‘বাহ্যিক এবং প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপে’ কাজাখস্তানে বিমান ভেঙে পড়েছিল বলে দাবি করেছে আজারবাইজান এয়ারলাইন্স। সংস্থাটি সরাসরি কারও নাম উল্লেখ করেনি।
অবশ্য তারা জানিয়ে দিয়েছে, অভ্যন্তরীণ কোনও কারণে বিমান ভেঙে পড়েনি। বিমান সংস্থার বক্তব্য এটুকু স্পষ্ট, যান্ত্রিক কোনও গোলযোগ বা চালকের কোনও ভুলে এই দুর্ঘটনা ঘটেনি।
দুর্ঘটনার পর থেকে একাধিক তত্ত্ব নিয়ে জল্পনা চলছে। কাজাখস্তানের দুর্ঘটনাটি সম্পর্কে প্রধান যে দু’টি তত্ত্ব উঠে এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম পাখির ঝাঁকের সঙ্গে বিমানের ধাক্কা। এ ছাড়া, দ্বিতীয় তত্ত্বে বলা হচ্ছে, ভুলবশত ইউক্রেনের বিমান ভেবে রাশিয়া ওই যাত্রিবাহী বিমানটিকে গুলি করে নামিয়েছে। আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বক্তব্যে এই দুই তত্ত্বই জিইয়ে রাখলো।
আজারবাইজান এয়ারলাইন্স সংস্থাটির দাবিতে সায় দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি।
তিনি বলেছেন, আজারবাইজান এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য সম্ভবত রাশিয়াই দায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ‘প্রাথমিক ইঙ্গিত’ দেখতে পেয়েছে।
গত বুধবার কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে আজারবাইজান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ (ফ্লাইট জে২-৮২৪৩) বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৮ জন নিহত হন। বেঁচে যান ২৯ জন। উড়োজাহাজটিতে যাত্রী-ক্রু মিলে ৬৭ জন আরোহী ছিলেন। এর আগে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়ার গ্রোজনির উদ্দেশে রওনা করেছিল উড়োজাহাজটি। পথে কিছু একটার আঘাতে জরুরি অবতরণ করতে চাইলে সেটিকে কাস্পিয়ান সাগরের ওপর দিয়ে কাজাখস্তানের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
কাসপিয়ান সাগরের পূর্ব তীরে কাজাখস্তানের আকতু শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি ফাঁকা জায়গায় বিমানটি ভেঙে পড়েছিল। তাতে বিমানকর্মী-সহ মোট ৬৭ জন ছিলেন। গ্রজনিতে ঘন কুয়াশার কারণে ওই বিমানের গতিপথ পরিবর্তিত হয়। কাজাখস্তানে জরুরি অবতরণ করতেও চেয়েছিলেন পাইলট।
বিমানটি যেখানে ভেঙে পড়েছে, সেখানকার কিছু ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বিমানের গায়ে অনেক ছিদ্র তৈরি হয়েছে। তা থেকেই অনেকের ধারণা, গুলি করে বিমানটিকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, যে এলাকার বিমান ভেঙে পড়েছে, সেখানে কিছু দিন আগেও ইউক্রেনের ড্রোন হামলা হয়েছিল। রুশ বাহিনী পাল্টা গুলি বা ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করে। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটেছে বলে অনেকের দাবি।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স অন্তত চারটি সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, রুশ বাহিনীই ভুল করে আজারবাইজানের বিমানে হামলা চালিয়েছে।
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে মস্কোও মুখ খুলেছে। রাশিয়া সরকারের মুখপাত্র ঘটনার পরের দিনই জানিয়েছেন, এখনও বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে। তাই আগে থেকে কিছু ভেবে নেওয়া এবং তা নিয়ে চর্চা চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তবে বিতর্ক তাতে থামেনি।
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের জন্য রাশিয়াকে ‘দায়ী করে’ বক্তব্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।
বার্তা সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, আজারবাইজান এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য সম্ভবত রাশিয়াই দায়ী বলে এবার মন্তব্য করেছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ‘প্রাথমিক ইঙ্গিত’ দেখতে পেয়েছে।
এ ‘প্রাথমিক ইঙ্গিত’ নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য না দিয়ে জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে তদন্তে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির কয়েকটি সংবাদমাধ্যম উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দায় থাকার কথা বলেছিল।
এদিকে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির ২৯ জন আরোহী বেঁচে গেছেন। এ জন্য সবাই পাইলটের দক্ষতার প্রশংসা করছেন। আহত ব্যক্তিদের কাজাখস্তানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ সংক্রান্ত মূল প্রতিবেদন:
কাজাখস্তানে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত অর্ধেকের বেশি আরোহী