হঠাৎ কেন যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখার কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টা?

Chief Advisor

প্রতিবেশি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধার দামামা বাজছে, আরেক প্রতিবেশি মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে আরকান আর্মির। এমন এক পরিস্থিতিতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি রাখার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “কাশ্মীরে বন্দুক হামলা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি রাখা দরকার।”

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। তো সেখানে প্রস্তুতি না নিয়ে থাকা এটা অসম্ভব হয়ে পড়ে।”

কোন রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত হুমকি আসছে কিংবা বাংলাদেশে কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তা খোলাসা করেননি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

বুধবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বার্ষিক মহড়া ‘আকাশ বিজয়-২০২৫’–এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যখন কথা বলছি তখন পাশে ভারত–পাকিস্তানে যুদ্ধ যুদ্ধাবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বাস করছি। এ পরিস্থিতির মধ্যো প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতি। তবে আধা–আধা প্রস্তুতি নিলে হবে না। পুরো প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতির সর্বোচ্চটুকু নিতে হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, “বিগত সরকারের কারণে লুট হয়ে গেছে অথনীতি। এ পরিস্থিতে সামগ্রিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। এতে আমাদের সাহস বাড়ে। এতে ছেলে মেয়েরাও সাহস পাবে।”

তবে প্রধান উপদেষ্টা এও বলেন, “বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে বিমান বাহিনী। দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আত্মনিভরতার প্রমাণ দিয়েছে বিমান বাহিনী। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য সরকার সহযোগিতা করছে বিমান বাহিনীকে।”

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার কড়া জবাব দেওয়ার শুধু হুঁশিয়ারি দিয়ে থেমে নেই মোদী সরকার। ভিতরে ভিতরে সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে নয়াদিল্লি।

বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, এখন পর্যন্ত শক্ত প্রমাণের অভাব দুটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়: হয় ভারত আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় নিচ্ছে, নয়তো বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তারা মনে করছে— আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়েই পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

অবশ্য ভারত ও পাকিস্তান — উভয়েই পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়ায় সামরিক সংঘাত দ্রুত বড় ধরনের বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। তবে বর্তমানে ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপের “তোয়াক্কা অনেক কম”।

এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। একের পর এক শহর দখল নিচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। আরাকান আর্মি হল রাখাইন সম্প্রদায়ের সশস্ত্র বাহিনী। ২০০৯ সালে ছাত্রনেতা ত্বোয়ান মারত নাইং এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী তৈরি করেন এবং নেতৃত্ব দেন।

গৃহযুদ্ধে পর্যুদস্ত রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ পাঠাতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক করিডোরে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সিদ্ধান্তটি ঘিরে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভাষ্যে মিলছে উত্তাপের আঁচ, আর বিশ্লেষকদের বয়ানে উদ্বেগ-বিতর্ক।

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বৈধতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন শর্ত সাপেক্ষে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক করিডোর চালুর বিষয়ে সরকারের নীতিগত সম্মতির কথা প্রকাশ্যে আনেন।

এ অবস্থায় এই করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

জার্মানির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলের খবরে তিনটি শর্তে করিডোর চালুর ব্যাপারে সম্মতি দেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়। প্রথমত, করিডর চালুর এলাকায় যুদ্ধাবস্থা থাকবে না, দ্বিতীয়ত, নিরপেক্ষভাবে মানবিক সহায়তা প্রদান করতে হবে, এবং শর্তহীন ত্রাণ বিতরণ।

এই শর্তগুলো মেনে চলার নিশ্চয়তা না পেলে করিডর চালু হবে না বলে বাংলাদেশের পক্ষে জানানো হয়েছে বলেও ডয়েচে ভেলের খবরে তুলে ধরা হয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান কালবেলাকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “মানবিক করিডোর নিয়ে কথা বলা পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এতে সন্দেহ হয়! সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা আছেন। এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টার কথা বলা উচিত।”

করিডোর দেওয়া নিয়ে সতর্কতা অবলম্বনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরও বলেন, “করিডোর কেমন হবে, কী যাবে, শর্ত কী হবে, তা অবশ্যই জানাতে হবে। এগুলো না জানালে সন্দেহ তৈরি হবে।”

এদিকে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনে আওয়ামী লীগশূন্য রাজনীতির মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো বিএনপি প্রশ্ন তুলেছে রাষ্ট্রের এরকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে কি না।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের যে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে তাতে দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির’ মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেছেন, “আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আর যুদ্ধ দেখতে চাই না।”

তিনি বলেন, “আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন হিউম্যানিটিরিয়ান প্যাসেজ নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ ছিল।”

অন্যদিকে, গবেষক আলতাফ পারভেজও জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও দেশের সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ বা প্রশাসনের কেউ জানেন না।”

করিডোরের সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে অন্তর্ভুক্ত না থাকলে বাংলাদেশের জন্য তা লাভজনক হবে না বলেও তার অভিমত।

আরও পড়ুন