করা সত্যিই কঠিন। তবে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপের বাইরের “পার্শ্ববর্তী অঞ্চল” থেকে আগত অনেক কার্ডিনাল ফ্রান্সিসের চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে একমত এবং তারা বিশেষভাবে নজর রাখছেন—নতুন পোপ বৈশ্বিক সংকটগুলোর প্রতি কীভাবে সাড়া দেবেন।
মিয়ানমারের প্রথম কার্ডিনাল চার্লস বো ২০১৫ সালে ফ্রান্সিসের মাধ্যমে নিযুক্ত হন। তিনি সংস্কারের ধারাবাহিকতা দেখতে চেয়ে বলেন, পরবর্তী পোপের উচিত হবে “নিরবচ্ছিন্নভাবে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়া” এবং এমন এক নৈতিক কণ্ঠ হয়ে ওঠা, যা “মানবতাকে ধ্বংসের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনবে।”
তিনি আরও বলেন, “মানবজাতিকে রক্ষা করতে সব ধর্মের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। আজকের বিশ্বে নতুন করে আশার নিশ্বাস দরকার—একটি সিনোডাল যাত্রা, যা জীবনকে বেছে নেয় মৃত্যুর বদলে, আশা বেছে নেয় হতাশার বদলে। সেই আশার নিশ্বাস হবেন পরবর্তী পোপ!”
পরবর্তী সপ্তাহে যারা সিস্টিন চ্যাপেলে প্রবেশ করবেন, তারা শুধু একজন নতুন পোপকে ভোট দিচ্ছেন না, তারা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা দীর্ঘ বছর ধরে ক্যাথলিক চার্চের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করবে।